ভাঙ্গা স্টেশনে দাঁড়িয়ে পরীক্ষামূলক ট্রেন / ছবি : হাসনাত নাঈম

পদ্মা সেতু হয়ে দৃশ্যমান ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথের দূরত্ব ৭৭ কিলোমিটার। এই পথে আন্তঃনগর ট্রেনের ভাড়া প্রস্তাব করেছে রেলওয়ের কমিটি। কমিটির প্রস্তাব অনুযায়ী নন-এসি চেয়ার কোচের ভাড়া ৩৫০ টাকা এবং এসি চেয়ার কোচের ভাড়া ৬৬৭ টাকা হতে পারে।

রেলওয়ের দায়ীত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবটি বর্তমানে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রস্তাবিত ভাড়াই অনুমোদিত হতে পারে।

জানা গেছে, ভাড়া প্রস্তাবের ক্ষেত্রে ঢাকা থেকে প্রতিটি গন্তব্যের দৃশ্যমান দূরত্বের সঙ্গে পদ্মা সেতু ও গেন্ডারিয়া-কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত উড়াল রেলপথের জন্য বাড়তি দূরত্ব যোগ করেছে রেলওয়ের প্রস্তাব কমিটি। প্রস্তাব অনুযায়ী পদ্মা সেতুর প্রতি কিলোমিটারকে ২৫ কিলোমিটার, গেন্ডারিয়া থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত উড়ালপথের প্রতি কিলোমিটারকে ৫ কিলোমিটার ধরা হয়েছে। বিষয়টিকে রেলওয়ে পন্টেজ চার্জের জন্য বাড়তি দূরত্ব বলছে।

এ জন্যই ঢাকা থেকে ভাঙ্গার প্রকৃত দূরত্ব ৭৭ কিলোমিটার হলেও রেলওয়ে দেখিয়েছে ৩৫৩ কিলোমিটার দূরত্ব। ফলে আনুপাতিক হাতে বেড়ে গেছে ওই পথের ভাড়াও।

রেলেওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথে আগামী নভেম্বর থেকে যাত্রী নিয়ে পুরোদমে ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে। শুরুতে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ৩টি ট্রেন চলাচল করতে পারে। ঢাকা থেকে খুলনাগামী আন্তঃনগর ট্রেন ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ পদ্মা সেতু হয়ে চলাচল করবে। ভাঙ্গা থেকে ট্রেনটি রাজবাড়ী, পাটুরিয়া, কুষ্টিয়ার পোড়াদহ ও যশোর হয়ে খুলনায় যাবে। বর্তমানে ট্রেনটি ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতু-ঈশ্বরদী-কুষ্টিয়া হয়ে চলাচল করছে।

অন্যদিকে রাজশাহী থেকে ঢাকা পর্যন্ত একটি ট্রেন চালানোর প্রস্তাব রয়েছে। বর্তমানে রাজশাহী থেকে ‘মধুমতি এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি ভাঙ্গা পর্যন্ত চলাচল করে। পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেনটি ঢাকা পর্যন্ত সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা-পদ্মা সেতু-রাজবাড়ী রুটে একটি কমিউটার ট্রেন চালানোর কথাও ভাবছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

সরকারের সেতু বিভাগের আওতায় পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে। এই সেতুর ওপর রেললাইন বসিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ফলে ট্রেন চলাচলের জন্য সেতু কর্তৃপক্ষকে টোল দিতে হবে। তবে এখনো এ টোল হার নিয়ে একমত হতে পারেনি সরকারি এই প্রতিষ্ঠান দুটি।

ভাড়ার বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর জানিয়েছেন, এই পথে লোকাল ও কমিউটার ট্রেন চলাচল করবে। সেগুলোর ভাড়া অনেক কম হবে। তবে আন্তঃনগর ট্রেনের ভাড়া কিছুটা বেশিই। কিন্তু যশোর পর্যন্ত পুরো রেলপথ চালু হয়ে গেলে ভাড়া কমে আসবে।

বাংলাদেশে লোকাল, মেইল, কমিউটার ও আন্তঃনগর— এই চার ধরনের ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে ভাড়াহার কিছুটা কম-বেশি রয়েছে। বর্তমানে রেলওয়েতে কিলোমিটারপ্রতি এসি শ্রেণির ভিত্তি ভাড়া ১ টাকা ৯৫ পয়সা এবং নন-এসি শ্রেণির ভিত্তি ভাড়া ১ টাকা ১৭ পয়সা। লোকাল ট্রেনে সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ টাকা। আন্তঃনগরে তা ৩৫ টাকা। তবে সেতু ও উড়ালপথ থাকলে সর্বনিম্ন ভাড়া বাড়ে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতুর ওপারের পদ্মা স্টেশনের দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার। এই দূরত্বে শোভন চেয়ারের প্রস্তাবিত ভাড়া ৩৩০ টাকা, এসি চেয়ারের ভাড়া ৬৩৩ টাকা এবং এসি সিটের ভাড়া ৭৫৯ টাকা।

বর্তমানে রেলে পয়েন্ট চার্জ নির্ধারণের সুনির্দিষ্ট কোনো পদ্ধতি নেই। তাই তারা সব দিক বিবেচনা করে প্রস্তাবিত কমিটি পদ্মা সেতুর প্রতি কিলোমিটারের জন্য বাড়তি ২৫ কিলোমিটার যোগ করার প্রস্তাব করছে। পাশাপাশি উড়ালপথকে সেতু বা ভায়াডাক্ট ধরে প্রতি কিলোমিটারকে বাড়তি ৫ কিলোমিটার বিবেচনা করেছে। ভবিষ্যতে সব নতুন সেতু ও ভায়াডাক্টের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি ব্যবহারের সুপারিশ করা হয়েছে কমিটির প্রতিবেদনে।

কমিটির প্রতিবেদনে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পদ্মা সেতুকে ১৫৪ কিলোমিটার রেলপথ হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। আর ঢাকার গেন্ডারিয়া থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ২৩ কিলোমিটার উড়ালপথকে ১১৫ কিলোমিটার রেলপথ ধরা হয়েছে।

এমএইচএন/এসএম