দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ‌‘সর্বাত্মক লকডাউনের’ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। এর আগে গত ৫-১১ এপ্রিল এক সপ্তাহের কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। যদিও তা ঠিকভাবে কার্যকর করা যায়নি। এ নিয়ে দেশজুড়ে তৈরি হয় তীব্র সমালোচনা। তাই আগামী ১৪ এপ্রিল যে ‘‌সর্বাত্মক লকডাউন’ ঘোষণা করা হবে বলা হচ্ছে, তার সংজ্ঞা পরিষ্কারের দাবি জানিয়েছে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।

শুক্রবার (৯ এপ্রিল) কমিটির সদস্য ও বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপে এ বিষয়ে তার মতামত জানান। 

তিনি বলেন, ‘লকডাউন মানে কী, সেটাই তো বুঝতে পারছি না। এই যে আবারও এক সপ্তাহের লকডাউনের কথা বলা হচ্ছে, সেটা কী? এটা তো সরকারকে সুস্পষ্ট করতে হবে। একবার লকডাউন দিয়ে গণপরিবহন, দোকানপাট বন্ধ করলেন, আবার খুলে দিলেন। এখন কী ধরনের লকডাউন করতে চাচ্ছেন সেটা তো বোঝাতে হবে। বলা হচ্ছে সর্বাত্মক লকডাউন, এটার তো ডেফিনেশন (সংজ্ঞা) লাগবে। কবিতার ভাষা দিয়ে তো টেকনিক্যাল কাজ চলে না। এরকম চলতে থাকলে অনেক মানুষ মারা যাবে।’

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কারফিউ বলতে বুঝি রাস্তায় বের হওয়া যাবে না। লকডাউনে কি মানুষ বের হতে পারবে? অফিস-আদালত বন্ধ থাকবে? নাকি সবকিছুই খোলা থাকবে, শুধু আগের মতো গণপরিবহন আর দোকানপাট বন্ধ থাকবে? যদি তাই হয়, মানুষ কি হেঁটে হেঁটে অফিসে যাবে? এভাবে তো লকডাউন হয় না, আর হলেও কোনো ফল আসবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো, শুধু স্বাস্থ্যবিধি যদি মেনে চলেন, তাহলেই হবে। স্বাস্থ্যবিধি বলতে প্রথমত মাস্ক পরা, দ্বিতীয়ত ব্যক্তিগত দূরত্ব, তারপর হলো হাত ধোয়া। এই তিনটি জিনিস যদি প্রত্যেকে পালন করে, তাহলে আর কিছুই করতে হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘মাস্ক ছাড়া একজনও থাকবে না। দোকানদারও থাকবে না, ক্রেতাও থাকবে না। দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। একটা দোকানে যদি ১০ ফিট জায়গা থাকে, তাহলে দুইজনের বেশি ক্রেতা ভেতরে ঢুকবে না, বাকিরা বাইরে দূরত্ব মেনে সিরিয়াল মেইনটেইন করবে। যদি এভাবে মানানো যায়, তাহলে আর লকডাউন লাগবে না।’

দুই সপ্তাহ কঠোর লকডাউন চায় জাতীয় কারিগরি কমিটি

করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে দুই সপ্তাহের কঠোর লকডাউন চায় কোভিড সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত একমাস ধরে করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বগতি এ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ১৮ দফা নির্দেশনা জারি হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদে থেকে বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে তবুও বিধিনিষেধ মানা হচ্ছে না, যে কারণে করোনা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। ফলে সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই বেড়েছে এই সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে আরও দুই সপ্তাহের লকডাউন করা যেতে পারে। বিশেষ করে সিটি কর্পোরেশনের এলাকা ও উচ্চ সংক্রমণ এলাকাগুলোয় দুই সপ্তাহের পূর্ণ লকডাউন দেওয়া যেতে পারে। সংক্রমণ বিবেচনা করে আবার বিধিনিষেধ দেওয়া যেতে পারে।

বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, সাধারণ বেড, আইসিইউ অক্সিজেন সরবরাহে জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছেন। আগামী সপ্তাহের মধ্যে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১২ শত শয্যা বিশিষ্ট দেশের সবচেয়ে বড় করোনা হাসপাতাল চালু হচ্ছে। সরকার এমন কার্যক্রমের মধ্যে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। তাই আরও দূরত্ব আরও সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন।

এতে আরো বলা হয়, করোনার সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোয় ভিড় বেড়েছে। টেস্ট করাতে ও ফল পেতে সময় লাগছে। টেস্ট করাতে আসছে তাদের অধিকাংশই বিদেশগামী যাত্রী। এই বিদেশি কর্মজীবী মানুষের ছাড়া অন্যান্য যাত্রীদের বেসরকারি পরীক্ষাকেন্দ্রে নমুনা পরীক্ষার করতে পারলে সরকারি পরীক্ষাগারে চাপ কমে আসবে। এতে দ্রুত ফল পাওয়া ও দ্রুত করোনা রোগীকে আইসোলেশনে রাখা সম্ভব হবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে দেশের টিকা কার্যক্রম ফলপ্রসূ হয়েছে। এ কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে। সরবরাহ নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় আমদানি করার পুনরায় সুপারিশ করা হলো।

টিআই/এসকেডি/জেএস