রাজধানীর মহাখালীতে খাজা টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ভবনের ভাড়াটিয়ারা।

এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে ১৪তলা এ ভবনে আগুন লাগে। পরে আগুন নেভাতে পর্যায়ক্রমে যোগ দেয় ফায়ার সার্ভিসের ১২ ইউনিট। এছাড়া ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা করে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়াও সাত প্লাটুন আনসার সদস্য ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়। এরপর প্রায় আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। 

আগুন নেভানোর সার্বিক বিষয়গুলো কাছ থেকে দেখেছেন ভবন ভাড়া নেওয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মীরা। 

তাদের তথ্য মত, ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট সবাই দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলক কম হয়েছে।

খাজা টাওয়ারের সাতটি ফ্লোর ভাড়া নিয়ে অফিস পরিচালনা করে আসছিল সাইফ পাওয়ার টেক নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তরফদার মোহম্মাদ রুহুল আমিন বলেন, আগুন নেভাতে সংশ্লিষ্টরা তাৎক্ষণিকভাবে কাজ করেছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা অনেকটা কম হয়েছে। 

তিনি বলেন, নিজস্ব অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা থাকায় আমাদের অফিসগুলোতে আগুন বেশি ছড়াতে পারেনি। আমরা এসব যন্ত্রগুলো প্রতি মাসেই ট্রায়াল দেই। এছাড়া আমাদের নিজস্ব টিম আছে যারা অগ্নি নির্বাপন বিষয়ে বছর জুড়েই ট্রায়াল কাজ করেন। 

তিনি বলেন, এই ক্ষতি রিকভার করে কবে নাগাদ আমাদের অফিস চালু করতে পারবো তা এখনো বলা যাচ্ছে না। আমাদের কোম্পানির একাউন্টস ডিপার্টমেন্ট পুরোটাই পুড়ে গেছে। অন্যান্য অফিসগুলোও অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের বেশি ক্ষতি হয়েছে; কিন্তু আমাদের নিজস্ব অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা না থাকলে এই ক্ষতি আরও বেশি হতো।

তিনি আরও বলেন, অগ্নিকাণ্ডে মোট তিনজনের মধ্যে আমাদের অফিসের একজন সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার মারা গেছেন। এছাড়া আমাদের অনেক কর্মী এখনো হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ভবন মালিকের পক্ষ থেকে অগ্নি নির্বাপনের কতটুকু ব্যবস্থা ছিল তা সঠিক জানি না। চল্লিশটার মতো ফায়ার এক্সটিংগুইশার আমরা রানিজেরাই ব্যবহার করেছি। 

এদিকে এই ভবনের সেবা টেকনোলজি নামক একটি প্রতিষ্ঠানের সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার তানভির মোঘল অগ্নিকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে বলেন, সে সময় পুরো ভবনে ধোঁয়া ছিল আর কিছুক্ষণ পরেই বিদ্যুৎ চলে গেলে পুরোটাই অন্ধকার হয়ে যায়। এই অন্ধকারের মধ্যেই ইমার্জেন্সি সিঁড়ি দিয়ে আমরা তাড়াহুড়ো করে নেমে আসি। অন্ধকারের কারণে অনেকে বারবার পড়ে যাচ্ছিলেন আবার অনেকে পাশের বিল্ডিংয়ে লাফ দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। 

তিনি বলেন, তবে এত ভয়বাহ অগ্নিকাণ্ডের মধ্যেও ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যরা খুব দ্রুত আগুন নেভাতে কাজ করেছেন। তা করা না গেলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তো। আমরা এখন আমাদের অফিসের ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করছি, ক্ষয়ক্ষতির বিষয়গুলো দেখতে, কিন্তু এই টাওয়ারে এখন কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। 

এদিকে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত মহাখালীর খাজা টাওয়ারে নিরাপত্তার স্বার্থে কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না পুলিশ।

শুক্রবার সকাল থেকে এই টাওয়ারের সামনে নিরাপত্তার স্বার্থে অবস্থান নিয়েছে বনানী থানা পুলিশের একটি দল। তারা এই ভবনের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। 

শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) সকালে ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (মিডিয়া সেল) মো. শাহজাহান শিকদার জানিয়েছেন, মহাখালীর খাজা টাওয়ারের আগুন সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে সম্পূর্ণরুপে নির্বাপণ হয়েছে।
 
এএসএস/এমএসএ