মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয়ে বিএনপি কার্যালয়ে মিয়া জাহিদুল ইসলাম আরেফী নামের এক ব্যক্তির সংবাদ সম্মেলন করার ঘটনায় সাবেক সেনা কর্মকর্তা লে. জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে হাসান সারওয়ার্দীকে সাভার থেকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। 

গত, ২৮ অক্টোবর বিএনপির ডাকা মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এর জের ধরে নয়াপল্টনে বিএনপির ডাকা মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। সেদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে হাসান সারওয়ার্দী এবং বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের নেতৃত্বে ২০ জন নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে কিছু সংবাদমাধ্যমের সামনে মিয়া আরেফী নিজেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দেন। পুলিশ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন ও বিচার বিভাগের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তার সরকারের কাছে সুপারিশ করেছেন বলে বক্তব্য দেন তিনি।

সেখানে মিয়ান আরেফী বক্তব্যে দাবি করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার দিনে ১০ থেকে ১৫ বার যোগাযোগ হয় এবং মার্কিন সরকারের সবাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে। তিনি আরও দাবি করেন, তিনি মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরকেও বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছেন।

পরে তাকে নিয়ে সর্বমহলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। সেই ধারাবাহিকতায় আজ (মঙ্গলবার) বিকেলে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে (হাসান সারওয়ার্দী) ছাড়া হবে না। হচ্ছেও না। তার খোঁজ করা হচ্ছে। তাকে ধরা হবে। জিজ্ঞেস করা হবে কেন প্রতারণা করলো। আমি নির্দেশ দিয়েছি। উনি সাজিয়ে-গুছিয়ে নিয়ে আসছে। তাকে ধরা হবে। ব্যবস্থা নেব। বলে দিয়েছি।’ প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরপরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জানা যায়, চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর (বীর বিক্রম) বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা এবং জাতীয় প্রতিরক্ষা কলেজের সাবেক কমান্ড্যান্ট ছিলেন। তিনি একসময় আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডক্ট্রাইন কমান্ডের (এআরটিডিওসি) জিওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একটি পদাতিক ইউনিট, রাইফেলস ব্যাটালিয়ন ও পদাতিক ব্রিগেড কমান্ড করেন। দায়িত্ব পালন করেছেন পদাতিক ডিভিশনসহ সেনাসদরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদেও। তিনি বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমির ব্যাটালিয়ন কমান্ডার, বাংলাদেশ রাইফেলসের পরিচালক (অপারেশন) ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সামরিক গোয়েন্দা পরিদপ্তরের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

এছাড়া, তিনি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন্স ট্রেনিং এবং ননকমিশন অফিসার্স অ্যাকাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও প্রথম প্রধান প্রশিক্ষক ছিলেন ।

২০১৯ সালে চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীকে সেনানিবাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। সাবেক এই সেনা কর্মকর্তার বিভিন্ন আচরণ সেনাবাহিনীর জন্য বিব্রতকর বলেও পরের বছর এক বিজ্ঞপ্তি দেয় আইএসপিআর।

চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী লে. জেনারেল পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর এনডিসির কমান্ড্যান্ট থাকাবস্থায় একাধিক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। তিনি এনডিসিতে পরিচালিত বিভিন্ন কোর্সের সঙ্গে বিদেশে ভ্রমণকালেও অনেক মেয়েকে নিয়ে চলাফেরা করেন। বিভিন্ন মাধ্যমে তার এই অশোভনীয় আচরণ এবং মেলামেশার ছবি নজরে এলে কর্তৃপক্ষ বিব্রত হয় এবং তাকে বিভিন্নভাবে উপদেশ দেওয়া হয়।

তিনি এলপিআরে থাকাকালীন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে ২০১৮ সালের ১৬ আগস্ট প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেন। এছাড়া সেনা আইন বহির্ভূতভাবে মেসকিট (সামরিক পোশাক) পরে ওই বছরই কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত টিভি উপস্থাপক ফারজানা ব্রাউনিয়াকে বিয়ে করেন। যা সেসময় ব্যাপক সমালোচিত হয়।  

কেএ