বিএনপির-জামায়াতের ঢাকা ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের পর মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) সকাল অনেকটাই স্বাভাবিক দেখা গেছে রাজধানীর সবগুলো সড়ক। রাজধানীতে বেড়েছে ব্যক্তি ও গণপরিবহন। চোখে পড়ছে চিরচেনা যানজটও। একই সঙ্গে সকাল থেকে দূরপাল্লার বাসগুলো রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাচ্ছে। আবার ঢাকার বাইরে থেকে যাত্রী নিয়ে টার্মিনালে আসছে। তবে সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও যাত্রী নিতান্তই কম দেখা গেছে।

মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোণাসহ অন্যান্য গন্তব্যের বাসগুলো সময়মতো টার্মিনাল ছেড়ে যাচ্ছে। তবে টার্মিনালের মুখ থেকে কতিপয় যাত্রী বাসে উঠছেন। এছাড়া কিছুটা ভিড় দেখা গেছে ময়মনসিংহ-ঢাকা রুটের এনা পরিবহনের বাস কাউন্টারে। তবে সেই ভিড় অন্যান্য সময়ের মতো না।

এদিকে আরও দেখা গেছে কিছু সময় পর পর গন্তব্যে যাওয়ার জন্য যাত্রীরা সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেট কার, রিকশায় করে বাস টার্মিনালে আসছেন। তবে সেই সংখ্যাটা নিতান্তই কম। গত এক ঘণ্টায় হাতেগোনা সেই সংখ্যা হবে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জনের মতো। যাত্রীরা বলছেন অতীব ও প্রয়োজন ছাড়া কেউ এখন আর মুভমেন্ট করছে না। নির্বাচনী সহিংসতা শুরু ফলে তারা সবাই নিজ থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করে চলছেন।

ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটের সৌখিন এক্সপ্রেসের চালক মোহাম্মদ শরীফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ময়মনসিংহ থেকে সকালে একবার এসেছি। কিন্তু যাত্রী নেই। আসার পথে মাত্র ৫ হাজার টাকা আয় হয়েছে। এরমধ্যে তেল খরচই আছে ৪ হাজার টাকা। এখন আবার যাচ্ছি, তবে কেমন যাত্রী হবে সেটা এখনো বলা যাচ্ছে না। অন্যান্য সময় সাধারণ ট্রিপগুলোতেই ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা থাকতো।

ঢাকা-মাদারগঞ্জ ঢাকা রুটের অর্কিড এলিগেন্স বাসের চালক মোহাম্মাদ ফারুক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ তিনদিন পর বাস নিয়ে বের হলাম। টার্মিনাল থেকে মাত্র দুইজন মানুষ বাসে উঠেছে। পুরো পথের কি অবস্থা হবে জানি না। তবে হাবভাব দেখে খুব একটা ভালো মনে হচ্ছে। পেটের তাগিদে বাধ্য হয়ে বের হয়েছি। কারণ ঘরে বসে থাকলে তো আর মালিক টাকা দেবে না।

ঢাকা-জামালপুর রুটে রাজীব এন্টারপ্রাইজের চালক বাচ্চু ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুদিন তো বাস চালাতে পারিনি। তাই আজকে বাস নিয়ে বের হয়েছি। মালিক অবরোধের সময় বাস চালাতে নিষেধ করেন। বাসের ঝুঁকি তো থাকেই, সঙ্গে জীবনের ঝুঁকিও। ওপাশ থেকে ফিরে আসতে আসতে কাল ভোর হয়ে যাবে। দোয়া রাখবেন।

ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটের এনা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার সুমন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়। এই সময়টাতে যাত্রী একটু কমই থাকে। তবে সাধারণ সময়ে যে যাত্রী থাকে, এখন তার চাইতে কম। প্রতি বাসে ২০ থেকে ২২ জন যাত্রী যাচ্ছে। পুরো গাড়ি ভরে যাচ্ছে না। অন্য সময় হলে এই সংখ্যাটা তিরিশের ওপরে থাকতো।

ময়মনসিংগামী যাত্রী শামীম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সপ্তাহের মাঝামাঝিতে বাড়িতে যাওয়ার কোনো প্ল্যান ছিল না। জরুরি একটা প্রয়োজনে বাড়ি যেতে হচ্ছে। যেভাবে হরতাল অবরোধ শুরু হয়েছে, তাতে নিজের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে কখন না আবার আগুনে পুড়ে মরতে হয়। যেহেতু আজকে কোনো জুটঝামেলা নাই, তাই রওনা হয়েছি। আমার গতকালই যাওয়ার কথা ছিল।

এমএইচএন/এসএম