ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথ ইতোমধ্যে উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় তৈরি এই নতুন ব্রডগেজ রেলপথে আগামী ১ নভেম্বর থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

ট্রেন চলাচলের দিনক্ষণ ঘনিয়ে এলেও বাসের চেয়ে রেল পথে বেশি ভাড়ার কারণে কিছুটা উচ্ছ্বাস কমেছে ওই অঞ্চলের মানুষের। এছাড়া ৪ গুণ বেশি ভাড়ার কারণে সমালোচনার ঝড় বয়েছে সারাদেশে। এ পথে বাণিজ্যিক ট্রেন চললে ভাড়া কেমন হবে, সে নিয়ে গত ২৪ সেপ্টেম্বর রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (সিসিএম) নাজমুল ইসলামকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি নতুন রুটে ভাড়া প্রস্তাব করে।

সেই প্রস্তাব অনুযায়ী দেখা গেছে, ঢাকা থেকে ভাঙ্গা স্টেশনের প্রকৃত দূরত্ব ৮২.৩ কিলোমিটার। কিন্তু আদায়যোগ্য ভাড়ার দূরত্ব ধরা হয়েছে ৩৫৯ কিলোমিটার। এই পথে মেইল ট্রেনের ভাড়া ১২০ টাকা, কমিউটার ট্রেনের ভাড়া ১৫০ টাকা, আন্তঃনগর ট্রেনের শোভন চেয়ারের ভাড়া ৩৫৫ টাকা, এসি চেয়ারের ভাড়া ৬৭৯ টাকা, এসি সিটের ভাড়া ৮১৭ টাকা এবং এসি বার্থে ভাড়া এক হাজার ২১৯ টাকা হতে পারে দেখিয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে।

ভাড়া প্রস্তাবের ক্ষেত্রে ঢাকা থেকে প্রতিটি গন্তব্যের দৃশ্যমান দূরত্বের সঙ্গে পদ্মা সেতু ও গেন্ডারিয়া-কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত উড়াল রেলপথের জন্য বাড়তি দূরত্ব যোগ করেছে রেলওয়ের প্রস্তাব কমিটি। প্রস্তাব অনুযায়ী পদ্মা সেতুর প্রতি কিলোমিটারকে ২৫ কিলোমিটার, গেন্ডারিয়া থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত উড়ালপথের প্রতি কিলোমিটারকে ৫ কিলোমিটার ধরা হয়েছে। বিষয়টিকে রেলওয়ে পন্টেজ চার্জের জন্য বাড়তি দূরত্ব বলছে।

এদিকে ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে রেলওয়ে কমিটির প্রস্তাবিত অতিরিক্ত ভাড়া আরোপের প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশের রেলওয়ের মহাপরিচালক, প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা, রেলমন্ত্রীর একান্ত সচিব ও প্রকল্প পরিচালক বরাবর লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। গত ১১ অক্টোবর এ নোটিশ পাঠান ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট অভিজিৎ বিশ্বাস। নোটিশে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত ভাড়া প্রায় চার গুণ বেশি নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। গত ২৪ সেপ্টেম্বর গঠিত রেলওয়ে কমিটি যে ভাড়া আদায়ের প্রস্তাবনা করেছে, তা নিঃসন্দেহে জনস্বার্থবিরোধী।

এরপরেই ভাড়া সংশোধন করে একটি সংশোধিত প্রস্তাব রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে রেলওয়ের দায়ীত্বশীল একটি সূত্র। সেখানে মেইল ট্রেনে ৮০ টাকা, কমিউটার ট্রেনে ১০০ টাকা, শোভন চেয়ার ২৩০ টাকা, এসি চেয়ার ৪৪৩ টাকা, এসি সিট ৫২৯ টাকা ও এসি বার্থ ৭৯৪ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।

ঢাকা-ভাঙ্গা পথে ট্রেনের ভাড়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বাসের চেয়ে যেন ট্রেনের ভাড়া বেশি না হয়, সে চিন্তা আমাদের রয়েছে। আমরা বিষয়টা দেখছি।

বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী বলেন, রেলওয়েতে ডিসকাউন্ট রাখার নিয়ম রয়েছে। যাত্রী চাহিদার ওপর ভিত্তি করে তা ঠিক করা হবে।

এমএইচএন/এসএম