বিএনপির সমাবেশ ঘিরে শনিবার ঢাকায় যে রাজনৈতিক সহিংসতা সংঘটিত হয়েছে তা বিদেশি কূটনীতিকদের জানিয়েছে সরকার। পাশাপাশি বিএনপির সংশ্লিষ্টতায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হিসেবে পরিচয় দেওয়া মিঞা জাহিদুল ইসলাম আরেফীর কর্মকাণ্ডের কথাও কূটনীতিকদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে।
  
সোমবার (৩০ অক্টোবর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ঢাকায় বিদেশি কূটনৈতিক মিশন, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের ‘২৮ অক্টোবর’ নিয়ে ব্রিফ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ব্রিফিংয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন, যুক্তরাজ্য, পাকিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, স্পেন, সিঙ্গাপুর, কানাডা, জার্মানি, ইতা‌লি, ফ্রান্স, রা‌শিয়া, জাপান, নেদারল্যান্ডস, সুই‌ডেন, সুইজারল্যান্ড, ব্রা‌জিল, অ‌স্ট্রেলিয়া, মাল‌য়ে‌শিয়া, ইইউ, জা‌তিসংঘ, ওআই‌সি, বিমস‌টেকসহ জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

ঢাকার পক্ষে ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহ‌রিয়ার আলম, পররাষ্ট্রস‌চিব মাসুদ বিন মো‌মেন ।

পরে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রার নাম নিয়ে অপজিশন পার্টি বিএনপি যেসব সংঘাত-সহিংসতা করেছে আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই এবং তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা দরকার। গত কয়েকদিনে তারা যা করেছে, তার মূল উদ্দেশ্য নির্বাচন যেন অবাধ ও সুষ্ঠু না হয়। নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য তারা এ ধরনের অপকর্ম করেছে। আমরা সেজন্য বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের ডেকেছি। তাদের বলেছি, ২৮ তারিখে এখানে কী হয়েছে। প্রেডিসেডন্ট বাইডেনের মিথ্যা উপদেষ্টা হিসেবে একজনকে নিয়ে কী কী করা হয়েছে, সেটাও তুলে ধরেছি।

এসময় বিএনপিকে নির্বাচনে আসার অনুরোধ জানান ড. মোমেন। তিনি বলেন, আমরা তাদের (বিএনপি) অনুরোধ করব, আপনারা নির্বাচনে আসেন। নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়। আমরা আমাদের শাসনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন করব। সহিংসতা করে সরকার পতনের যে চেষ্টা, এটা অলীক।

এরপর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সে ব্যাপারে আমরা কূটনীতিকদের পুনর্ব্যক্ত করেছি। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। কূটনীতিকদের কোনো প্রশ্ন আছে কি না জানতে চাওয়া হয়েছে। তবে তারা ব্রিফিংয়ে কোনো প্রশ্ন করেননি।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, আমরা ২৮ তারিখে যেসব ঘটনা ঘটেছে, ওইদিন তাৎক্ষণিক যেসব ফুটেজ পাওয়া গেছে, সেগুলো বিদেশি মিশনগুলোতে পাঠিয়েছি। আজকে আবার তাদের সহিংসতার ভিডিও ফুটেজ ছবিসহ নানা ডকুমেন্ট দেখানো হয়েছে।

বিদেশি কূটনীতিকদের বক্তব্য কী ছিল— জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম বলেন, তাদের অভিব্যক্তি দেখে বোঝা গেছে, তারা এসব দেখে খুব অবাক হয়েছেন।

নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হলে বর্তমানে যে প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে, সেটা মেনেই অংশগ্রহণ করতে হবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের তথাকথিত উপদেষ্টার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেন, কথিত মার্কিন উপদেষ্টার জন্য কনস্যুলার অ্যাক্সেস চেয়েছে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস।

২৮ অক্টোবর রাজনৈতিক সহিংসতার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন আলাদাভাবে এবং পরদিন বিদেশি সাতটি মিশন একসঙ্গে যৌথ বিবৃতি দেয়। এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সাতটি মিশন মিলে যে বক্তব্যটি দিয়েছে, সেটি অতীতে তারা যে বিবৃতি দিয়েছিল সেটির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ধারাবাহিকতার অভাব আছে। তারা যেন ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন এ বিষয়টি তাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছি। কিন্তু তার পরিপ্রেক্ষিতেও তারা কিছু বলেননি।

শাহরিয়ার আলম বলেন, বিবৃতি না দেওয়াটাই প্রথা কূটনীতিতে। কারণ আমরা মনে করি, এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এখানে কিছু কিছু রাষ্ট্র আগ বাড়িয়ে অতীতে একটি চল করেছে যে তারা বিবৃতি দেবে কিছু হলে। তার মানে এই না যে আমরা একই ধরনের বিবৃতি অন্য দেশের কাছ থেকে আশা করছি। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কিছু বলাটা প্রথা নয়।

এনআই/এমএ