হাইকমান্ডের পূর্ব নির্দেশনা ছিল
পুলিশের ওপর হামলা-হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেয় আমান
২৮ অক্টোবর বিএনপি সমাবেশে পুলিশ সদস্য হত্যার ঘটনায় হামলায় প্রধান নেতৃত্বদানকারী আমান উল্লাহ আমান গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বিভাগের একটি টিম রাজধানীর মহাখালী বাসস্ট্যান্ড এলাকা হতে সোমবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে তাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার আমান উল্লাহ আমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক।
বিজ্ঞাপন
সিটিটিসি বলছে, পূর্বেই নির্দেশনা ছিল পুলিশের মনোবল ভাঙতে, অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা। সেজন্য তিনি বড় একটি গ্রুপ নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে অবস্থান নিয়েছিলেন। পুলিশের ওপর হামলা ও সুযোগ পেলে হত্যা করার নির্দেশনাও পেয়েছিলেন। পুলিশ সদস্য আমিরুলকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পূর্ব নির্দেশনা বাস্তবায়নের পর হাইকমান্ডকে ছবি পাঠিয়েছেন। কনস্টেবল হত্যার পর তিনি নিজের ফেসবুকে লাঠি হাতে ছবি পোস্ট করেন।
আমানের সঙ্গে পুলিশ সদস্য হত্যায় আরও যারা জড়িত তাদের নামপরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে, তাদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে সিটিটিসি।
মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিকে রিলেশন্স বিভাগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন সিটিটিসি প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপি এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে সমাবেশের দিন গ্রেপ্তার আমান তার অনুসারীদের নিয়ে নয়াপল্টনকেন্দ্রিক মঞ্চের পাশে অবস্থান নিয়েছিলেন। কাকরাইলে সমাবেশে উপস্থিত বিএনপি কর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা করলে পুলিশ এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। কাকরাইলে সংঘর্ষের সুযোগ নিয়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের হাইকমান্ড নেতাদের নির্দেশে নয়া পল্টনস্থ বিএনপি পার্টি অফিসের পাশে ভিক্টরি হোটেলের পাশের গলি দিয়ে সে ছাত্রদলের একটি বড় অংশ নিয়ে পুলিশের ওপরে হামলা করার জন্য অগ্রসর হয়। সমাবেশ কেন্দ্রিক দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের অবস্থান সম্পর্কে আগে থেকেই তাদের জানা ছিল। সে তার দলবল নিয়ে অগ্রসর হতে থাকে।
পল্টন টাওয়ারের সম্মুখে এসে অগ্রসরমান দলের একটি অংশ বক্স কালভার্ট রোডের পশ্চিম প্রান্তে বিজয় নগর পানির ট্যাংকির দিকে যায় এবং অপর অংশটি তার নেতৃত্বে বক্স কালভার্ট রোডের পূর্ব প্রান্তের দিকে অগ্রসর হয়। বক্স কালভার্ট রোডের পশ্চিম প্রান্তে পৌঁছানোর পরে ছাত্রদলের কর্মীরা সেখানে দায়িত্ব পালনরত পুলিশ সদস্যদের ওপরে অতর্কিত হামলা করে।
এ হামলার পরিপ্রেক্ষিতে বক্স কালভার্টের পশ্চিম প্রান্তে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সাহায্য করতে পূর্ব প্রান্তের পুলিশ সদস্যরা বক্স কালভার্ট রোডের পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়। পশ্চিম দিকে অগ্রসরমান পুলিশ দলটির ওপরে তার নেতৃত্বে ও নির্দেশনায় হামলা শুরু করে। ছাত্রদলের এই অংশটি তার নেতৃত্বে পুলিশের ওপরে ইট-পার্টকেল নিক্ষেপ করতে থাকে।
আত্মরক্ষার জন্য পুলিশ সদস্যরা টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ছাত্রদলের আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করে। জানমাল রক্ষা ও ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য পুলিশ সদস্যরা জীবনহানিকর মারণাস্ত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকে এবং সর্বোচ্চ সহনশীলতার পরিচয় দেয়।
এই পর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের একটি বড় অংশ বক্স কালভার্ট রোডের পূর্ব দিকে অবস্থিত ডিআর টাওয়ার ও আশেপাশের স্থাপনায় অবস্থান নেয়। সেসময় ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক আমান উল্লাহ আমানের নেতৃত্বে তার অনুসারীরা পুলিশ সদস্যদের হামলা করার জন্য ক্রমাগত ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। নিক্ষিপ্ত ইটের আঘাতে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে। কিন্তু অত্যন্ত নৃশংসভাবে হত্যা করার উদ্দেশ্যে লাঠি দিয়ে ক্রমাগত আঘাত করতে থাকে। এসময় কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে এবং রক্তাক্ত অবস্থায় নিথর দেহটি রাস্তায় পড়ে থাকে। আমিরুল ইসলাম পারভেজের মাথা থেকে পা পর্যন্ত সারা শরীর গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। বিক্ষোভকারীরা মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য কনস্টেবল পারভেজের নিথর দেহের ওপরে বর্বরভাবে আঘাত করতে থাকে।
পরে কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজের মৃত্যু নিশ্চিত করার সে তার অনুসারীদের নিয়ে বক্স কালভার্ট রোডের পশ্চিম দিক দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
গ্রেপ্তার আমানকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সিটিটিসি প্রধান আরও বলেন, সেদিন মহাসমাবেশের মঞ্চে অবস্থিত বিএনপির এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা ছিল পুলিশের ওপর বর্বরোচিত ও নৃশংস হামলার মাধ্যমে মনোবল ভেঙে দেওয়া। প্রয়োজনে এক বা একাধিক পুলিশ সদস্যকে হত্যার মাধ্যমে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা, যাতে করে একটি নতুন ইস্যুর সৃষ্টি হয়। সেটি করতেই বড় একটি গ্রুপকে নেতৃত্ব দিয়ে ইটের আঘাতে লুটিয়ে পড়া সিসিটিসির কনস্টেবল আমিরুলের ওপর চড়াও হয় তারা। তাকে নির্দয়ভাবে পিটিয়ে হত্যা হয়। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পরও তাকে পেটানো হয়। এরকম পৈচাশিকতা ইতোপূর্বে কখনো ঘটেছে কি না জানি না।
আসাদুজ্জামান বলেন, ঘটনার পর আমান অ্যাপসের মাধ্যমে ছবি হাই কমান্ডের কাছে করেছেন। ফেসবুকে ছবি পোস্ট করেছেন। অনুসারীরা ফেসবুকে লিখেছেন, এই দলের কামান, আমান উল্লাহ আমান। এটাই রাজনৈতিক কৃষ্টি।
ডিএমপির এ অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, আমরা আমানকে পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় সোপর্দ করা হবে। আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড আবেদন করা হবে। তাকে ব্যাপকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তার সঙ্গে আরও যারা সেসময় ছিলেন তাদের নাম-পরিচয় আমরা পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধেও আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। সেদিন আমিনুল নিজের অস্ত্রটি ব্যবহার করেননি। বড় ক্ষয়-ক্ষতি এড়ানোর জন্য।
আমিরুল হত্যার পর ছবি কাদের কাছে অ্যাপসের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, এটা আমরা সুনির্দিষ্টভাবে বলবো না। তদন্তের স্বার্থে, পরবর্তী অপারেশনের স্বার্থে বলছি না। সে শুধু নির্দেশনার বাস্তবায়ন বা নেতৃত্ব দেননি, নিজেও হামলা অংশ নেন হেলমেট পরে লাঠি হাতে।
জেইউ/এসএম