শ্রমিকদের খেপিয়ে তোলার জন্য বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তিন দিন আগে একটি বিবৃতি দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ও আওমামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান।

সোমবার (৩০ অক্টোবর) সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন কথা বলেন। তৈরি পোশাক খাতের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে এ সংবাদ ব্রিফিংয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজন সুফিয়ানও উপস্থিত ছিলেন।

শাজাহান খান বলেন, গাজীপুরের পোড়াবাড়িসহ কয়েকটি জায়গায় গত তিন-চারদিন ধরে একটা অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে, আজ আরও ব্যাপ্তি ঘটেছে। ন্যূনতম মজুরি বোর্ড এখন পর্যন্ত চারটি সভা করেছে। তারাও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। তারা একটি সিদ্ধান্ত নিলে পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দেন বলে আমরা অতীতে দেখেছি। আসলে অনেকেই ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন। তার দৃষ্টান্ত হলো যে শ্রমিকদের খেপিয়ে তোলার জন্য বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তিন দিন আগে একটি বিবৃতি দিয়েছেন যে একুশ হাজার টাকা মজুরি দিতে হবে। 

তিনি বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, মজুরি নির্ধারণের জন্য ১৯৮৪ সালে মজুরি কাঠামো করা হয়েছিল। তখন ৫৭০ টাকা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা ছিল। তার ১০ বছর পর ১৯৯৪ সালে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ৯৩০ টাকা মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, এই ১০ বছরে কয় টাকা বেড়েছে আপনারা একটু হিসাব করে দেখুন। এরপর ২০০৬ সালে সেই ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হলো ১৬৬২ টাকা। তাদের সময়ে ২২ বছরে বেড়েছিল এক হাজারের বেশি কিছু টাকা। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতায় এলেন, তিনি শ্রমজীবী মানুষকে ভালোবাসেন। ২০০৬ সালের পরে ২০১১ সালে এসে মজুরি নির্ধারণ হওয়ার কথা। কারণ পাঁচ বছর পরে মজুরি বোর্ড হবে, সেই বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে বলে আইনে বলা আছে। কিন্তু শেখ হাসিনা এক বছর আগেই ২০১০ সালে ন্যূনতম মজুরি করে দিলেন তিন হাজার টাকা। এরপর তিন বছর যেতে না-যেতেই বাড়িয়ে দিলেন পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা। 

এরপরে ২০১৮ সালে এসে করলেন ৮ হাজার টাকা। কেবল হিসাব মেলাতে বলবো, বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে কত টাকা বেড়েছিল? তারা আজ ২১ হাজার টাকা চেয়েছেন, কোন চেয়েছেন? রাজনৈতিক ফায়দা লুটতেই তারা এ কাজটি করেছেন। শ্রমিকদের মধ্যে বিভ্রান্তি অসন্তোষ সৃষ্টি করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে তারা এ বিবৃতি দিয়েছেন, বলেন তিনি।

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের সময় তিন বার শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো হলেও মির্জা ফখরুলরা কোনো বিবৃতি দেননি। আজ তাদের এতো মায়া কান্না কেন? শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই, আপনাদের নিশ্চয়ই ভুলে যাওয়ার কথা না, ২০১৩ সালে যখন শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করতে বিএনপি মরিয়া হয়ে ওঠে, তখন তারা পেট্রোল বোমা দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। ক্ষমতায় থাকতে খালেদা জিয়া সরকার পবিত্র রমজান মাসে বস্ত্রকল ও পাটকল শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনার দাবিতে আন্দোলন দমন করতে ১৭ শ্রমিককে হত্যা করে। এক বছর যেতে না যেতেই কৃষকরা যখন সারের জন্য আন্দোলন করছিল, তখন ১৮ কৃষককে গুলি করে হত্যা করে।

শাজাহান খান বলেন, বিএনপি আবারও শকুনের তীব্র থাবা দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। গার্মেন্টসে দীর্ঘদিন কোনো জ্বালাও-পোড়াও ভাঙচুর হয়নি। নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চাচ্ছে তারা। 

শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে আপনাদের শান্ত থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনাদের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য মজুরি নির্ধারণের ব্যবস্থা করবেন। মজুরি এখনো নির্ধারণ হয়নি। এখনো অনেক সময় আছে। আমি আপনাদের আশ্বাস দিতে পারি, আমরা একটি গ্রহণযোগ্য মজুরি নির্ধারণ করতে পারবো।

এসএইচআর/এসএম