আগামী ডিসেম্বর থেকেই পোশাক শ্রমিকদের নতুন মজুরি কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন মালিকপক্ষের প্রতিনিধি সিদ্দিকুর রহমান।

মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মজুরি নির্ধারণ সংক্রান্ত এক আলোচনা সভা শেষে তিনি এ তথ্য জানান।

সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণীর ষষ্ঠ সভা শেষে সাড়ে ১২ হাজার টাকা করে শ্রমিকদের নতুন মজুরি নির্ধারণের ঘোষণা দেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। 

এ ব্যাপারে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে যে বেতন পাবেন শ্রমিকরা, সেটির সাথে এটা কার্যকর হবে। অর্থাৎ ডিসেম্বর থেকে নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন হবে। 

এর আগে, দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মজুরি বোর্ডের সভাকক্ষে এ সংক্রান্ত আলোচনা শুরু হয়। এতে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিরাজুল ইসলাম রনি। অন্যদিকে, মালিকদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি ছিলেন সিদ্দিকুর রহমান।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা আফরোজ, নিরপেক্ষ সদস্য অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন এবং শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সদস্য ও জাতীয় শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুলতান আহম্মদ।

এর আগে, পঞ্চম সভায় মজুরি বোর্ডে শ্রমিক প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম রনি শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ২০ হাজার ৩৯৪ টাকা করার প্রস্তাব করেন। অপরদিকে মজুরি বোর্ডে পোশাক কারখানার মালিকদের প্রতিনিধি সিদ্দিকুর রহমান ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেন। উভয়পক্ষ প্রস্তাবনায় তাদের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। পরে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এদিকে, শ্রমিক সংগঠনের ব্যানারে মজুরি বৃদ্ধি গার্মেন্টস আন্দোলনের নেতারা বলছেন, পোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা করতে হবে। শ্রমিকদের গ্রেপ্তার-হত্যা-মামলা-ছাঁটাই-নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।

শ্রমিকদের বেতন ২৫ হাজার করার দাবিতে আন্দোলন করছে মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলন, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, গার্মেন্টস শ্রমিক ও শিল্পরক্ষা জাতীয় মঞ্চ, গার্মেন্টস ওয়াকার্স অ্যালায়েন্স, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন৷

তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য বাস্তবসম্মত নিম্নতম মজুরি কাঠামো প্রস্তাবনার জন্য শ্রমিকদের সুনির্দিষ্ট দাবিগুলো হচ্ছে:

 ১. গার্মেন্টস শ্রমিকদের মাসিক মূল মজুরি সর্বমোট মাসিক মজুরির ন্যূনতম ৬১ শতাংশ করা।

২. গার্মেন্টস শ্রমিকদের পদ ও শ্রেণিবিন্যাসে গ্রেডিং সংক্রান্ত জটিলতা দূর করতে আগের সাতটি গ্রেডের পরিবর্তে পাঁচটি গ্রেডে ভাগ করা।

৩. মূল মজুরির ওপর ১০ শতাংশ হারে বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট দিতে হবে।

৪. পরপর দুটি গ্রেডের মধ্যে নূন্যতম মজুরির পার্থক্য ১০ শতাংশ করতে হবে।

৫. নতুন শ্রমিকদের জন্য তিন মাস শিক্ষানবিশকাল হিসেবে বিবেচিত হবে।

 ৬. সোয়েটার কারখানা বা পিস রেটে কর্মরত শ্রমিককে প্রোডাকশন না থাকলে বিগত তিন মাসের মজুরির গড়/তিন নম্বর গ্রেডের বেসিক মজুরি পরিশোধ, কাজের আগে রেটের ফয়সালা করা।

৭. যেকোনো সম্প্রদায়ের শ্রমিক ও কর্মচারীরা স্ব স্ব সম্প্রদায়ের প্রধান দুটি উৎসবে প্রতিটিতে ছয় মাসের অধিক চাকরির ক্ষেত্রে এক মাসের মূল মজুরি হারে ‍দুইটি উৎসব ভাতা ও ছয় মাসের অনধিক চাকরির ক্ষেত্রে প্রতিটিতে ১৫ দিনের মজুরি হারে দুইটি উৎসব ভাতা প্রাপ্ত হবেন। শ্রমিকের উৎসব ভাতা এক মাসের মূল মজুরির কম হবে না।

৮. স্বীয় পদে/গ্রেডে চাকরির সর্বোচ্চ দুই বছরের মধ্যে উচ্চতর গ্রেডে পদোন্নতি নিশ্চিত করতে হবে।

৯. পোশাক কারখানায় গ্র্যাচুইটি সিস্টেম প্রচলন করতে হবে। তবে অন্তর্বর্তীকাল হিসেবে ১০ বছরের অধিক সময় কর্মরত শ্রমিকদের জন্য সমান হারে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। চাকরি থেকে অবসরের পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য প্রাপ্ত গ্র্যাচুইটি দিতে হবে।

১০. মাতৃত্বকালীন ছুটি সবেতনে ছয় মাস দিতে হবে।

১১. শ্রমিকদের পরিবারের সন্তানদের জন্য শিক্ষা ভাতা দিতে হবে।

১২. নতুন মজুরি নির্ধারণের পর যাতে স্থানীয় পর্যায়ে বাড়ি ভাড়া না বাড়ে, তা তদারকি করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, জনপ্রশাসন এবং মালিকপক্ষের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কমিটি করে পর্যবেক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে।

১৩. গার্মেন্টস শ্রমিকদের রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে (সরকারের ভর্তুকিমূলক পণ্য বিক্রি কার্যক্রমে তৈরি পোশাক শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্ত করা)।

এমএম/কেএ