২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের উন্নয়নে সহায়তা করতে জিএসপি প্লাস (+) সুবিধা দেওয়ার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ইইউর সদর দপ্তরে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি যে ২০২৬ সালে বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণের পর আমাদের উন্নয়নে সহায়তার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে জিএসপি+ সুবিধা দেবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ইউরোপীয় কমিশনের চেয়ারম্যান উরসুলা ভন ডার লেয়েন ব্রাসেলসে ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে বুধবার (২৫ অক্টোবর) বাংলাদেশ সরকার ও ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (ইআইবি) মধ্যে ৩৫০ মিলিয়ন ইউরো অর্থায়ন চুক্তিসহ বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করেন।

শেখ হাসিনা বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশ যুদ্ধ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একসঙ্গে কাজ করতে চায়।

তিনি বাংলাদেশে সাময়িকভাবে আশ্রিত ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মানবিক সহায়তা দেওয়ার জন্য ইইউকে ধন্যবাদ জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্মভূমি মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনই এই সংকটের একমাত্র সমাধান। আমি দ্রুত এই সংকটের একটি টেকসই সমাধানের সঙ্গে যুক্ত থাকতে ইইউর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ বছর বাংলাদেশ-ইইউ’র অংশীদারিত্বের ৫০ বছর পূর্তি হয়েছে। আমরা খুশি যে— ইইউ এখন বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার।’ 

প্রধানমন্ত্রী তার প্রথম মেয়াদ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত এই ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিকতার কথা স্মরণ করে বলেন, অস্ত্র ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিটি স্কিমই বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখেছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শ্রমিকদের অধিকারের পাশাপাশি তাদের নিরাপত্তা ও নিয়মিত অভিপ্রয়াণ সুরক্ষায় আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছি।’ 

তাদের মধ্যে বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্কের ওপর খোলামেলা মত বিনিময় হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন— এ অভিন্ন মূল্যবোধের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছি।’ 

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ইসি প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পর বেলজিয়ামে বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে সহায়তার জন্য বাংলাদেশ, ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি) ও ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) মধ্যে তিনটি ঋণ ও অনুদান চুক্তি হয়েছে। এ সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট ও ইআইবি প্রেসিডেন্ট ওয়ার্নার হোয়ার চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করেন।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন তার বিবৃতিতে বলেন, দুটি বিনিয়োগ প্যাকেজ স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রথমটি হলো বাংলাদেশে সবুজ রূপান্তর ত্বরান্বিত করার জন্য ৪০০ মিলিয়ন ইউরোর বেশি অর্থের একটি নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্যাকেজ। দ্বিতীয় বিনিয়োগ প্যাকেজটি হলো আমাদের ২০২৩ সালের বার্ষিক কর্ম পরিকল্পনা— যা আপনাদের জনপ্রশাসনে এবং কর্মসংস্থান, দক্ষতা ও শিক্ষা ও সবুজ রূপান্তরে ৭০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিয়োগ রোডম্যাপ। এরপর তিনি বললেন, ‘সুতরাং, এটির মাধ্যমে আমাদের অংশীদারিত্বের এই নতুন অধ্যায়টি সত্যিকার অর্থেই ভালভাবে শুরু হচ্ছে।’

ইসি প্রেসিডেন্ট বলেন, তারা প্রথমত একটি নতুন অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে পুণরায় আলোচনা শুরু করছেন। আর এটি একটি দারুণ খবর! লেইন আরও বলেন, ‘দ্বিতীয়ত, আমাদের সম্পর্কের এই নতুন অধ্যায়টি গ্লোবাল গেটওয়ের আওতায় নতুন বিনিয়োগ দ্বারা জোরালো হবে। আর আমরা এটি নিয়েই আলোচনা করেছি।’

বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৫০ বছরের সম্পর্কের অর্জন নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা একটি দৃঢ় অংশীদারিত্ব গড়ে তুলেছি এবং এখন আমরা এটিকে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যাব। কারণ বৈশ্বিক অস্থিরতার এই সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তার দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারদের কাছে বিশ্বস্ত হতে পেরে আনন্দিত। কারণ তারা আমাদের ওপর আস্থা রাখতে পারে।’

বাংলাদেশে জলবায়ু কেন্দ্রিক বিনিয়োগে সহায়তা করার জন্য ‘বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি সুবিধা’ কর্ম পরিচালনার জন্য ৩৫০ মিলিয়ন ইউরো পর্যন্ত ইইউ-গ্যারান্টিযুক্ত কাঠামো ঋণের জন্য বাংলাদেশ এবং ইইউ’র মধ্যে প্রথম চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। 

৪৫ মিলিয়নের ইউরো একটি অনুদানের দ্বিতীয় চুক্তিটি ইআইবি ও ইইউ’র মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়। জার্মানির সহ-অর্থায়নে ১২ মিলিয়ন ইউরোর “পার্টনারশিপ ফর গ্রিন এনার্জি ট্রানজিশন” প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশ এবং ইউরোপীয় কমিশনের মধ্যে তৃতীয় চুক্তিটি হয়, যার লক্ষ্য সবাইকে নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সবুজ জ্বালানি রূপান্তরে একটি নীতি, আইনি কাঠামো ও জলবায়ু বিনিয়োগ নিয়ে কাজ করা।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান, ইআইবি (জিএলও) এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মার্কাস বার্ন্ডট ও ইসির আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের মহাপরিচালক (ডিজি) কোয়েন ডয়েনস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

বাসস

এসএম