জাতিসংঘ দুর্নীতিবিরোধী সনদের দ্বিতীয় ও পঞ্চম অধ্যায় বাস্তবায়নে এবং এর সকল প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণের সহায়ক হিসেবে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে দুর্নীতিবিরোধী সনদের বাস্তবায়নে আইনের কার্যকর প্রয়োগ ও প্রাতিষ্ঠানিক সম্ভাবনার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে এবং অগ্রগতির সুযোগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে ১৬ দফা সুপারিশমালা তুলে ধরা হয় টিআইবির পক্ষ থেকে।

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে টিআইবি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব সুপারিশগুলো তুলে ধরেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী সনদ (আনকাক) বাস্তবায়ন পর্যালোচনা বিষয়ে এই সংবাদ  সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সুপারিশগুলোর কথা উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং একে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব মুক্ত রাখা জরুরি। দুর্নীতি দমন কমিশনের এখতিয়ার এবং এর কার্য পরিধি খর্ব করে আইনের এমন ধারাসমূহ এবং প্রশাসনিক পদক্ষেপ বাতিল করতে হবে। অন্যদিকে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের সংশোধন করে ২০১২ সালের সংস্করণে যে সকল বিষয়কে মানিলন্ডারিংয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল সেগুলোকে পুনরায় এর অন্তর্ভুক্ত করতে।

বাকি সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- সুপ্রীম কোর্টের বিচারকদের নিয়োগ ও অপসারণের এখতিয়ার স্বাধীন সত্তার (যেমন- সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল) ওপর ন্যস্ত করা। বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করণে একে সম্পূর্ণরূপে পৃথক করা। অধস্তন আদালতে নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলির ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ন্ত্রণের সংস্কৃতি পরিহার করা। বিচারিক সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের আয় ও সম্পদের তথ্যপ্রকাশ ও হালনাগাদকরণসহ আচরণবিধি মেনে চলা বাধ্যতামুলক করা। পাবলিক প্রসিকিউটর ক্যাডার সার্ভিস চালু করা। দুর্নীতি সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশ ও অন্যান্য কার্য পরিচলনায় আইনগত বাধা দুর করে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমে নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের অংশগ্রহণ সহজতর করা। সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদ সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ নিশ্চিতকরণে সম্পদের বাৎসরিক বিবরণ জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা তৈরি ও প্রয়োগ করা; এক্ষেত্রে একটি কার্যকর তদারকি ব্যবস্থা চালু করা ও ব্যত্যয়ের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রেখে গণতান্ত্রিক ও জবাবহিতামুলক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। 

টিআইবির অন্যান্য সুপারিশগুলো হলো- ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্য বৃদ্ধি করা।সরকারি ক্রয়ে রাজনৈতিক প্রভাব ও একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণের প্রবণতা দূর করা।সকল প্রকার ও পরিমাণের সরকারি ক্রয়ে ই-জিপি প্রবর্তন করা। জাতীয় পর্যায়ে ও খাতভিত্তিক ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠা করা। বাৎসরিক ও মধ্যবর্তী আর্থিক বাজেট প্রতিবেদন যথাসময়ে তৈরি ও প্রকাশ করা প্রতিবেদনসমূহ বিস্তারিত করা ও জনগণের জ্ঞাতার্থে উন্মুক্ত করা। তথ্যে অভিগম্যতা নিশ্চিতকরণে স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশ ও চাহিদামাফিক তথ্য প্রকাশে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। তথ্য কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা ও সরকারি প্রভাবের ঝুঁকি নিরসন করা।

পাশাপাশি সরকারি খাতে জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করা। জনস্বার্থ সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ সুরক্ষা আইন বাস্তবায়নে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা কার্যক্রম গ্রহণ করা। আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাাদিহিতা নিশ্চিত করা এবং কালো টাকা সাদা করার অসাংবিধানিক, বৈষম্যমূলক ও দুর্নীতি সহায়ক ব্যবস্থা চিরতরে বাতিল করা।

সবশেষ অর্থপাচার রোধে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাসমূহের পেশাগত দক্ষতা ও কার্যকরতা বৃদ্ধি করা; পাচারকৃত অর্থ পুনরুদ্ধারের উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করে প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাসমূহের মধ্যকার পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয় বৃদ্ধি করা এবং এক্ষেত্রে মিউচুয়াল লিগাল এসিস্ট্যান্সসহ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির চেয়ারপার্সন সুলতানা কামাল, পরিচালক শেখ মঞ্জুর ই আলম, এডভাইজ এক্সিকিউটিভ ডা.সুমাইয়া, গবেষক ফাতেমা আফরোজ প্রমুখ।

এএসএস/এমএসএ