ব্রিটিশ হাইকমিশনার কুকের ‘দৌড়ঝাঁপ’
মাস ছয়েক আগে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার হয়ে ঢাকায় আসেন সারাহ কুক। প্রায় সাত বছর পর এটি ঢাকায় কুকের দ্বিতীয় অ্যাসাইনমেন্ট। এবারের দায়িত্ব ও দৃশ্যপট একেবারে ভিন্ন। কারণ, কুক এবার এসেছেন হাইকমিশনার হয়ে। সামনেই বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তবে, আগে থেকে বাংলাদেশ সম্পর্কে জানাশোনা থাকায় তেমন বেগ পেতে হচ্ছে না ব্রিটিশ এ কূটনীতিককে।
দায়িত্বের শেষ সময়ে সাবেক হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন বন্ধু দেশ হিসেবে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের বার্তা দিয়ে গেছেন। তারই উত্তরসূরি কুক ঢাকায় আসার পর থেকে নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র কিংবা আইন মন্ত্রণালয়, যেখানেই যাচ্ছেন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলছেন।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্প্রতি ব্রিটিশ হাইকমিশনারের দৃশ্যমান কূটনৈতিক তৎপরতা বেড়েছে। ঢাকায় গত ২৮ অক্টোবর সংঘাত-সহিংসতার পর ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দল ছাড়াও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একজন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি।
শুরুতে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল এবং পরবর্তীতে যথাক্রমে জাতীয় পার্টি ও বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সব বৈঠকে অংশীজনদের অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন কুক।
এর আগে, ২৭ অক্টোবর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে যে সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটে, এরপর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কূটনীতিকদের তৎপরতা বেড়েছে। শিগগিরই নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে। তাই বাংলাদেশে দায়িত্বপালনরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের তৎপরতা বেড়েছে। তারা (কূটনীতিকরা) চাইছেন, তফসিল ঘোষণার আগে রাজনৈতিক দলগুলো সংলাপে বসুক।
আরও পড়ুন
এদিকে, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা কূটনীতিকদের তৎপরতায় অসন্তুষ্ট সরকার। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যে তার ইঙ্গিত মিলেছে। গত ৩১ অক্টোবর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দলগুলোর মধ্যে শর্তহীন সংলাপের কথা বলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
ওই দিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোনো কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠান আমাদের দেশে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তাদের বোধ হয় রাজনৈতিক দল হিসেবে রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করা উচিত। তারা হয়তো বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করতে চান।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যৈষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেন, কূটনীতিকরা তাদের দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, সরকারি কর্মকর্তা বা রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতেই পারেন। তবে, এমন কিছু করা তাদের ঠিক হবে না যেটা একটা বিষয়কে উসকে দিতে পারে। আমরা আশা করি, ভিয়েনা কনভেনশন মেনে কূটনীতিকরা দায়িত্ব পালন করবেন।
আরও পড়ুন
এ প্রসঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘কয়েক দিন পরপর দেখা যায় বিদেশি কিছু বন্ধু রাষ্ট্র মিলে যৌথ বিবৃতি দেয়। এটা ঠিক নয়। কূটনীতিকদের যদি কিছু বলার থাকে তাহলে কূটনৈতিক চ্যানেলেই বলা উচিত, প্রকাশ্যে বলা ঠিক নয়। কূটনীতিকরা রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতেই পারেন। কিন্তু সেটা যদি অতি উৎসাহ বা ভিন্ন মাত্রা যুক্ত করার মানসিকতা থাকে, সেটা ঠিক নয়। নির্বাচন তো আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমাদের জনগণই ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচন করবেন।’
শুরুতে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল এবং পরবর্তীতে যথাক্রমে জাতীয় পার্টি ও বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সব বৈঠকে অংশীজনদের অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন কুক
চলতি বছরের এপ্রিলের শেষের দিকে ঢাকায় আসেন ব্রিটিশ নতুন হাইকমিশনার সারাহ কুক। গত ৮ জুন বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে পরিচয়পত্র পেশ করেন তিনি।
কুক ২০১২-১৬ পর্যন্ত বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিভাগের (ডিএফআইডি) কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকায় হাইকমিশনারের দায়িত্ব পালনের আগে কুক যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও ডেভেলপমেন্ট অফিসে (এফসিডিও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি তানজানিয়ায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার ছিলেন।
কুক ২০০৫ সালে ডিএফআইডি-তে যোগ দেন। সেখানে তিনি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগ, দুর্নীতিবিরোধী ও সহায়তার কার্যকারিতা সম্পর্কিত যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন নীতি নিয়ে কাজ করেন। যুক্তরাজ্যের সিভিল সার্ভিসে যোগ দেওয়ার আগে কুক গায়ানা ও সলোমন দ্বীপপুঞ্জে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন।
এনআই/এসকেডি