ইভিএমের বকেয়া ৬০ কোটি, অর্থ দেবে না পরিকল্পনা কমিশন
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কাছে ৬০ কোটি টাকা পায় বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ)। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ থাকলেও বকেয়ার টাকা পরিশোধ করতে পারেনি ইসি। এখন বিএমটিএফের এই বকেয়া বিল পরিশোধের জন্য অর্থ দাবি করলেও অতিরিক্ত অর্থ দেবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
গত ১৭ অক্টোবর ‘জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকা এবং নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ কমিটির’ অষ্টম সভায় এ তথ্য জানানো হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান (অব.)। সভায় আলোচ্য বিষয়গুলো বিস্তারিত উপস্থাপন করেন এনআইডির পরিচালক (অপারেশন্স) ফয়সল কাদের।
বিজ্ঞাপন
সভায় জানানো হয়, ২০২৩ সালের ১৭ জুলাই বিএমটিএফ ইভিএম মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ৬০ কোটি টাকা বকেয়া দাবি করেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬০ কোটি টাকার ইভিএম মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্তের জন্য পাঠানো হয়। মন্ত্রিসভা কমিটির প্রথম সভার সুপারিশ অনুসারে ইভিএম মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রস্তাবনা সংশোধন করে পরবর্তীতে পাঠানো হয়। কিন্তু প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবনার ওপর মন্ত্রিসভা কমিটি দ্বিতীয় সভায় আরও কিছু সুপারিশ করে ফেরত পাঠায়। যার উত্তর ইতোমধ্যেই প্রকল্প থেকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে। বিষয়টি ২০২২-২৩ অর্থবছরে নিষ্পন্ন না হওয়ায় এডিপিতে বরাদ্দকৃত ৬০ কোটি টাকাসহ ১০৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হয়।
ইভিএম প্রকল্পের বর্তমান অর্থবছরে আর্থিক অবস্থা
সভায় জানানো হয়, ২০২৩-২৪ অর্থছরের বাজেটে ইভিএম প্রকল্পের বকেয়া পরিশোধের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ নেই। প্রকল্পের অনুকূলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপিতে বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ ৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা। বকেয়া অর্থ পরিশোধসহ প্রকল্পের অন্যান্য কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে প্রকল্পের অনুকূলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপি বরাদ্দের বাইরে আরও অতিরিক্ত ১১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য পরিকল্পনা কমিশনকে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশন অতিরিক্ত টাকা না দিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দকৃত ৩ কোটি ২৭ লাখ টাকাই খরচের পরামর্শ দেয়।
ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ইভিএম
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর ইভিএমের সংরক্ষণের জন্য ইভিএম প্রকল্প পরিচালক ইভিএম সেট ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি এবং র্যাক ও আসবাবপত্রসমূহ বিএমটিএফের ওয়্যার হাউজে সাময়িক সংরক্ষণের জন্য চিঠি দেন। তবে বিএমটিএফের সাথে এ সংশ্লিষ্ট কোনো চুক্তি নেই বলে জানানো হয়। চলতি বছরের গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইভিএম সেট ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি বিএমটিএফসহ মাঠ কার্যালয়ে এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে বিএমটিএফের ওয়্যার হাউজে ১ লাখ ২ হাজার ৪৪২টি ইভিএম সেট, ১০টি অঞ্চলের বিভিন্ন গুদামে ৪৬ হাজার ৬৮৬টি ইভিএম সেট এবং নির্বাচন কমিশনের কাস্টমাইজেশন সেন্টারে ৮৭২টি ইভিএম সেট সংরক্ষিত আছে।
ওয়্যারহাউজের বকেয়া ৫০ কোটি টাকা
ইভিএম সংরক্ষণের জন্য ওয়্যারহাউজের ভাড়া বাবদ মোট ৪৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বকেয়া ভাড়া দাবি করেছে বিএমটিএফ। ইভিএম প্রকল্পের ডিপিপিতে ইভিএম সংরক্ষণের জন্য কোনো অর্থের সংস্থান নেই। পরিকল্পনা কমিশনের পরামর্শক্রমে সংশোধিত ডিপিপিতেও ওয়্যারহাউজের ভাড়া অর্ন্তভুক্ত করা হয়নি। তবে গত ১৯ জুলাই এডিপি সভায় ইসি সচিব ওয়্যারহাউজের ভাড়া রাজস্ব/পরিচালন বাজেট থেকে প্রদানের বিষয়টি জানিয়েছেন।
সভায় জানানো হয়, ২০২২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে বিএমটিএফের ওয়্যারহাউজের ভাড়ার হার নির্ধারণ বিষয়ে জানানো হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২০২২ সালের ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুসারে, পূর্ত ও গৃহায়ণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভাড়া নির্ধারণের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
পূর্ত ও গৃহায়ণ মন্ত্রণালয়ে যুগ্মসচিব শেখ সোহেল হাসান ইভিএম প্রকল্পের পরিচালককে জানান, পূর্ত ও গৃহায়ণ মন্ত্রণালয়ে যে ভাড়ার তালিকা আছে, তা ওয়্যারহাউজের জন্য প্রযোজ্য নয়। ওয়্যারহাউজের জন্য কোনো ভাড়ার হার নির্ধারণ করা হয়নি।
সভায় ইভিএমের বিষয়ে যেসব সুপারিশ করা হয়
ক. বিএমটিএফের সরবরাহকৃত র্যাক ও ফার্নিচারের বকেয়াসহ ইভিএম মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ দাবিকৃত বকেয়া পরিশোধের নিমিত্তে এডিপি বরাদ্দের অতিরিক্ত অর্থ ১১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার বিষয়টি পুর্নবিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সাথে সমন্বয়ের উদ্দেশ্যে নির্বাচন কমিশন সচিব ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপের সুপারিশ।
খ. বিএমটিএফ এর ওয়্যার হাউজের ভাড়া পরিশোধ করে, সচল ও অচল ইভিএম সেট নির্ধারণের জন্য কমিটি গঠন এবং পরবর্তীতে সচল মেশিনগুলো নির্বাচনে ব্যবহার করা হবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হলে সেগুলোকে কোয়ালিটি চেকিংয়ের মাধ্যমে উপযোগী রাখা এবং ভবিষ্যত সংরক্ষণের ব্যবস্থা হিসাবে বিএমটিএফ লিমিটেডের সাথে স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি সম্পাদন করতে হবে। এ ছাড়া, অচল বা অকেজো মেশিনগুলো বিনষ্ট করার পাশাপাশি ইভিএমের সামগ্রিক বিষয়গুলো কমিশন সভায় আলোচনার জন্য সুপারিশ করা হলো।
এসআর/এনএফ