গত পাঁচ বছরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নানা অর্জন থাকলেও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন শুরু করতে না পারা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনিদের ফেরাতে না পারাকে বড় সীমাবদ্ধতা হিসেবে দেখছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।

সোমবার (২৩ অক্টোবর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অর্জিত সাফল্য বিষয়ক প্রকাশনা ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাফল্য (২০২৯-২৩)’ নিয়ে প্রকাশিত বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এসব সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেন প্রতিমন্ত্রী।

শাহরিয়ার আলম বলেন, বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতি আমাদের জন্য একটা রক্ষাকবচ। বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া পররাষ্ট্র নীতির বাস্তবায়ন সহজ কোনো কাজ ছিল না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেশের ভেতর ও বাইরে নানা চ্যালেঞ্জ থাকে, যেটা কি না দেশের অন্য মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে মেলানো যাবে না। গেল দশ বছরে ১৮টি মিশন খোলা হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোভিডকালীন সময়ে কূটনীতি বড় একটা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে গেছে। ওই সময়ে বাধা থাকলেও আমাদের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কাজ থেমে থাকেনি। গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বেড়েছে। আমাদের কূটনীতিকদের সুদান, ইরাক, লেবানন সব জায়গায় যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কাজ করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, এ সময়ে কূটনীতিতে যদি সীমাবদ্ধতা বলেন তাহলে সামনে আসবে রোহিঙ্গা সমস্যা এবং বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফেরানোর বিষয়টি। রোহিঙ্গা সমস্যাটি খুব জটিল। তবে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।

তিনদিনের সফরে আগামীকাল মঙ্গলবার ব্রাসেলসে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ কম থাকাও সত্ত্বেও সরকারপ্রধানের গুরুত্ব বাড়ায় এ সফরটি করতে হচ্ছে বলে ইঙ্গিত দেন শাহরিয়ার আলম।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, শান্তি ও স্থিতিশীলতা না থাকায় অনেক দেশের ভরাডুবি হয়েছে। গত ১৩ থেকে ১৪ বছরে বাংলাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতার কারণে শুধু এ দেশ নয়, সমগ্র অঞ্চলের উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশ নিয়ে অনেকের এখনও অনেক ভুল ধারণা আছে। বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং করতে আমরা জনকূটনীতির অধীনে অনেক উদ্যোগ নিয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়াতে চাই। সেজন্য অর্থনৈতিক কূটনীতিরে ওপর জোর দিয়েছি এবং কাজ করে যাচ্ছি। বিদেশে যদি বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং করা যায় বিনিয়োগ এমনিতেই আসবে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত ও পররাষ্ট্রসচিব ফারুক সোবহান বলেন, বাংলাদেশের বিশাল একটা ডায়াসপোরা রয়েছে। এদের কাজে লাগাতে হবে। তাহলে কূটনীতিতে আরও সুফল মিলবে।

সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কামাল আজাদ বলেন, আমাদের কূটনীতিকদের ভাষা দক্ষতার ওপর জোর দেওয়া জরুরি। দেখা যায় আমাদের একজন কূটনীতিক কয়েক বছর সৌদিতে দায়িত্ব পালন করেছেন; কিন্তু তিনি আরবি ভাষা জানেন না। সেজন্য আমি বলব, প্রয়োজনে ভাষা শেখার বিষয়ে কূটনীতিকদের ভাতা প্রদান করা যেতে পারে।

সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বিএনপির সময়কালের কূটনীতির সমালোচনা করে বলেন, ২০০১-০৬ পর্যন্ত বিএনপি সরকার পাকিস্তানি পররাষ্ট্রনীতি অনুযায়ী চলেছে, যেটাতে কি না বাংলাদেশ নয় পাকিস্তান লাভবান হয়েছে। পরবর্তী সময়ে আমরা কূটনীতিতে বৈচিত্র্য দেখেছি। বিদেশি দেশগুলো আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহ দেখাচ্ছে।

সাবেক মুখ্য সচিব কামাল আবু নাসের চৌধুরীও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সমাপনী বক্তব্য দেন।

এনআই/এমজে