দেশের মানুষকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ‘ভ্যাকসিন পাসপোর্ট’ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ তথ্য জানান তিনি। এরপর থেকে ভ্যাকসিন পাসপোর্ট নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন ।

কী এই ভ্যাকসিন পাসপোর্ট 

ভ্যাকসিন পাসপোর্ট এক ধরনের হেলথ পাস। এটা সাধারণ ই-পাসপোর্টের মতো বই আকারে হতে পারে। আবার ডিজিটাল অ্যাপের মাধ্যমেও হতে পারে। আবার এক পাতার একটি কাগজও হতে পারে, যেখানে কিউআর কোড থাকবে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইতালিতে এ পাসপোর্ট তৈরির কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

৭ ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেশে করোনা ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়

ভ্যাকসিন পাসপোর্ট নিয়ে গবেষণা করা একটি তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান জানায়, ভ্যাকসিন পাসপোর্টের ভেতরে মূলত একজন নাগরিকের ভ্যাকসিনের প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার তারিখ, তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন কি-না, আক্রান্ত হলে কবে হয়েছেন, সর্বশেষ কবে কোভিড-১৯ টেস্ট করে নেগেটিভ ফলাফল পেয়েছেন তথ্য উল্লেখ থাকবে। আইসিটি মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে এই পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরু করবে।

কোথায় ব্যবহার হবে এ ভ্যাকসিন পাসপোর্ট?

সূত্রটি জানায়, প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক চেইন রেস্টুরেন্ট, বিনোদনকেন্দ্র, এয়ারলাইন্স, বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগে এ পাসপোর্ট ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশে আয়োজন হওয়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আন্তর্জাতিক খেলাসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টে এই ভ্যাকসিন পাসপোর্ট দিয়ে সহজেই প্রবেশ করা যাবে। পাশাপাশি এনজিওসহ বহুজাতিক ও স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলোয় চাকরিতে যোগদানের ক্ষেত্রেও প্রয়োজন হতে পারে এ ভ্যাকসিন পাসপোর্ট।

ভ্রমণে থাকবে না বার বার কোভিড টেস্ট আর কোয়ারেন্টাইনের ‘হয়রানি’

ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) ভ্যাকসিন পাসপোর্ট অনুমোদনের বিষয়ে এরই মধ্যে চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছে। তারা যদি এই পাসপোর্টকে অনুমোদন দেয় তাহলে একজন ভ্যাকসিন পাসপোর্ট হোল্ডার কোভিড-১৯ টেস্ট ছাড়াই যে কোনো দেশে ভ্রমণ করতে পারবেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমানবন্দরে নেমে একজন ব্যক্তিকে তার টিকিট, পাসপোর্ট- ভিসা, কোভিড-১৯ সার্টিফিকেট, ভ্যাকসিন কার্ড ইত্যাদি দেখাতে হয়। তবে মূল পাসপোর্টের সঙ্গে ভ্যাকসিন পাসপোর্ট থাকলে আর কোনো কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে না।

বাংলাদেশে ভ্যাকসিন পাসপোর্টের কাজ কোন পর্যায়ে?

আইসিটি মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের প্রোগ্রামার হারুন অর রশিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনাকালে এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণ সহজ করতে বিশেষ ধরনের ডকুমেন্ট তৈরির চিন্তা করছে আইএটিএ।  যাতে বার বার কোভিড ১৯ টেস্ট করা ও কোয়ারেন্টাইনে থাকতে না হয়। সে অনুযায়ী, আইসিটি মন্ত্রণালয় একটি ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট তৈরির পরিকল্পনা করেছে। বিশ্বের যে কোনো সীমান্তে আমাদের ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট পাওয়া ব্যক্তিকে কিউআর কোডের মাধ্যমে শনাক্ত করা যাবে। গতকাল (বুধবার) এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রীকে একটি প্রেজেন্টেশন দেওয়া হয়েছে। তখন তিনি আমাদের পাসপোর্টের বিষয়টি বলেছেন।

 বাংলাদেশে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে ৮ এপ্রিল থেকে 

মূলত ভ্যাকসিন সার্টিফিকেটই ভ্যাকসিন পাসপোর্টের মতো হবে। তবে এটি ডিজিটালি কিউআর কোড দিয়ে হবে নাকি একটি কাগজে হবে, পাসপোর্টের মতো আলাদা বই হবে নাকি সাধারণ পাসপোর্টের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে এনিয়ে এখনো আলোচনা চলছে।

এআর/একে/এসকেডি