চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথে সংস্কারাধীন কালুরঘাট সেতুতে আগামী ২০ অক্টোবরের আগেই রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হবে। অন্যদিকে বছরের সবচেয়ে সমালোচিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্প আগামী ১২ নভেম্বর উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তাই উদ্বোধনের আগেই এ মাসের শেষ নাগাদ সংস্কার করে সেতুর উপর দিয়ে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করা হবে। নতুন ১০০ কিলোমিটার রেলপথ প্রকল্পের আওতায় কালুরঘাট সেতু না পড়লেও নতুন লাইনে চট্টগ্রাম থেকে ট্রেন চালানোর জন্য সংস্কার জরুরি ছিল সেতুটির। সেতুটির সংস্কার কাজ করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

এর আগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ শুরু হয় গত আগস্ট মাসের এক তারিখ থেকে। তখন বলা হয়, সেতুর ওপর দিয়ে ৩ মাস পর্যন্ত ট্রেন ও সব ধরনের গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে।

মেয়াদোত্তীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ কালুরঘাট সেতু ৯৩ বছরের পুরনো। এই সেতু দিয়ে আগস্টের আগ পর্যন্ত ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলতো। পাশাপাশি সড়ক পথের যানবাহনও চলতো এই সেতুর ওপর দিয়ে। সংস্কারকাজ শেষ হলে এই সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেনের গতি বেড়ে হবে ঘণ্টায় ৫০-৬০ কিলোমিটার। সেতুটি মেরামতের জন্য ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। বর্তমানে সংস্কারকাজের অগ্রগতি ৪০ শতাংশ। ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সংস্কার কাজ চলছে।

সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে সেতুর ইস্পাত কাঠামো পরিবর্তনের কাজ চলমান আছে। এছাড়া সেতুর ওপর থেকে তুলে ফেলা হয়েছে পিচের কার্পেটিং। দ্রুত সময়ে মধ্যে কাজ শেষ করতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২০০ কর্মী সেখানে নিয়মিত কাজ করছেন। আগামী ১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে উপস্থিত হয়ে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। কালুরঘাট সেতু ছাড়া চট্টগ্রাম বা ঢাকা থেকে সেখানে ট্রেন নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মো. মফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওই সেতুর কাজ আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা আছে। আগামী ১৬ অক্টোবর মন্ত্রী মহোদয় (রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন) সেতুর সংস্কার কাজের অগ্রগতি দেখতে আসবেন।

জানতে চাইলে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিঞা ঢাকা পোস্টকে বলেন, কালুরঘাট সেতুর অগ্রগতি ভালো। বর্তমানে কাজের অগ্রগতি ৪০ শতাংশ। ২০ অক্টোবরের মধ্যে আমরা চেষ্টা করছি কাজ শেষ করতে। যেহেতু ১২ নভেম্বর পর্যন্ত আমরা সময় পেলাম, সেহেতু কাজটা আরও ভালোভাবে করতে পারবো। ওই নতুন রেলপথ উদ্বোধনের আগে আমাদের এই সংস্কার কাজ শেষ হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, এই সময়ের মধ্যে ওয়াকওয়ের কাজ করতে পারবো না। কিন্তু মূল সেতুর কাজ আমরা করতে পারবো। যেহেতু ওয়াকওয়ে নতুন যুক্ত হয়েছে, তাই এটি দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধনের পরে করবো।

কালুরঘাট রেলওয়ে সেতু ১৯৩০ সালে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ওপর নির্মাণ করে ব্রুনিক এন্ড কোম্পানি ব্রিজ বিল্ডার্স হাওড়া। পরে ১৯৬২ সালে ওই সেতুর উপর দিয়েই সড়ক পথের যান চলাচল শুরু হয়। দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার এই ৬৩৮ মিটার সেতুটি এর আগে দুই বার সংস্কার করা হয়েছিল। ২০০১ সালে এই সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। পরে ২০১১ সালে সেতুটিকে চুয়েটের একদল গবেষক আরও একবার ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে।

এমএইচএন/এমএসএ