স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, দেশে অগ্নিদুর্ঘটনা মোকাবিলায় সব সক্ষমতা সম্পন্ন একটি বিশ্বমানের সেবা বাহিনীতে পরিণত হবে ফায়ার সার্ভিস। আগামীর উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশে এটি শেখ হাসিনার স্বপ্ন।

বুধবার (১১ অক্টোবর) দুপুর পৌনে ১২টায় ইমার্জেন্সি রেসপন্স কন্ট্রোল সেন্টার (ইআরসিসি) প্রজেক্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। 
 
স্ট্রেংথেনিং অ্যাবিলিটি অব ফায়ার ইমার্জেন্সি রেসপন্স (এসএএফইআর) এর অধীন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর এবং কেওআইসিএ এর যৌথ অর্থায়নে স্থাপিত ইআরসিসি প্রজেক্টের উদ্বোধন করা হয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকার সকল ক্ষেত্রে ডেভিডেশনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে ফায়ার সার্ভিসকেও ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনা হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস আজকে আগের সেই দমকল বাহিনী নয়। ফায়ার সার্ভিস আজকে মানুষের কাছে সার্ভিস পৌঁছে দিচ্ছে। বিশেষ করে ইআরসিসি প্রজেক্টের সুবিধা কাজে লাগিয়ে ফায়ার সার্ভিস মানুষের আর আস্থার বাহিনীতে পরিণত হবে।

আসাদুজ্জামান খান বলেন, বিপদগ্রস্ত মানুষকে সেবা প্রদানের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিস অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। ২০০৯ সালে সংসদে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন প্রত্যেকটি উপজেলায় নূন্যতম একটি করে ফায়ার স্টেশন চালু করা হবে। এখন দেশে ৫০৩টি ফায়ার স্টেশন। আরও ৪৩টি উদ্বোধনের অপেক্ষায়। প্রধানমন্ত্রী যে কোনো সময় এই ফায়ার স্টেশনগুলোর উদ্বোধন করবেন। 

মন্ত্রী বলেন, দুর্যোগে প্রথম রেসপন্স করে ফায়ার সার্ভিস। বর্তমানে অগ্নি দুর্ঘটনা, দুর্যোগ, ভূমিকম্পসহ যেকোনো দুর্যোগে সবার আগে ফায়ার সার্ভিস। শুধু আমাদের দেশে নয়, বিভিন্ন দেশে ডর কোনো দুর্যোগে যাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস। আমরা সেভাবেই ফায়ার সার্ভিসকে সক্ষম করে গড়ে তুলছি। টার্ন টেবল লেডার (টিটিএল) যুক্ত হয়েছে। বহুতল ভবনে অগ্নি দুর্ঘটনায় কাজ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ফায়ার সার্ভিস এর জনবল বৃদ্ধিতে আমরা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ২০০৯ সালে ফায়ার সার্ভিসের জনবল ছিল ৬ হাজারের সামান্য বেশি। বর্তমানে জনবল ১৪৬৬৮ জন। এই জনবল বেড়ে হবে ১৬০০০। আগামীতে ৩০ হাজার জনবল করার অর্গানোগ্রাম করা হচ্ছে। 

তিনি বলেন, উন্নত দেশের মতো আধুনিক সরঞ্জাম দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এতে একদিকে প্রতিষ্ঠানটির সেবার মান উন্নত হয়েছে, অপরদিকে প্রতিষ্ঠানটির সেবার ক্ষেত্রও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রান্তিক মানুষ তার সেবা পাচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস এখন সকল দুর্যোগে প্রয়োজনীয় সক্ষমতা নিয়ে দ্রুত মানুষের পাশে ছুটে যাওয়ার মতো একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বাহিনী। আমরা এই প্রতিষ্ঠানের জন্য অ্যাম্বুলেন্স সেবার সক্ষমতা বাড়িয়েছি। ২০০৯ সালে মাত্র ৫০টি অ্যাম্বুলেন্স ছিল, বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ১৯৫টি। প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায় অনুযায়ী প্রতিটি ফায়ার স্টেশনে পর্যায়ক্রমে ন্যূনতম একটি অ্যাম্বুলেন্স দেওয়ার লক্ষ্যে ৩৫৭টি নতুন অ্যাম্বুলেন্স ক্রয়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। 

তিনি আরও  বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণ সুবিধা আধুনিক করার লক্ষ্যে 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফায়ার একাডেমি' নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি এই প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুবিধা বৃদ্ধির জন্যও বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

আমি আশা করবো, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন আগামীর উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশের পরিপূর্ণ অগ্নি নিরাপত্তা ও দুর্যোগ-দুর্ঘটনা মোকাবিলায় সক্ষমতা সম্পন্ন একটি বিশ্বমানের সেবা বাহিনীতে পরিণত হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত কোরিয়ান রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়াং সিক, কইকা বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কিম তাইইয়াং ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (ফায়ার উইং) শাহানারা খাতুন। 

অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, বর্তমান সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০০৯ সালে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা  দিয়েছিলেন, দেশের প্রতিটি উপজেলায় ন্যূনতম একটি করে ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এর ধারাবাহিকতায় বর্তমানে সারা দেশে চালু ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা ৫০৩টি, যা ২০০৯ সালের আগে ছিল মাত্র ২০৪টি।

আমরা আশা করছি, অক্টোবর মাসের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী সারা দেশে নির্মাণসম্পন্ন আরও ৪৩টি ফায়ার স্টেশনের শুভ উদ্বোধন করবেন।

ফায়ার সার্ভিসকে স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৩ এবং আজীবন রেশন প্রদান ও অন্যান্য সুবিধা প্রদান করায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান তিনি। 

জেইউ/এমএসএ