অবরোধে সহিংসতার শঙ্কা
যাত্রী সংকট-আতঙ্কে ঢাকা ছাড়ছে না দূরপাল্লার কোনো বাস
পৃথক ঘোষণায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ডাকা টানা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি আজ শুরু হয়েছে। অবরোধের কারণে রাজধানীর গাবতলী, টেকনিক্যাল ও কল্যাণপুর বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাচ্ছে না দূরপাল্লার কোনো বাস।
কিছু যাত্রী কাউন্টারে এলেও তারা গন্তব্যে যেতে পারছেন না। যাত্রী সংকটের কারণ দেখিয়ে ছাড়া হচ্ছে না কোনো বাস। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছে, অবরোধের কারণে বাস কাউন্টারে যাত্রীর ভিড় নেই। যে কয়জন আসছে তাতে যাত্রী নেই বললেই চলে। আর যাত্রীরা বলছেন, অবরোধ আতঙ্ক বিরাজ করছে কাউন্টারে। হামলা-ভাঙচুরের ভীতি আছে তাদের মধ্যেও।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সকাল থেকে গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে সরেজমিনে দেখা গেছে, অনেক কাউন্টারই বন্ধ। কেউ কেউ কাউন্টার খুলে বসলেও কাঙ্ক্ষিত যাত্রীর দেখা নেই। বাস ভর্তি না হওয়ায় জরুরি প্রয়োজনে গন্তব্যে যেতে আগ্রহী যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে। ৪২ বা ৫২ সিটের কোনো বাসেই পাঁচ জনের বেশি যাত্রী হচ্ছে না।
যদিও অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাখ্যান করে বাস চলাচলের ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।
কাউন্টারে কাউন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আতঙ্ক ও যাত্রী সংকটের কারণে সকাল থেকে দূরপাল্লার গণপরিবহন রাজধানী থেকে ছেড়ে যায়নি। তবে বিভিন্ন জেলা থেকে রাতে ছেড়ে আসা গাড়িগুলো শহরে প্রবেশ করতে দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গাবতলী বাস টার্মিনালের ভেতরে ও কাউন্টারের আশপাশে দূরপাল্লার বাসগুলো দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। কোনো কোনো দূরপাল্লার বাস চলাচল করতে দেখা গেলেও কথা বলে জানা যায়, গ্যারেজে কিংবা ওয়াশ স্টোরে নেওয়া হচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে যাওয়ার উদ্দেশে গাবতলী আসার পর বিপাকে পড়েছেন সোহাগ নামে এক যাত্রী। কাঁধে ব্যাগ নিয়ে ঘুরতে দেখা যায় তাকে। পরে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে কথাও বলেন তিনি। জানান, জরুরি প্রয়োজনে বাড়ি যেতে চান কিন্তু কোনো বাস ছাড়ছে না।
সোহাগ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ট্রাফিক পুলিশ কোনো সমাধান দিতে পারেনি। দেবেই বা কীকরে, বাস তো ছাড়ছে না। যাত্রী কম। অল্প যাত্রী নিয়ে যাবে না বলল। এত দূরের পথ কীভাবে যাব, সেটাই ভাবছি। কিন্তু আমাকে যেতেই হবে।
দেশ ট্রাভেলসের কাউন্টার সূত্রে জানা যায়, সকাল থেকে অন্তত পাঁচটি ট্রিপ যায় রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশে। যাত্রী সংকটের কারণে আজ কোনো ট্রিপ যেতে পারেনি।
দিগন্ত পরিবহনের কাউন্টারের ম্যানেজার মমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, যশোর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, বরিশাল, পিরোজপুরসহ দক্ষিণবঙ্গে চলাচল করে দিগন্ত। যাত্রীর চাহিদা অনুযায়ী সকাল থেকে ১০-১২ ট্রিপ চলে। অথচ আজ কোনো ট্রিপ চালাতে পারিনি, যাত্রী নেই।
যাত্রী কেন নেই– জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবরোধে যাত্রীরা আতঙ্কে আছে। আমাদের বাস চালানোর নির্দেশনা আছে। বাস আমরা ছাড়তেও রাজি। যাত্রী না থাকলে কেমনে যাব? লোকসান করে তো বাস চালাতে পারব না। ২০টা যাত্রী আর টোল খরচা হলে না হয় ছাড়া যায়।
দর্শনা ডিলাক্সের আলমগীর বলেন, যাত্রী নেই। যাত্রী যদিও দুএকজন আসছে, তাদের নিয়ে যেতে পারছি না। খরচা তো উঠতে হবে। ভিড়ে ঠাসা থাকা টার্মিনাল খা খা করছে, যাত্রী নেই। সহিংসতার ভীতি তো আছেই।
কমফোর্ট লাইনের শহীদুল ইসলাম বলেন, আমরা বাস ছাড়তে রাজি। মালিকের অনুমতিও আছে। কিন্তু যাত্রী থাকলে তবেই তো বাস ছাড়ব। সকাল থেকে আমাদের কোনো ট্রিপ যায়নি। শুধু শুধু বসে আছি।
জেআর ট্রাভেলসের এক কর্মী বলেন, আমরা বাস চালাতে চাই, যদি রাস্তা ভালো থাকে। পুলিশ যদি আমাদের নিরাপত্তা দেয় তাহলে আমাদের সমস্যা নেই। কিন্তু শুধু যাত্রী নয়, আমাদের মধ্যেও আতঙ্ক আছে। বাস ভাঙচুর, পোড়ানোর খবর আসছে। আজ সকাল থেকে কোনো বাসে যাত্রী নেই। কেউ চায় না দুর্ভোগ-ভোগান্তি হোক। আমরা চাই না কেউ না খেয়ে থাকি। যারা প্রয়োজনে বউ-বাচ্চা, ব্যাগ পোটলা নিয়ে বের হয়েছেন তারাও যেন গন্তব্যে যেতে পারেন, সেটাই চাই কিন্তু যাত্রী নেই। রাস্তা নিরাপদ থাকলে আমরাও যাব। কাউন্টারে আসবে যাত্রীরাও। কিন্তু সড়কে নিরাপত্তা আগে নিশ্চিত করার অনুরোধ জানান তিনি।
সোহাগ পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার বলেন, সকাল থেকে যাত্রী নেই। আর কম যাত্রী নিয়ে গাড়ি ছাড়লে কোনো লাভ নেই, পুরোটাই লস। সড়কে যেকোনো ধরনের অঘটন ঘটলে সবার জীবনে শঙ্কা তৈরি হয়। তাই চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারদের মধ্যে গাড়ি নিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে অনীহা আছে। তবু যাত্রী এলে আমাদের বাস ছাড়ার প্রস্তুতি আছে।
শ্যামলি পরিবহনের কাউন্টারের কর্মী রনি হোসেন বলেন, সকাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। হরতালের কারণে আতঙ্ক রয়েছে। তবে গাড়ি না ছাড়ার পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে যাত্রী কম। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীর সংখ্যা বুঝে গাড়ি ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
দূরপাল্লার বাস গাবতলী টার্মিনাল থেকে ছেড়ে না গেলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা সড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ বিরোধী অবস্থান নিয়েছেন। তারা বিএনপি ও জামায়াতের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। যদিও গাবতলীতে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের অবরোধ সমর্থনে কোনো মিছিল বা পিকেটিং করতে দেখা যায়নি।
বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হচ্ছে। এরপরও কি যান চলাচল স্বাভাবিক থাকবে? জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক সামদানী খন্দকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, অবরোধের মধ্যেও আমাদের যানবাহন চলাচল অব্যাহত থাকবে। অবরোধের ঘোষণায় যাত্রীরা যেতে সাহস করছে না। যেসব গাড়িতে যাত্রী হচ্ছে সেসব গাড়ি ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে।
জেইউ/এসএসএইচ