মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিক এবং গার্মেন্টস মালিকদের সহনশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গার্মেন্টস মালিকদের প্রতি আহ্বান থাকবে আপনারা ফ্যাক্টরি খুলে দেবেন, আর শ্রমিক ভাইদের বলব কাজে যোগদান করতে। উভয় পক্ষের কাছে আমি আবেদন করব সহনশীল ভূমিকা রাখার জন্য।

মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ বিষয়ক জরুরি সভায় তিনি এ কথা বলেন। 

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সবাইকে সহনশীল হতে হবে। কারণ এই আন্দোলনে ভুল করুক, ক্রটি করুক, যেটিই করুক পেটের দায়েই তো মানুষ অনেক কিছু করে। তাদের ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে হবে, যেন তারা কাজে সঠিকভাবে যোগ দিতে পারে। শ্রমিক ভাই-বোনদের বলব... শিল্পই আপনার জীবন, কিন্তু এই শিল্প বন্ধ হয়ে গেলে আগে আপনি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, মালিক কিন্তু পরে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সুতরাং সেদিকে লক্ষ্য রেখে শান্তিপূর্ণভাবে যার যার কাজে গিয়ে ফ্যাক্টরিকে কর্মচঞ্চল করে তুলবেন।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মালিক, শ্রমিক ও নিরপেক্ষ প্রতিনিধিদের নিয়ে দ্রুত নতুন মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে মজুরি বৃদ্ধির জন্য শ্রমজীবী মানুষ আন্দোলন করে আসছে। মালিকপক্ষ শ্রমিকপক্ষকে নিয়ে মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে। মজুরিতে যদি কোনো তারতম্য হয়ে যায়, তখন আমরা সবসময় শেষ ভরসা প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হই। তার মৌখিক নির্দেশে আজ পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ঘোষণা করছি। এখানে শ্রমজীবী মানুষ ও রাষ্ট্রের স্বার্থ আছে। শিল্প বাঁচলে শ্রমিক বাঁচবে। শ্রমিকের সঙ্গে শিল্পও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। উভয় দিক লক্ষ্য রেখেই মজুরি ঘোষণা করা হচ্ছে।’

মজুরি ৫৬ শতাংশের ওপরে বৃদ্ধি করা হয়েছে জানিয়ে মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, ‘যে মজুরি আছে তার ওপর মূল মজুরি ৫৬.২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। মজুরি বাড়িয়ে আট হাজার থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা করা হয়েছে। ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট বহাল আছে। শ্রমিকদের রেশনের দাবি আছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, একটি পরিবারের জন্য একটি ফ্যামিলি কার্ড নির্ধারিত থাকবে। পরবর্তী সময়ে এই কার্ডের মাধ্যমে রেশনিং ব্যবস্থা চালুর কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।’

শ্রমিকদের উদ্দেশে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থনীতির চাকা হলো আপনাদের কাছে। সেই চাকা যেন বন্ধ না হয়। আপনারা কর্মে যোগ দিয়ে শিল্প শান্তি আনবেন, দেশের উন্নতিতে আপনাদের অবদান, বড় ভাগীদার আপনারা... এটা মাথায় রেখে কোনো প্রকার উসকানিমূলক কথায় না গিয়ে আপনারা বিবাদে জড়াবেন না, এটা আমাদের আবেদন। 

বোর্ডে মালিকপক্ষের প্রতিনিধি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, মালিকপক্ষ সবসময় সহনশীল। মালিকপক্ষের সামনে দিয়ে যখন শ্রমিকরা ভাঙচুর করে, আমরা কিন্তু কখনো আমাদের শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাই না। শ্রমিকরা কাজ করেনি তারপরেও ফ্যাক্টরি বন্ধ রেখেছি, আমরা যথেষ্ট সহনশীল। নতুন মজুরি ডিসেম্বর মাস থেকে কার্যকর হবে। তবে জানুয়ারি প্রথম সপ্তাহে যে বেতন পাবে সে সময় শ্রমিকরা নতুন কাঠামোতে বেতন পাবে। ডিসেম্বরের বেতন নতুন বেতনের আলোকে হবে। গেজেট এখনই করতে দেবে, কোনো সংশোধন থাকলে ১৪ দিনের মধ্যে করবে। এরপরে আরেকটি মিটিং হবে, সেই মিটিংয়ে সবকিছু ফাইনাল করা হবে।

এমএম/কেএ