বিএনপিকর্মীদের হামলায় গতকাল শনিবার অনেক সাংবাদিক আহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় সাংবাদিকদের সোচ্চার হতে বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। 

সাংবাদিকদের পিটিয়ে আহত করার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি তো মনে করি আপনারা (সাংবাদিক) সে ব্যাপারে সোচ্চার হবেন, যেসব সাংবাদিক আহত হয়েছেন তারা নিশ্চয়ই সোচ্চার হবেন এবং মামলা দেবেন, আমরা সব মামলা নেব।

রোববার (২৯ অক্টোবর) সচিবালয়ে নিজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে  তিনি এ কথা বলেন।

এখন পর্যন্ত কতগুলো মামলা হয়েছে— জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মামলা তো শুরু হয়েছে। মামলা অনেকেই দেবে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা মামলা দেবে। সাংবাদিকরা মামলা দেবে। পুলিশ হাসপাতাল মামলা দেবে। পুলিশ স্বপ্রণোদিত হয়ে যেগুলো দেওয়ার সে মামলা দেবে। মামলা শুরু হয়েছে। আমরা সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে তাদের নামে মামলা দেব।

বিভিন্ন মামলায় রোববার দুপুর পর্যন্ত পুলিশ কতজনকে গ্রেপ্তার করেছে— জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এই মুহূর্তে আমার কাছে এ তথ্য নেই। আমি আপনাদের পরে জানাতে পারব।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঘটনা অনেকগুলো ঘটেছে। প্রধান বিচারপতির বাড়ি অ্যাটাক করেছেন, বাড়িতে ঢুকে গিয়েছেন, এ মামলা তো হবেই। আমরা শনাক্ত করছি, যারা যারা এখানে ঢুকেছিলেন, যার যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাদেরকে অবশ্যই আইনের মুখোমুখি হতে হবে।

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে যারা অগ্নিসংযোগ করেছেন তাদের নামে মামলা হবে। যতগুলো গাড়ি পুড়িয়েছেন, এস আলমের একটি গাড়ি পুড়িয়েছে তার মামলা হবে। পুলিশ হাসপাতালে যারা ঘটনাটি ঘটিয়েছেন তাদের নামে মামলা হবে। পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন।

তিনি বলেন, আরেকজন পুলিশ আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন, সেও জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন। দুইজন আনসার সদস্যও গুরুতর আহত। আমার জানামতে শতাধিক পুলিশ বিভিন্নভাবে আহত হয়েছেন, বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আনসার বাহিনী হাসপাতালে রয়েছে। আওয়ামী লীগের নারীদের কর্মীদের তারা পিটিয়েছেন, গায়ে হাত তুলেছেন তারাও হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

মির্জা ফখরুলসহ যাদের আটক করা হয়েছে, সুনির্দিষ্ট কোনো মামলায় আটক করা হয়েছে কিনা— সেই প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা মিটিং করছিল। যখন মিটিংয়ে বসেছিলেন তখনই ঘটনগুলো ঘটছে। তাহলে এর দায় কি তারা এড়াতে পারেন? 

আসাদুজ্জামান খান বলেন, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে আক্রমণ হলো, পুলিশ আহত হলো, পুলিশের তিনটি অস্ত্র তারা জোর করে নিয়ে গেছে, এর দায় কি তারা এড়াতে পারবেন? এটা বিচার বিভাগ দেখবেন, আমরা তাদের সম্মুখে নিয়ে যাচ্ছি। আইন অনুযায়ী বিচার বিভাগ দেখবেন।  

শনিবার বিএনপি নাশকতা করতে পারে বলে গোয়েন্দা রিপোর্ট ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, তারা গাড়ি পোড়াবে, মানুষ মারবে এ ধরনের বিশ্বাস করতে পারি না। আমরা কি বিশ্বাস করতে পারি একটি সভ্য মানুষ একজন পুলিশকে হত্যা করবে? আমাদের বিশ্বাস ঘটিয়ে দিল তারা কতখানি নৃশংস, কতখানি বর্বর। 

শনিবারের ঘটনার পরম্পরা তুলে ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারাই (বিএনপি) এ সমস্ত নাশকতা করে, সহিংসতার বিস্তার করার জন্য ঘটনাগুলো ঘটিয়েছেন। ২০১৪ সালে আমরা দেখেছি কীভাবে মানুষ পুড়িয়েছে। এ ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে আমরা জনসাধারণকে রক্ষা করার জন্য পুলিশ বাহিনী ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করছে।

যে ছাত্রদল নেতার আঘাতে পুলিশ মারা গেছে, তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি কেন, এ প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অ্যারেস্ট করার চেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। যারা ক্যামেরা কিছু ভেঙে ফেলেছে, অকার্যকর করে দিয়েছে, তারপরেও আমাদের অনেক ধরনের ক্যামেরা ছিল, ক্যামেরার মাধ্যমে আমরা যাদেরকে চিহ্নিত করব তাদেরকে আমরা অবশ্যই আইনে হাতে সোপর্দ করব। 

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তারা সেখানে অবস্থান নিয়েছিল, আমরা তাদের কিছু বলিনি। আমরা সবই ধৈর্যসহকারে মোকাবিলা করেছি।

এসএইচআর/এমএ