অবরোধের প্রথম দিন ১৯ গাড়িতে আগুন
বিএনপি-জামায়াতের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধকে কেন্দ্র করে শনিবার রাত থেকে রোববার রাত ১১টা পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১৯টি গাড়িতে অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া, পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ এবং কিছু গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে।
রোববার ভোর থেকে রাজধানীতে সাতটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ভোরে ডেমরার মাতুয়াইলে সাদ্দাম মার্কেটের সামনে এবং শ্যামপুরের জুরাইন বালুর মাঠ এলাকায় দুটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। এরপর ভোর সোয়া পাঁচটায় মিরপুর-৬ নম্বরে একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়।
এরপর সকালে মেরাদিয়ার বাঁশপট্টি এলাকায় একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে ওই বাসের যাত্রী সবুজ মিয়া (৩০) দগ্ধ হন। সবুজ মিয়া পেশায় বাস চালক।
বিকেল পৌনে চারটার দিকে মিরপুর বাঙলা কলেজের সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চৈতালি নামে একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। যদিও ওই আগুন তাৎক্ষণিকভাবে নেভানো সম্ভব হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো গেছে।
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে বাংলামোটর মোড়ে ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ’ নামে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়া হয়। বাংলামোটর পুলিশ বক্সের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এর আধা ঘণ্টা পর মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বর এলাকায় শিকড় পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। এ দুটি ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস গিয়ে আগুন নেভায়।
এদিকে, রাত সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীর পলাশী মোড়ে একটি প্রাইভেটকারে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ওই প্রাইভেটকারটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় রাস্তার পাশে রাখা ছিল। এছাড়া একই সময়ে কারওয়ান বাজারে একটি পিক-আপ ভ্যানে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। পিকআপের পেছনে থাকা সোফায় আগুন লাগে। পিকআপটি ওই সোফা ফেলে দিয়ে চলে যায়।
এছাড়া, রোববার ভোরে চট্টগ্রামে পতেঙ্গার ধুমপাড়া মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। সড়কের পাশে বাসটি রেখে চালক নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন। হঠাৎ অটোরিকশায় চড়ে দুইজন লোক এসে বাসটিতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে জানা গেছে।
সকাল ১০টার দিকে হবিগঞ্জ চুনারুঘাটে উপজেলা তাঁতী লীগের সভাপতি কবির মিয়া খন্দকারের প্রাইভেটকারে আগুন দেওয়া হয়। জানা গেছে, ওই প্রাইভেটকারে কয়েকজন যুবক পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় স্থানীয় লোকজন আগুন নেভান।
খুলনার রূপসা উপজেলার তালিমপুর এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি ফাঁকা বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। রোববার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় বিএনপির অবরোধে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় পিকেটারদের ছোড়া ইটের আঘাতে সিএনজি চালকসহ যাত্রীরা আহত হয়েছেন। রোববার (৫ নভেম্বর) রাত ৮টার পর উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের এমসি বাজার এলাকার মাওনা সিএনজি পাম্পের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
আগের রাতে ৯ বাসে আগুন
এদিকে অবরোধ শুরুর আগেই শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত অন্তত ৯টি বাসে আগুন দেওয়া হয়।
শনিবার সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে নিউমার্কেট এলাকার গাউছিয়া মার্কেটের সামনে মিরপুর লিংক পরিবহন নামে একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। ৭টা ৩৫ মিনিটে এলিফ্যান্ড রোডে গ্রিন ইউনিভার্সিটির একটি বাসে, ৭টা ৫৫ মিনিটে সায়েদাবাদে রাইদা পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়।
এরপর রাত ১০টায় গুলিস্তান পাতাল মার্কেটের সামনে মনজিল পরিবহনে আগুন দেওয়া হয়। রাত পৌনে ১২টায় নারায়ণগঞ্জে অনাবিল পরিবহনে, একই সময় ভোলার চরফ্যাশনে যমুনা এক্সপ্রেস বাসে আগুন দেওয়া হয়।
রাত ২টা ৫৫ মিনিটে এবং ভোর ৪টায় শ্যামপুরে দুটি তুরাগ বাসে আগুন দেওয়া হয়। এছাড়া সায়েদাবাদ সাদ্দাম মার্কেটের পাশে একটি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
পুলিশের ওপর ককটেল হামলা
এদিকে রোববার দুপুরে রাজধানীর উত্তরা হাউজবিল্ডিং এলাকায় পুলিশের টহল গাড়িকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। ওই ককটেল বিস্ফোরিত হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার এসআই মাহবুব আলীসহ তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ককটেল নিক্ষেপের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি কাজী মো. হাসানকে হাতেনাতে আটক করা হয়েছে।
গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে বড় ধরনের সমাবেশ করে বিএনপি, জামায়াত ও আওয়ামী লীগ। সেদিন দুপুরের দিকে বিএনপির সমাবেশে আসা লোকজনের সঙ্গে কাকরাইল মোড়ের কাছে আওয়ামী লীগের সমাবেশগামী লোকজনের সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ সেখানে হস্তক্ষেপ করার পর এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা হয় এবং বেশকিছু গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। উপস্থিত সাংবাদিকদেরও ব্যাপক মারধর করা হয়। এরপর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও উপুর্যুপরি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে বিএনপির সমাবেশ ভণ্ডুল করে দেয়। এর ফলে সংঘর্ষ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে এক পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়, পুলিশের বহু সদস্যকে পিটিয়ে আহত করা হয় এবং পুলিশ হাসপাতালে হামলা চালিয়ে কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।
সমাবেশ বানচালের প্রতিবাদে পরদিন ২৯ অক্টোবর বিএনপি হরতাল পালন করে। হরতালের দিন সকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি এখন কারাগারে আছেন।
হরতালের পর একদিন বিরতি দিয়ে ৩১ অক্টোবর থেকে টানা ৩ দিনের অবরোধ কর্মসূচি দেয় বিএনপি-জামায়াত। ওই কয়েকদিনে মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ বিএনপির শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার অভিযান এখনো অব্যাহত রেখেছে পুলিশ। সবশেষ গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেনকে। এছাড়া গত কয়েকদিনে সাবেক জাতীয় ফুটবলার আমিনুল হকসহ বিএনপির জাতীয় পর্যায়ের অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কেএ