সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। অবরোধ কর্মসূচি শুরুর আগের রাত থেকেই সারা দেশে ৯টি বাস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এমন পরিস্থিতিতে পরিবহন মালিক-শ্রমিক থেকে শুরু করে ভয়-আতংক ঢুকে গেছে যাত্রীদের মনেও। যার প্রভাব পড়েছে রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বাস টার্মিনালে যাত্রী নেই, চলছে না গাড়ির চাকা, অলস সময় পার করছেন পরিবহন শ্রমিকরা।

রোববার (৫ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত মহাখালী বাস টার্মিনালে অবস্থান নিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। এর আগে ভোর ৬টা থেকেই অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়।

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভোর ৪টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত যেখানে প্রতিটি পরিবহনের অন্তত ১৫ থেকে ২০টির অধিক বাস বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা, সেখানে এনা পরিবহনের কিছু বাস ছাড়া চলছেই না কোনো পরিবহন।

কোনো চাকাই ঘোরেনি এমন পরিবহনগুলোর চালক-সহকারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেখানে প্রতিটি বাসে মহাখালী থেকে অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ যাত্রী পূর্ণ করে প্রতি ১০ মিনিট পর পর একটি বাস ছাড়া হয়, সেখানে ঘণ্টা পার হলেও কোনো যাত্রী মিলছে না। তাছাড়া মালিক পক্ষ থেকেও পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রেখে বাস ছাড়তে বলা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাস টার্মিনালে যাত্রীদের জন্য বসার নির্ধারিত জায়গায় ঘুমাচ্ছে পরিবহন শ্রমিকরা। সারি সারি করে রাখা বাসগুলোরও যেন এই সুযোগে একটু ফুরসত মিলেছে। 

তবে মহাখালী থেকে ময়মনসিংহগামী এনা পরিবহনের বাসে দুই-চারজন যাত্রী বসে থাকতে দেখা গেছে।

ঢাকা থেকে নওগাঁ-বগুড়াগামী একতা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার রফিক মিয়া বলেন, ভোর চারটা থেকে এসে বসে আছি। কোনো যাত্রী নেই। আমরা গাড়ি ছাড়ার জন্য প্রস্তুত, কিন্তু কোনো যাত্রী না আসলে তো আমরা গাড়ি ছাড়তে পারি না। সকালের দিকে ভালো যাত্রী থাকে কিন্তু আজকে যেহেতু এখন পর্যন্ত নেই, তার মানে সারাদিন এভাবেই যাবে।

অনন্যা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার আফসারুদ্দিন বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো বাস আমরা ছাড়তে পারিনি। যাত্রী না হলে কীভাবে ছাড়ব? ৪/৫ জন যাত্রীও ভোর থেকে এখন পর্যন্ত আসেনি। এখন পর্যন্ত যেহেতু যাত্রী নেই, সারাদিনে আর আসবে বলেও মনে হয় না।

এনা পরিবহনের ম্যানেজার আবু সুফিয়ান ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রথম দফা অবরোধেও আমাদের গাড়ি চলেছে, এবারও আমরা চালাচ্ছি। মালিক পক্ষের নির্দেশ আমাদের গাড়ি চলবেই। তবে অন্যান্য সময় যেখানে ১০ মিনিট পর পর গাড়ি ছাড়া হতো, এখন সেখানে ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। যাত্রীর সংখ্যা খুবই কম।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের কোনো গাড়ি অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পড়েনি। আমরা সব সময় আমাদের ড্রাইভার, সুপারভাইজারসহ স্টাফদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেই। এমনকি তাদের সঙ্গে আমরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। সড়কে সামনের কোনো গাড়িতে যদি সমস্যা হয়, আমরা পেছনের গাড়িগুলোকে বলে দিচ্ছি যেন তারা সাবধানে সামনে অগ্রসর হয়। প্রশাসনও আমাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে।

উল্লেখ্য সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে এবং মির্জা ফখরুলসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তির দাবিতে রোববার সকাল থেকে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। তাদের শরিকরাও এই অবরোধ পালন করবে। পাশাপাশি জমায়াতে ইসলামীও আলাদা করে এই ৪৮ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে।

এর আগে গত সপ্তাহের শেষ তিনদিন (৩১ অক্টোবর-২ নভেম্বর) টানা অবরোধ পালন করে বিএনপি-জামায়াত। তার আগে ২৯ অক্টোবর হরতাল পালন করে বিএনপি ও এর শরিকরা।

গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে বড় ধরনের সমাবেশ করে বিএনপি, জামায়াত ও আওয়ামী লীগ। সেদিন দুপুরের দিকে বিএনপির সমাবেশে আসা লোকজনের সঙ্গে কাকরাইল মোড়ের কাছে আওয়ামী লীগের সমাবেশগামী লোকজনের সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ সেখানে হস্তক্ষেপ করার পর এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা হয় এবং বেশকিছু গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। উপস্থিত সাংবাদিকদেরও ব্যাপক মারধর করা হয়। এরপর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও উপুর্যুপরি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে বিএনপির সমাবেশ ভণ্ডুল করে দেয়। এর ফলে সংঘর্ষ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে এক পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় এবং পুলিশ হাসপাতালে হামলা চালানো হয়।

সমাবেশ বানচালের প্রতিবাদে পরদিন ২৯ অক্টোবর বিএনপি হরতাল পালন করে। একদিন বিরতি দিয়ে ৩১ অক্টোবর থেকে টানা ৩ দিনের অবরোধ কর্মসূচি দেওয়া হয়।

এদিকে, হরতালের দিন এবং পরবর্তী কয়েকদিনে মির্জা ফখরুল, মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ বিএনপির শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

টিআই/এমএ