কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, আমরা স্থানীয়ভাবে পেঁয়াজ উৎপাদন করতে চাই। আমরা কেন পেঁয়াজ আমদানি করছি না এটা নিয়ে ভারত থেকে আমাদের ওপর প্রচুর চাপ ছিল। কিন্তু আমরা তাদের কথা শুনিনি। 

রোববার (৮ অক্টোবর) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সম্মেলন কক্ষে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির (এফপিএমসি) সভা শেষে তিনি এ কথা বলেন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের জলবায়ু পেঁয়াজ উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগী। আমাদের বিজ্ঞানীরা পেঁয়াজের ভালো জাতও আনতে পেরেছে। গত বছর যেহেতু আমাদের কৃষকরা পেঁয়াজের দাম পায়নি সেহেতু এবার যাতে দাম পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা পেঁয়াজ আমদানি করিনি। মূল কথা হচ্ছে পেঁয়াজে আমরা আত্মনির্ভরশীল হতে চাই। একটু দামে পেঁয়াজ কিনতে মানুষের সাময়িক কষ্ট হলেও আমাদের কৃষকরা কিন্তু উৎসাহিত হচ্ছে।’

পেঁয়াজ ও আলুর বাজারদর নিয়ন্ত্রণে সরকার হাল ছেড়ে দিয়েছে কি না? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো যথেষ্ট তৎপর রয়েছি। সরাসরি উৎপাদনের পার্ট হচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের। বাজারদর নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। তারপরও আমি দায়িত্ব এড়াতে পারি না। মন্ত্রিপরিষদ পদ্ধতিতে মন্ত্রীদের যৌথভাবে দায়িত্ব রয়েছে। সব বিপর্যয়ের জন্য এখানে মন্ত্রীরাই দায়ী। সুতরাং আমরা মোটেই হাল ছেড়ে দেইনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোল্ড স্টোরেজের মালিকরা খুবই অসহযোগিতা করছেন। তারা সঠিকভাবে পণ্য সরবরাহ করছেন না। এটা একটা বড় অন্তরায়। মাঠ পর্যায়ে আমাদের কর্মকর্তারা চাপ সৃষ্টি করলে তারা সাপ্লাইই দেয় না। এত অসহযোগিতা সত্ত্বেও প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

‘আমাদের দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। এপ্রিল ও মে মাসে পেঁয়াজ তোলা হয়। কিন্তু এগুলো দুই মাসের বেশি থাকে না। এগুলো পচে যায় কিংবা শুকিয়ে যায়। এ কারণেই পেঁয়াজ নিয়ে আমাদের সমস্যা। এ কারণেই নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে বিদেশ থেকে আমাদের পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়।’

‘গত বছর আমাদের দেশে প্রচুর পেঁয়াজ উৎপাদন হলেও কৃষকরা তা বিক্রি করতে পারেনি। আলুরও একই অবস্থা। আপনারাই রিপোর্ট করেছেন আলু রাস্তায় ফেলে দিয়েছে। কিন্তু এ বছর যেহেতু আলুর উৎপাদন ২-৩ লাখ টন কম হয়েছে, সেহেতু কোল্ড স্টোরেজের মালিকরা ও আড়ৎদাররা ব্যাপকভাবে মুনাফা অর্জন করেছেন। যেখানে ২০ টাকা খরচ হয় না... সেটিই ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।’

ড. রাজ্জাক বলেন, ‘গত বছর পেঁয়াজ সংরক্ষণের একটা প্রযুক্তি নিয়ে এসেছি আমরা। রাজশাহী, পাবনা ও ফরিদপুরে ৫০- ৬০ ও ৭০টি করে সংরক্ষণাগার করে দিয়েছি৷ সেসব সংরক্ষণাগারে কৃষকরা পেঁয়াজ রাখছেন। এগুলো ভালোভাবেই সংরক্ষণ করা যাচ্ছে। এ প্রযুক্তিতে ৫ শতাংশ পেঁয়াজও পচেনি। এ প্রযুক্তিটা সফলভাবে কাজ করলে আগামী দুই বছরের মধ্যে বিদেশ থেকে আর পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে না।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বিজ্ঞানীরা এমন পেঁয়াজের জাত পেয়েছেন যেগুলো প্রতি হেক্টর জমিতে ৪০ থেকে ৫০ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। আলু নিয়েও সমস্যা হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমাদের ব্যবস্থার ঘাটতির কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ভবিষ্যতে পেঁয়াজ নিয়ে বাংলাদেশে কোনো সমস্যা থাকবে না।’

সবজির বাজারদর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সামনে শীতকাল আসছে। ফলে প্রচুর সবজি আসবে। এতে করে সব ধরনের সবজির দামই কমে আসবে।

এমএম/কেএ