সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের সমমনা দলগুলোর দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। অবরোধ কর্মসূচির প্রথমদিন সকাল পৌনে ৯টা পর্যন্ত রাস্তায় গণপরিবহন চলাচল কম দেখা গেছে। সাধারণ মানুষের চলাচলও অন্যান্য দিনের তুলনায় কম। রাজধানীর সায়দাবাদ থেকে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার কোনো বাস।

যেকোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে মোড়ে মোড়ে পুলিশ-র‌্যাব সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, শনিরআখড়া, গুলিস্তান ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। তবে এসব এলাকায় অবরোধের সমর্থনে কোনো মিছিল-পিকেটিং করতে দেখা যায়নি।

সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের একটি বাসের সুপারভাইজার মো. দুলাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, চারিদিকে যেভাবে বাস পোড়ানো হচ্ছে সে ভয়ে ভোর থেকে একটি বাসও এখান থেকে ছেড়ে যায়নি। বেলা বাড়লে পরিস্থিতি দেখে হয়তো বাস ছাড়তে পারে। একই জায়গায় কথা হয়, কুমিল্লাগামী যাত্রী তবারক হোসেনের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভোরে এখানে এসেছি। বাড়ি যেতে হবে। কিন্তু কোনো বাস যেতে চাচ্ছে না। কি আর করা, এখন লোকাল বাসে ভেঙে ভেঙে যেতে হবে।

শনির আখড়ায় কথা হয় শামীম আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেলে ইলেকট্রিক্যাল বিভাগে চাকরি করি। আমাদের তো অফিস করতেই হবে। এ কারণে বাসা থেকে বের হয়েছি।

যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে ৭০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া র‌্যাব সদস্যরাও সেখানে আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা জলকামান, এপিসি নিয়ে প্রস্তুত আছি। তবে এখন পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতকে মাঠে দেখা যায়নি।

সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বিএনপি-জামায়াত ও বিরোধী দলগুলোর দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। তিন দিনের এ অবরোধ কর্মসূচি চলবে ২ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত।

শনিবারের মহাসমাবেশ পণ্ড এবং সেখানে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে রোববার (২৯ অক্টোবর) সারা দেশে বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যার হরতাল পালিত হয়েছে। রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঘোষণা করেন, ৩১ অক্টোবর (মঙ্গলবার) থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত টানা অবরোধ পালন করবে বিএনপি ও এর শরিক গণতন্ত্র মঞ্চ।

তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে হামলা, নেতা-কর্মীদের হত্যা, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আন্দোলনরত বিভিন্ন দলের সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি হয়রানি ও নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি আদায়ে এ কর্মসূচি পালন করা হবে।

অন্যদিকে, সোমবার (৩০ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে সারা দেশে তিন দিনের (৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর) সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তবে তিন দিনের এ কর্মসূচি কীভাবে পালন করা হবে তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানায়নি বিএনপি কিংবা অন্যান্য দল।

গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ-বিএনপির সংঘর্ষের পর ২৯ অক্টোবর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আটক করা হয়। এরপর থেকে এক প্রকার আত্মগোপনে চলে যান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতারা।

বিএনপি নেতারা বলছেন, কখনও কখনও আত্মগোপনে চলে যাওয়াটাও আন্দোলনের কৌশল। কারণ এখন আত্মগোপনে থাকলেও নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করতে পারছেন। অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া যাচ্ছে। কিন্তু প্রকাশ্যে থাকলে গ্রেপ্তার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তখন আর কিছুই হবে না। তবে, খুবই শিগগিরই নেতারা আবার প্রকাশ্যে আসবেন এবং রাজধানীতে আন্দোলন গড়ে তুলবেন।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, অবরোধ কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে সংবাদপত্রের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, অক্সিজেন সিলিন্ডার গাড়ি ও জরুরি ওষুধ পরিবহন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে। সেই নির্দেশনা দেওয়া আছে। কোথায় এবং কীভাবে অবরোধ কর্মসূচি পালিত হবে, সেটা এখন বলতে চাই না।

এর বাইরে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট ও গণঅধিকার পরিষদ বিজয় নগর ও প্রেস ক্লাব এলাকায় অবরোধ কর্মসূচি পালন করবে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে, জামায়াত মঙ্গলবার ভোরের দিকে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধের সমর্থনে মিছিল করতে পারে বলে জানা গেছে।

এমএইচডি/এসএম