হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অত্যাধুনিক তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের কাজ এত সহজ ছিল না মন্তব্য করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেছেন, নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই সারা পৃথিবীতে হানা দেয় মহামারি করোনা। এই ভয়াবহ সময়েও নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়নি। ওই সময় যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। 

শনিবার (৭ অক্টোবর) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-৩ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কৃতজ্ঞতা জানান। 

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যাত্রীর চাহিদা ও আন্তর্জাতিক মানের টার্মিনাল সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী এই থার্ড টার্মিনালের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এ কাজ শেষ করতে পেরেছি। কিন্তু নির্মাণ কাজ এগিয়ে নেওয়ার পথ এত সহজ ছিল না।’

‘নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই সারা পৃথিবীতে করোনা আঘাত হানে। এই মহামারির ভয়াবহতায় সারা পৃথিবী থমকে যায়। একের পর এক সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এই ভয়াবহ সময়েও থার্ড টার্মিনালের নির্মাণ কাজ একদিনের জন্যও থেমে থাকেনি, বন্ধ হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর অনুপ্রেরণা ও সাহসী সিদ্ধান্ত, সময় উপযোগী দিকনির্দেশনায় আমরা সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ এগিয়ে নিয়ে গেছি। প্রধানমন্ত্রী অনুপ্রেরণা ও সাহস না জোগালে এ কাজ করা অসম্ভব ছিল। এজন্য আমি এভিয়েশন শিল্পের সবার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। একই সঙ্গে ওই সময় যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন, তারাসহ বন্ধু রাষ্ট্র জাপান এবং এই টার্মিনাল নির্মাণ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।

উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির মধ্য দিয়ে দেশের আকাশ পথের সংযোগের পরিধি বাড়ছে উল্লেখ করে বিমান প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী নির্দেশনা অনুসারে সারাদেশে বিমান অবকাঠামোর যুগোপযোগী উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, যাত্রী সেবা বৃদ্ধি, কারিগরি এবং জনদক্ষতা উন্নয়ন, নিরাপদ ও সুষ্ঠু বিমান চলাচলে কাজ অব্যাহত রয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল তারই বাস্তব প্রতিচ্ছবি। আমাদের লক্ষ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের এভিয়েশন শিল্পকে রূপান্তরের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বে অন্যতম এভিয়েশন হাবে পরিণত করা।

প্রতিমন্ত্রী জানান, তৃতীয় টার্মিনালের মাধ্যমে বছরে অতিরিক্ত ১২ মিলিয়ন যাত্রী চলাচলের সুবিধা সৃষ্টি হয়েছে। যা পরবর্তী সময়ে ১৬ মিলিয়নে উন্নত হবে। ফলে ভবিষ্যতে এ বিমানবন্দরের মাধ্যমে বছরে মোট ২৪ মিলিয়ন যাত্রী চলাচল করতে পারবে। 

তিনি বলেন, সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় বর্তমানের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ আয়তনের আমদানি-রপ্তানি কার্গো কমপ্লেক্স নির্মিত হয়েছে। যার মাধ্যমে বছরে ২ লাখ ৭৩ হাজার টন কার্গো আমদানি ও ৫ লাখ ৭৬ হাজার ৯৪১ টন কার্গো রপ্তানি সম্ভব হবে। পাশাপাশি তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের সঙ্গে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সংযোগ থাকবে। যার ফলে যাত্রীদের কোনো প্রকার ট্রাফিক সিগন্যালের মুখোমুখি হতে হবে না।

‘এ এলাকায় সরকারের পরিকল্পনাধীন মেট্রোরেল বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন ও হজ ক্যাম্পের সঙ্গে থার্ড টার্মিনালের সরাসরি সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় টানেল নির্মাণ করা হচ্ছে। বহুমাত্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দে বিমানবন্দর দিয়ে চলাচল করতে পারবে। এর ফলে দেশের পর্যটন শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রসারের ভূমিকা রাখবে এ বিমানবন্দর’ -বলেন বিমান প্রতিমন্ত্রী।

এসএইচআর/এসএম