‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ ব্যবহার করে নদীর তলদেশ দিয়ে কয়েক মিনিটে পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা, আবার আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গায় যাতায়াত করা যাবে। ধীরে ধীরে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ হিসেবে গড়ে উঠবে চট্টগ্রাম। ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের এ মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। এরপর নদীর তলদেশ দিয়ে রোমাঞ্চকর যাত্রার স্বাদ নিতে পারবেন জনসাধারণ।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, টানেল উদ্বোধনের পর যাতায়াত সুবিধার কারণে দক্ষিণ চট্টগ্রামে গড়ে উঠবে কলকারখানা। ইতোমধ্যে বড় বড় শিল্পগ্রুপ সেখানে বিনিয়োগ শুরু করেছে। তারা কারখানা স্থাপনের জন্য জায়গা কিনেছে। ফলে কর্মসংস্থান হবে বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর। টানেল উদ্বোধনের পর দু-এক বছরের মধ্যে দক্ষিণ চট্টগ্রামে দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ ছাড়া, কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সাল নাগাদ সেটি চালু করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। এটি চালু হলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে যানবাহনের চাপ বাড়বে। এ ছাড়া, কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে গড়ে উঠেছে বিদ্যুৎকেন্দ্র। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে দেশের বেসরকারি সবচেয়ে বড় কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হয়েছে। এসব প্রকল্প ঘিরে টানেল দিয়ে গাড়ির চাপ বাড়বে, যা বিদ্যমান চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক দিয়ে সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না।

টানেল উদ্বোধনের পর যাতায়াত সুবিধার কারণে দক্ষিণ চট্টগ্রামে গড়ে উঠবে কলকারখানা। ইতোমধ্যে বড় বড় শিল্পগ্রুপ সেখানে বিনিয়োগ শুরু করেছে। তারা কারখানা স্থাপনের জন্য জায়গা কিনেছে। ফলে কর্মসংস্থান হবে বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর। টানেল উদ্বোধনের পর দু-এক বছরের মধ্যে দক্ষিণ চট্টগ্রামে দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম টানেলের যুগে প্রবেশ করছে। এর মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ‘ভিশন ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে উঠবে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাড়ে তিন হাজার একর জায়গায় ইকোনমিক জোন হচ্ছে। মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর হচ্ছে। এর সঙ্গে টানেল দিয়ে চট্টগ্রাম সংযুক্ত হচ্ছে। কানেক্টিভিটির কারণে অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। পদ্মা সেতু জিডিপিতে ১ শতাংশ অবদান রেখেছে। টানেল জিডিপিতে ১ শতাংশের কম অবদান রাখবে।

কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সাল নাগাদ সেটি চালু করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। এটি চালু হলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে যানবাহনের চাপ বাড়বে। এ ছাড়া, কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে গড়ে উঠেছে বিদ্যুৎকেন্দ্র। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে দেশের বেসরকারি সবচেয়ে বড় কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হয়েছে। এসব প্রকল্প ঘিরে টানেল দিয়ে গাড়ির চাপ বাড়বে, যা বিদ্যমান চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক দিয়ে সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না

তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ করতে হবে। এ ছাড়া, বর্তমান চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চার লেন করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার একটি এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করতে হবে। এটাই হবে সবচেয়ে বড় গেম চেঞ্জার। এক্সপ্রেসওয়ে হলে সময় ও খরচ দুটিই বাঁচবে।

এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুবুল আলম বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামে আগে বড় ধরনের অবকাঠামো ছিল না। এ কারণে আগে থেকে কোনো কারখানা গড়ে ওঠেনি।

তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী বিনিয়োগ করার জন্য তাকিয়ে আছে। সেখানে ইকোনমিক জোন করা হচ্ছে চীনকে দেওয়ার জন্য। মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর হচ্ছে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ছাড়া এ গভীর সমুদ্রবন্দরের পুরোপুরি সুফল পাওয়া যাবে না। টানেল এক্ষেত্রে বিশাল সহযোগী হিসেবে কাজ করবে। সেই সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রাম অনেক দিন অবহেলিত ছিল। একটি সিটিতে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’– এ কনসেপ্টে টানেল হয়েছে। ফলে একদিকে সাধারণ জনগণের জীবনমান উন্নত হবে, অন্যদিকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে।

তিনি বলেন, টানেলের কার্যক্রম যখন শুরু হয়েছে তখন থেকেই সেখানে ব্যবসায়ীরা জায়গা কেনা শুরু করেছেন। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দাভাব শুরু হয়েছে। এর প্রভাবের কারণে হয়তো এখনও সেভাবে কলকারখানা গড়ে ওঠেনি। কিন্তু মন্দাভাব কেটে গেলে নতুন করে দক্ষিণ চট্টগ্রামে কলকারখানা স্থাপন শুরু হবে। শুধু টানেল করলে হবে না, সড়কগুলো চার লেনের করতে হবে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক ছয় লেনের করতে হবে। তা না হলে বিপুল টাকা বিনিয়োগ করেও গভীর সমুদ্রবন্দর ও টানেলের সুফল পাওয়া যাবে না।

জানা গেছে, নির্মাণের আগে করা সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী টানেল চালুর পর এর ভেতর দিয়ে বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারবে। সে হিসাবে দিনে চলতে পারবে ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি। ২০২৫ সাল নাগাদ টানেল দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলাচল করবে। যার মধ্যে অর্ধেক থাকবে পণ্যবাহী পরিবহন। ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন গড়ে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি এবং ২০৬৭ সাল নাগাদ এক লাখ ৬২ হাজার যানবাহন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে এ টানেল দিয়ে।

টানেল নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে চার হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। বাকি পাঁচ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে চীন সরকার। চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ হারে ২০ বছর মেয়াদি এ ঋণ দিয়েছে। চীনের কমিউনিকেশন ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) টানেল নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

এমআর/এসএসএইচ