আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৪৮-১৬৬টি আসন পেয়ে আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বলে মনে করে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।

নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক ধরে নিয়ে সমিতি মনে করে, নির্বাচনের সম্ভাব্য ফলাফল বিন্যাসে আওয়ামী লীগের পক্ষে সরকার গঠনের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি—তা জোটবদ্ধ তো বটেই এককভাবেও হতে পারে। অন্যদিকে বিএনপির পক্ষে সরকার গঠন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

আজ (বৃহস্পতিবার) অর্থনীতি সমিতির অডিটরিয়ামে ‘ভোটারের মন ও আসন্ন ২০১৪ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য ফলাফল’ শীর্ষক প্রেস কনফারেন্সে সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত এসব তথ্য উপস্থাপন করেন। সেমিনারে সূচনা বক্তব্য রাখেন অর্থনীতির সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম।

মূল প্রবদ্ধ উপস্থাপনকালে আবুল বারকাত বলেন, ৩০০ আসনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পেতে পারে ১৪৮- ১৬৬টি আসন, বিএনপি ১১৯-১৩৭টি আসন এবং অন্যান্য দলের ১৫টি আসনের মধ্যে জাতীয় পার্টি ১১টি, জামায়াতে ইসলামী ২টি, এলডিপি ১টি, বিজেপি ১টি আসন পাবে। নির্বাচনের সম্ভাব্য ফলাফল বিন্যাসে আওয়ামী লীগের পক্ষে সরকার গঠনের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। তা জোটবদ্ধও হতে পারে আবার এককভাবেও হতে পারে। আওয়ামী লীগকে জোটবদ্ধ সরকার গঠন করতে হলে জাতীয় পার্টির সাথে জোট করতে হবে।

অন্যদিকে বিএনপির পক্ষে সরকার গঠন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বিএনপির পক্ষে জোটবদ্ধ সরকার গঠনের একটি পাটিগাণিতিক সম্ভাবনা আছে। যে সম্ভাবনা অনেক বেশি শর্তসাপেক্ষ বিধায় দুর্বল। শর্তগুলো হলো (১) বিএনপিকে পেতে হবে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সংখ্যাক আসন (১৩৭টি আসন) (২) জোট করতে হবে জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, বিজেপি এবং এলডিপির সাথে, (৩) আওয়ামী লীগকে তার সম্ভাব্য সর্বনিম্নসংখ্যাক আসনের (১৪৮ আসন) বেশি পাওয়া চলবে না।

তিনি বলেন, আসন্ন ২০২৪ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার প্রায় ১২ কোটি। এসব ভোটারের ৭০ শতাংশই দলীয় অনুগত ভোটার—এসব ভোটার তাদের অনুগত দলে ভোট দেবেন। এসব ভোট হলো দলের জন্য ভিত্তি ভোট। মোট ভোটে দলীয় অনুগত ভোটের অনুপাত: ৩০ শতাংশ আওয়ামী লীগ, ৩০ শতাংশ বিএনপি, ১০ শতাংশ অন্যান্য দল। দলীয় অনুগত ভিত্তি ভোটের বাইরে বাকি ৩০ শতাংশ ‘দলীয় অনুগত নন।’ এসবই হলো ‘দোদুল্যমান ভোট,’ এরা কাকে ভোট দেবেন, তা পূর্বনির্ধারিত নয়। দেশের ৩০০টি সংসদ আসনের মধ্যে ১৫৫টি আসনের ভাগ্য মোটামুটি নির্ধারিত বলা চলে। এসবই হলো ‘ভিত্তি আসন’ বা ‘সম্ভাব্য বিজয়-নিশ্চিত আসন’। এ ১৫৫টি আসনের মধ্যে ৭০টি আসন পাবে আওয়ামী লীগ, ৭০টি আসন পাবে বিএনপি, আর বাকি ১৫টি আসনের মধ্যে জাতীয় পার্টি ১১টি, জামায়াতে ইসলামী ২টি, এলডিপি ১টি, বিজেপি ১টি। 

মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি—উভয়েরই ৭০টি করে ‘ভিত্তি আসন’ আছে। দুটি দলের মধ্যে যেকোনো দলের জন্য সরকার গঠনের জন্য আরও ৮১টি আসন প্রয়োজন। তা পেতে হলে দুই বড় দলকে নির্ভর করতে হবে ‘দোদুল্যমান ভোটারদের’ ভোটের ওপর। এবারে দোদুল্যমান ভোটারদের ভোট প্রদান সিদ্ধান্তে ৫টি অবজেক্টিভ ফ্যাক্টর ও সংশ্লিষ্ট কাউন্টার-ফ্যাক্টর কাজ করবে বলে মনে হয়। তা হলো: দ্রব্যমূল্য, মানব নিরাপত্তা, পদ্মা সেতু, ২০১৮ সালের নির্বাচন এবং স্যাংশন।

বারকাত বলেন, ‘পদ্মা সেতু’ ও ‘স্যাংশন’ ফ্যাক্টর দুটি আওয়ামী লীগের ভোট কৌশলে কাজে লাগাবে, বিএনপি কাজে লাগাবে অন্য ৩টি ফ্যাক্টর— দ্রব্যমূল্য, ২০১৮ সালের নির্বাচন ও মানব নিরাপত্তা। একই সাথে প্রভাবক হিসেবে কয়েকটি সাবজেক্টিভ ফ্যাক্টরও কাজ করবে যেমন— আত্মীয়তা, বন্ধুবান্ধব, ঘনিষ্টজন, মুরুব্বিদের উপদেশ আদেশ-নির্দেশ, পিতৃতান্ত্রিকতা (নারীর ক্ষেত্রে)।

দেশের দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের ৬৮টি আসনের মধ্যে ২৩টি ‘বিজয়-অনিশ্চিত আসন’। এসব আসনে ‘পদ্মা সেতু ফ্যাক্টর’ কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগ দোদুল্যমান ভোটারদের ৬০ শতাংশ রায় পেতে পারে। ফলে এই অঞ্চলে আওয়ামী লীগের কমপক্ষে ২৫টি ভিত্তি আসনের সাথে আরো ২৩টি আসন যোগ হয়ে তাদের মোট আসনসংখ্যা দাঁড়াতে পারে কমপক্ষে ৪৮টি।

দেশের দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের বাইরে— ঢাকাসহ পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর অঞ্চলে যে ২৩২টি আসন আছে, তার মধ্যে ১২২টি আসনে ‘বিজয়- অনিশ্চিত আসন’—জয়-পরাজয়ে দোদুল্যমান ভোটারদের ভোট নিয়ামক ভূমিকায় থাকবে। এসব আসনে দোদুল্যমান ভোটারদের ৪৫-৬০ শতাংশ ভোট পেতে পারে আওয়ামী লীগ আর বিএনপি পেতে পারে ৪০-৫৫ শতাংশ। এই ১২২টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ জয়ী হতে পারে ৫৫-৭৩টি আসনে আর বিএনপি জয়ী হতে পারে ৪৯-৬৭টি আসনে।

আরএম/এনএফ