৭ দেশে অর্থ পাচার করেন সারওয়ার্দী, ৩ বছরেও শেষ হয়নি অনুসন্ধান
দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ অর্থ উপার্জন এবং বিদেশে পাচারের অভিযোগে আনসার ও ভিডিপির সাবেক মহাপরিচালক লেফট্যানেন্ট জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর বিরুদ্ধে প্রায় তিন বছর আগে অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
অনুসন্ধান পর্যায়ে দুদকের কাছে তথ্য আসে আমেরিকা ও কানাডাসহ সাত দেশে হাসান সারওয়ার্দী অর্থ পাচার করেছেন। এখন চলছে ওই তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাইয়ের কাজ।
বিজ্ঞাপন
অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে সম্প্রতি বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) বরাবর চিঠি দিয়েছেন দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা। সেই চিঠির জবাব এখনও পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনুসন্ধান এখনও চলমান। তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে। যেহেতু বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে, সে কারণে ওই তথ্য যাচাই-বাছাই করতে সময় লাগছে। বিদেশের তথ্য পাওয়া গেলে দ্রুত অনুসন্ধান শেষ করা সম্ভব হবে।
বিএফআইইউকে দেওয়া চিঠিতে দুদক হাসান সারাওয়ার্দী ও তার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির নামে আমেরিকা, কানাডা, দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও লন্ডনসহ মোট সাত দেশে স্থাবর সম্পত্তি (বাড়ি) ও ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে। এ ছাড়া, দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে তার নিজের ও কোম্পানির নামে ব্যাংক হিসাব থাকলে তার বিস্তারিত প্রতিবেদনসহ নথিপত্র চাওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন
দুদক সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে লেফট্যানেন্ট জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এজন্য তখন অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছিল। চৌধুরী আবু সাহেদ নামের এক ব্যক্তির ৩০ পৃষ্ঠার লিখিত অভিযোগের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় অনুসন্ধানে নামে দুদক।
দুদকের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, হাসান সারওয়ার্দী বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার জন্য ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। অবৈধভাবে অর্জিত কোটি টাকা দিয়ে স্ত্রী ও সন্তানদের নামে বাড়ি ও ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন। এ ছাড়া, বিদেশে অর্থ পাচার করে মানিলন্ডারিং অপরাধ করেছেন।
এদিকে, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ ঘিরে তাণ্ডবের দিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কথিত উপদেষ্টাকে দলীয় কার্যালয়ে হাজির করার ঘটনায় নতুন করে আলোচনায় আসেন হাসান সারওয়ার্দী। এ ঘটনায় গত ৩১ অক্টোবর বিকেলে সাভার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পল্টন থানায় দায়ের করা একটি মামলায় সারওয়ার্দীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।
কে এই হাসান সারওয়ার্দী
চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর (বীর বিক্রম) বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা এবং জাতীয় প্রতিরক্ষা কলেজের সাবেক কমান্ড্যান্ট ছিলেন। তিনি একসময় আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডক্ট্রাইন কমান্ডের (এআরটিডিওসি) জিওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একটি পদাতিক ইউনিট, রাইফেলস ব্যাটালিয়ন ও পদাতিক ব্রিগেড কমান্ড করেন। দায়িত্ব পালন করেছেন পদাতিক ডিভিশনসহ সেনাসদরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদেও। তিনি বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমির ব্যাটালিয়ন কমান্ডার, বাংলাদেশ রাইফেলসের পরিচালক (অপারেশন) ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সামরিক গোয়েন্দা পরিদপ্তরের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিএফআইইউকে দেওয়া চিঠিতে দুদক হাসান সারাওয়ার্দী ও তার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির নামে আমেরিকা, কানাডা, দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও লন্ডনসহ মোট সাত দেশে স্থাবর সম্পত্তি (বাড়ি) ও ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে। এ ছাড়া, দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে তার নিজের ও কোম্পানির নামে ব্যাংক হিসাব থাকলে তার বিস্তারিত প্রতিবেদনসহ নথিপত্র চাওয়া হয়েছে।
এছাড়া, তিনি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন্স ট্রেনিং এবং ননকমিশন অফিসার্স অ্যাকাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও প্রথম প্রধান প্রশিক্ষক ছিলেন ।
আরও পড়ুন
অভিযোগ রয়েছে, চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী লে. জেনারেল পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর এনডিসির কমান্ড্যান্ট থাকাবস্থায় একাধিক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এলপিআরে থাকাকালীন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে ২০১৮ সালের ১৬ আগস্ট প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেন সারওয়ার্দী। এছাড়া সেনা আইন বহির্ভূতভাবে মেসকিট (সামরিক পোশাক) পরে ওই বছরই কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত টিভি উপস্থাপক ফারজানা ব্রাউনিয়াকে বিয়ে করেন। যা সে সময় ব্যাপক সমালোচিত হয়।
অনলাইন এক টকশোতে সেনাবাহিনীকে নিয়ে ভুল তথ্য উপস্থাপন করে ২০২০ সালে আলোচনায় আসেন হাসান সারওয়ার্দী। কয়েক বছর আগেও আওয়ামী লীগের জন্য 'অন্তপ্রাণ' হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টারত এ সেনা কর্মকর্তা হঠাৎ করেই টকশোতে আওয়ামী লীগ ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে সমালোচনা শুরু করেন। এ ছাড়া, নারী কেলেঙ্কারিসহ সেনা শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডের জন্য ২০১৯ সালের মার্চ মাসে দেশের সব সেনানিবাসে তাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা হয়েছিল বলেও জানা গেছে।
আরএম/এসকেডি