রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন
সেপ্টেম্বরে দেশে সড়কে ঝরল ৩৯৪ প্রাণ
গত সেপ্টেম্বর মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩৯৮টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৩৯৪ জন এবং আহত হয়েছে ৭৮৩ জন। নিহতদের মধ্যে নারী ৪৮ জন ও ৫৩ শিশু ছিল। এর মধ্যে ১৬৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১৫১ জন, যা মোট নিহতের ৩৮.৩২ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪১.৯৫ শতাংশ। এই সময়ে ১৪টি নৌ-দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত, ৬ জন আহত ও ২ জন নিখোঁজ রয়েছে। ৩৩টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ৩৮ জনের মৃত্যু এবং ২২ জন আহত হয়েছে।
রোববার (৮ অক্টোবর) সংবাদ মাধ্যমে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমানের পাঠানো সেপ্টেম্বর মাসের সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা যায়। সংগঠনটি ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
বিজ্ঞাপন
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ৩০.৪০ শতাংশ ও প্রাণহানি ২৯.৪৪ শতাংশ; রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১২.৫৬ শতাংশ ও প্রাণহানি ১১.৬৭ শতাংশ; চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৮.৩৪ শতাংশ ও প্রাণহানি ১৭.৫১ শতাংশ; খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১২.৩১ শতাংশ ও প্রাণহানি ১৩.১৯ শতাংশ; বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৮.০৪ শতাংশ ও প্রাণহানি ৭.৮৬ শতাংশ; সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৫.০২ শতাংশ ও প্রাণহানি ৬.৮৫ শতাংশ, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ৭.৭৮ শতাংশ ও প্রাণহানি ৭.৬১ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৫.৫২ শতাংশ ও প্রাণহানি ৫.৮৩ শতাংশ ঘটেছে।
ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। সেখানে ১২১টি দুর্ঘটনায় ১১৬ জন নিহত। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ২০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং ময়মনসিংহ বিভাগে সবচেয়ে কম ২৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। একক জেলা হিসেবে চট্টগ্রাম জেলায় সবচেয়ে বেশি ৩২টি দুর্ঘটনায় ২৮ জন নিহত হয়েছে। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে শরীয়তপুর, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও নড়াইল জেলায়। এ ৫টি জেলায় সামান্য মাত্রার ১১টি দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি।
সংগঠনটি সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; বেপরোয়া গতি; চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল; তরুণ-যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজিকে।
সুপারিশ হিসেবে জানিয়েছে, দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে; চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে; বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে; পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা সার্ভিস রোড তৈরি করতে হবে; পর্যায়ক্রমে সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে; গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে; রেল ও নৌ-পথ সংস্কার করে সড়ক পথের ওপর চাপ কমাতে হবে; টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে এবং 'সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮' বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
এমএইচএন/এসএম