নির্বাচন কমিশনকে উদ্দেশ করে ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেছেন, কারও কোনো কথা শুনবেন না, ব্যালট পেপার সকালে পাঠাবেন।

আজ (বৃহস্পতিবার) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সভাকক্ষে ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন : গণমাধ্যমের ভূমিকা, জাতির প্রত্যাশা’ শীর্ষক  আয়োজিত সংলাপে তিনি এ কথা বলেন।

নির্বাচন কমিশনের ওপর মানুষের আস্থা কম, এটা আপনাদের দোষ না— এমন মন্তব্য করে মাহফুজ আনাম বলেন, জনগণ আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে। সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য আপনাদের যা যা করণীয় আপনারা তা করেন। আমরা গণমাধ্যম কর্মীরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমরা একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের পিলার। আপনারা তা রক্ষায় কাজ করবেন। আমার অনুরোধ ফজরের পর ব্যালট পাঠাবেন। কারও কোনো কথা শুনবেন না। ব্যালট পেপার সকালে পাঠাবেন। অতীতে নির্বাচন কমিশন কী করেছে তার থেকে ধারণা নিয়ে আপনারা নির্বাচন করবেন।

নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, আমাদের যে ধারণাপত্র দিয়েছেন সেখানে বলা হয়েছে যে অবাধ, নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য যে অনুকূল পরিবেশ প্রত্যাশা করা হয়েছিল, সেটি এখনও হয়ে ওঠেনি। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, প্রত্যাশিত সংলাপের মাধ্যমে মতভেদের নিরসন হয়নি। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধানতম দু’দল স্ব স্ব সিদ্ধান্তে অনড়। আমার কথা হলো যদি আপনারা মনে করে থাকেন এখনও অনুকূল পরিবেশ হয়নি, সেটা এক ধরনের সাংঘর্ষিক কি-না। কারণ আপনারা তফসিল ঘোষণার দিকে যাচ্ছেন। হয়তো আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে তফসিল হতে পারে। যখন তফসিল ঘোষণার পূর্ব মুহূর্তে এই ধরনের বক্তব্য আসে, তখন রাজনৈতিক দলগুলো যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, এর প্রেক্ষিতে তাদের মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

তাহলে আমার প্রশ্ন হলো যে, আপনাদের ভূমিকাটা আরও স্পষ্ট করতে হবে। কী কারণে এখনও অনুকূল পরিবেশ হয়ে ওঠেনি। অনুকূল পরিবেশ না হলে নির্বাচন করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে কি-না এবং অংশগ্রহণমূলক হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা কি না? কারণ সাংঘর্ষিক অবস্থান থেকে, এই একটি বক্তব্য থেকে কোনো একটি দল বলতে পারে, আমি কেন নির্বাচনে আসবো, কী কারণে আসতে হবে। আমার কী করণে আসতে হবে?

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন একটা সর্বোচ্চ ক্ষমতার জায়গা। একটা আস্থার জায়গা। একজন ভোটে অংশগ্রহণ করবে তখনই, যখন মনে করবে নির্বাচন কমিশন আমাদের অবাধ স্বাধীনতা দিতে সক্ষম হবে এবং ভোটের পরিবেশ সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে। পরিবেশই যদি তৈরি না হয়, আপনারা কিভাবে নির্বাচনটা করবেন।

ভোটকক্ষের ভেতর থেকে সরাসরি সম্প্রচারের গুরুত্বের বিষয়টি তুলে ধরে নঈম নিজাম বলেন, ভোটকক্ষে কেউ যদি কখনো ভেতরে গিয়ে ভোট বাধাগ্রস্ত করে, ভোটারদের জোর করে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে, সেখানে যদি সাংবাদিক, টেলিভিশন মিডিয়াকর্মী উপস্থিত থাকে, তিনি যদি তাৎক্ষণিক সম্প্রচারে চলে যান, তাহলে কি আপনারা আইনগত ব্যবস্থা নেবেন? নাকি এটুকু করতে দেওয়া হবে। সংবাদকর্মী যখন লাইভ করবে তখন কিন্তু ভয় করবে, সে (দুষ্কৃতকারী) কিন্তু ওখানে যাবে না। এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। যেহেতু আপনারা বলছেন পরিবেশ নেই, সেহেতু সাংবাদিকরা কিন্তু ভালো কাজ করতে পারে ভোটকক্ষের ভেতরে।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের যদি পর্যাপ্ত আইন থাকে সেটা কার্যকর আপনারাই করবেন। আপনারাই তো যে কোনো কাউকে বরখাস্ত করার ক্ষমতা রাখেন। যদি কোনো সরকারি কর্মকর্তা কথা না শোনে তার বিরুদ্ধে তো আপনারা ব্যবস্থাগ্রহণ করতে পারেন। সেখানে কিন্তু কোনো সংকট আমরা দেখি না। সেক্ষেত্রে অবাধ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করাটা নির্ভর করবে আপনাদের নিজেদের সক্ষমতা এবং আইনের প্রয়োগের ওপর। কারণ, ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার টিএন সেশন যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন তখন কিন্তু আমাদের মতোই একটা পরিস্থিতি ছিল। মন্ত্রীরা ডাকলেও নির্বাচন কমিশন চলে যেতো। ব্যক্তি যখন ক্ষমতা প্রয়োগের চেষ্টা করলেন, তিনি যখন কাউকেই তোয়াক্কা করলেন না, তিনি নিজের মতো করে...সেই সময় হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকে বরখাস্ত করে দিলেন। এটা নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দীর্ঘ বিরোধ হলো, তিনি সেই বিরোধ কনটেস্ট করলেন। জ্যোতি বসু পর্যন্ত তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তিনি বললেন যে টিএন সেশন একটি পাগলা কুকুর। কিন্তু তিনি জ্যোতি বসু বা কাউকেউ তোয়াক্কা করেননি। কিংবা লালুপ্রদাস যাদবকে তোয়াক্কা করেননি। আমাদের এখানে হয়তো সেই সক্ষমতার হয়তো সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু ক্ষমতার তো অভাব নেই, পর্যাপ্ত আইন আছে। পর্যাপ্ত আইনের প্রয়োগ করলেই তো অনেক কিছু সংকটের সমাধান হবে। তখনই দলগুলো অবাধে আসতে সক্ষম হবে, দলগুলো যখন দেখবে আইনের প্রয়োগ সঠিকভাবে হচ্ছে, আপনারা সক্ষমভাবে সব কিছু করছেন। আগেই যদি ভয় দেখিয়ে ফেলেন তাহলে তো হবে না।

এসআর/এনএফ