সংসদে প্রধানমন্ত্রী
বিদেশে কিলার হায়ার করে আমাকে মারার চেষ্টা হয়েছে...
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করে বলেছেন, অতীতে বার বার আমার ওপর আঘাত হেনেছে, তারপরও আমি বেঁচে গেছি। এখনো বার বার আমার ওপর হামলা হচ্ছে। এমনকি দেশে নয়, বিদেশেও আমার ওপর হামলার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। আমি বিস্তারিত বলব না.. শুধু এইটুকুই জানিয়ে রাখলাম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যখন বিদেশে যাই, সেখানেও কিলার হায়ার করে আমাকে মারার চেষ্টা... সে চেষ্টাও করেছে ওই খালেদা জিয়ার ছেলে, যেটা লন্ডনে বসে আছে, সেসহ তাদের যারা সন্ত্রাসী তারাই...। তবে আমি কখনো এ ব্যাপারে দুশ্চিন্তা করি না। জন্মালে মরতে হবে। কিন্তু যতক্ষণ শ্বাস আছে এ দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাব।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) একাদশ জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এসময় বিএনপির চলমান আন্দোলনের কঠোর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা থেকে শুরু করে সব ধরনের ব্যবস্থা যখন আমরা করে যাচ্ছি তখন কী দেখলাম? কথা নেই, বার্তা নেই— নির্বাচন হতে দেবে না। আর আমাকে পদত্যাগ করাবে, ক্ষমতা থেকে হটাবে। ঘোষণা দিয়ে ২৮ অক্টোবর বিএনপি যে তাণ্ডব করেছে সারা বাংলাদেশে.. এই দৃশ্যগুলো সহ্য করা যায় না। সাংবাদিকরা কী অপরাধ করেছে? আর এরা বিএনপিরই কাজ করত, তাদেরকে যেভাবে মেরেছে! যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের পাশে আছি, সাধ্যমতো সাহায্য করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শেষ অধিবেশনে আমার শেষ বক্তব্যে এইটুকু আহ্বান জানাব— এই দুর্বৃত্তরা সাধারণ মানুষের ওপর আক্রমণ করছে; সাংবাদিক পুলিশ থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ— সবাইকে পুড়িয়ে হত্যা করছে, জনগণের সম্পদ নষ্ট করছে। এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। জনগণ হচ্ছে সব শক্তির উৎস, আমার একমাত্র শক্তি বাংলাদেশের জনগণ, জনগণের শক্তি নিয়েই আমরা চলছি।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী ২৮ অক্টোবরে বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের একটি ভিডিও চিত্র সংসদে প্রদর্শন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান তো আমার বাবা মা ভাইবোন সবাইকে হত্যার সঙ্গে জড়িত। আর খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া তো আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে তারা।
আরও পড়ুন
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থা ছিল বলেই দেশ এগিয়ে গেছে। আর সেটাকেই ধ্বংস করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে তারা। দেশবাসীর কাছে আমি আহ্বান জানাই তারা কোন বাংলাদেশ চায়। এই ধ্বংসস্তূপ নাকি উন্নত বাংলাদেশ? তাদের জীবন মান যে উন্নতি হয়েছে সেটা ধরে রাখতে চান? সেটা ধরে রাখতে হলে একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে সেটা থাকবে। নৌকা মার্কা স্বাধীনতা দিয়েছে। নৌকা মার্কাই পারে উন্নত জীবন দিতে। এরা ধ্বংসই দিতে পারবে। এরা স্বাধীনতাও চায় না, উন্নতিও চায় না।
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে আমরা চেষ্টা করছি। এটা করতে পারব। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাক সেটা আমরা চাই। উন্নয়নের অগ্রগতি অব্যাহত থাকুক অধিকার সুরক্ষিত থাকুক সেটা আমরা চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন বাংলাদেশ আমরা চাই? দিনরাত পরিশ্রম করে মাত্র ১৪ বছরের মধ্যে যে বাংলাদেশ আমরা উন্নত করেছি। বলেছিলাম দিনবদলের সনদ। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আর তখন এ ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ। আমার আজ বক্তব্য দেওয়ার মানসিকতা নেই।
তিনি বলেন, এরকম দৃশ্য। যারা জাজের বাড়িতে আক্রমণ করে। এটা তাদের অভ্যাস। এর আগে প্রধান বিচারপতির অফিসে লাথিও মেরেছে বিএনপি নেতারা। পুলিশের ওপর হামলা, অ্যাম্বুলেন্সে রোগী যাচ্ছে সেখানেও আক্রমণ। আর কী বীভৎস দৃশ্য। পুড়িয়ে মানুষ হত্যা না শুধু না, মনে হচ্ছে এরা পুরো দেশটাকে ধ্বংস করবে।
তিনি আরও বলেন, মানুষের কল্যাণে কাজ করতে গিয়ে কে কোন দল করে সেটা আমি দেখিনি। মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখেছি। তাদের জন্য কাজ করেছি। তাদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
আরও পড়ুন
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যখন দেশের মানুষকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। তখন বিএনপি জামাত জোট বার বার অগ্নি সন্ত্রাস, সংঘাত মানুষ হত্যা, মামলা নানাভাবে মানুষকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছে। একদিকে আমরা দেশের জন্য কাজ করি। দেশের উন্নতি করি অন্যদিকে তারা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। ধ্বংস করাটাও তাদের চরিত্র। ২৮ তারিখে যেভাবে পুলিশকে ফেলে দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। কোনো মানুষ এরকম করতে পারে? ২০১৩, ১৪ ও ২০১৫ সালে তারা একইভাবে করেছে। মাঝখানে একটু থেমেছিল, তারপর আবার তাদের ভয়ংকর রূপ জাতি দেখছে।
বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন। এ সংক্রান্ত ছোট একটি পুস্তক সংসদ সদস্যদের কাছে সরবরাহ করা হয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যখাত, বাজেট বৃদ্ধি, জিডিপির আকার বৃদ্ধি, শিক্ষাখাত, এডিপি, দারিদ্র বিমোচন, শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি বৃদ্ধি, গড় আয়ু বৃদ্ধি, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার কমানো, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, কারিগরি শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব প্রদান, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি, ইন্টারনেট ব্যবহারের হার বৃদ্ধি, সরকারি সেবা সহজীকরণ, সামাজিক সুরক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কথা জানান।
রিজার্ভ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রিজার্ভ সময় সময়ে বাড়ে-কমে। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। এটা নিয়ে দুঃশ্চিন্তার কিছু নেই। কারণ আমরা খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে অন্যান্য কাজগুলো করে যাচ্ছি। আমরা সবসময় খুব সতর্কভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২০০৬ সালে ছিল মাত্র এক হাজার ৪৬২ টাকা। আমরা তিন দফায় বৃদ্ধি করে ৮ হাজার ৩০০ টাকায় উন্নীত করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি জিনিসপত্রের দাম নিয়ে অনেকে হা-হুতাশ করছেন। কিন্তু আমরা এই যে উৎপাদন বাড়ালাম। জনসংখ্যা কিন্তু এতগুণ বাড়েনি। তাহলে এগুলো গেল কোথায়? মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে। খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে। সেটাই হলো বড় কথা। দেশের অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না। ইনশাল্লাহ আবার দেখা হবে।
এসআর/এসকেডি