মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি নিয়ে সরকার কোনো চাপ অনুভব করে না বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন। ভিসা নীতি নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই বলেও মনে করেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে দেশে আসার পর বুধবার (৪ অক্টোবর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মন্ত্রী।

তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, ‘তলে-তলে সবার সঙ্গে আপস হয়ে গেছে’- আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যে ভিসা নীতির ক্ষেত্রে কোনো আপসের ইঙ্গিত ছিল কি না? জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভিসা নীতি নিয়ে কিছু নেই। ভিসা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তার কারণ নেই, মাথাব্যথার কারণ নেই। আমরা কোনো চাপ অনুভব করি না।

তিনি বলেন, উনি (কাদের) বলেছেন, ওনার কাছে জিজ্ঞেস করেন। ভিসা নীতি আমাদের জন্য গুরত্বপূর্ণ কিছু নয়। উনি (কাদের) ঠিকই বলেছেন। যারা ভিসার জন্য আবেদন করে তাদের জন্য হয়তো দুঃসংবাদ, যদি দুষ্টু লোক হয়। আমেরিকা তো সবাইকে ভিসা দেয় না। কয়েক হাজার লোক বছরে ভিসার জন্য আবেদন করে, এর মধ্যে কত লোককে ভিসা দেয়?

বাংলাদেশেরও ভিসা নীতি আছে জানিয়ে মোমেন বলেন, ভিসা নীতি সব দেশে আছে। আমাদের দেশেও আছে। আমরা সবাইকে ভিসা দিই না। আমরা ব্যক্তি বিশেষ কিংবা কোনো দেশকে কম ভিসা দিই। আমি যেটা বুঝতে পারি যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির মূল উদ্দেশ্য, যাতে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। আমরাও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। তারা আমাদের সঙ্গে একমত। তারা আমাদের হাতকে শক্ত করার জন্য ভিসা নীতি চায়।

মঙ্গলবার সাভারের আমিনবাজার ট্রাক টার্মিনাল এলাকায় দেওয়া বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, তলে-তলে আপস হয়ে গেছে। আমেরিকার দিল্লিকে দরকার। দিল্লি আছে, আমরাও আছি। শেখ হাসিনা সবার সঙ্গে ভারসাম্য করে ফেলেছেন। আর কোনো চিন্তা নেই। যথাসময়ে নির্বাচন হবে।

যারা নির্বাচনে আসবে না আমেরিকা তাদের পক্ষে নেই

বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে যেসব রাজনৈতিক দল অংশ নেবে না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সঙ্গে নেই বলে মন্তব্য করেছেন ড. মোমেন। তিনি বলেন, আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আমেরিকা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, সেজন্য তারা সহায়কের ভূমিকা পালন করবে। আমাদের সাহায্য করবে।

মোমেন বলেন, আর যারা নির্বাচনে আসবে না আমেরিকা তাদের পক্ষে নেই। তারা বলেছে, তারা কোনো দলেই নেই। তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে এবং গণতান্ত্রিক সরকার চায়। আমরাও গণতান্ত্রিক সরকার চাই।

রোহিঙ্গাদের রেখে দেওয়ার বার্তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে মত থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের রেখে দেওয়ার বিষয়ে জোর দিচ্ছেন বলে মনে করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা আমাদের সঙ্গে একমত। তারাও বলছে, রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়া উচিত। কিন্তু তারা মনে করে, মিয়ানমারে যদি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হয় তাহলে জীবন-মানের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না। এজন্য আগে ওখানে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হোক, তারপর এদের পাঠান।

তিনি বলেন, তারা বলছে, এখন রোহিঙ্গাদের এদেশে রেখে কাজকর্ম দেন। তাদের দক্ষতার ট্রেনিং দেন। উন্নত দেশগুলোতে প্রত্যাবাসন বলতে কিছু নেই। ওখানে রিফিউজি গেলে রেখে দেওয়া হয়। তারা সেই চিন্তা-ভাবনায় থাকে। তারা মনে করে, বাংলাদেশ তাদের রেখে দিতে পারে।

বিদেশিদের প্রতি মুখাপেক্ষি না হয়ে নিজের ওপর এবং নিজ দেশের ওপর আত্মবিশ্বাস রাখতে গণমাধ্যমকর্মীদের পরামর্শ দিয়েছেন ড. মোমেন।

সম্প্রতি ভারতীয় বার্তা সংস্থায় ২০১৪ এবং ১৮ নির্বাচন প্রসঙ্গে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র আইসিউতে আছে’ -এ বিষয়ে মন্ত্রীর অবস্থান জানতে চাওয়া হয়। তিনি বলেন, এ রকম বহু লোক বহু প্রতিবেদন তৈরি করবে। আপনি (প্রশ্ন করা গণমাধ্যমকর্মীকে) নিজে প্রতিবেদন তৈরি করেন। অন্যের মুখোপেক্ষি হয়ে থাকবেন না। আল্লার ওয়াস্তে এই বদ অভ্যাসটা বাদ দেন। অন্য কেউ কিছু বললে লাফাইয়া উঠবেন। এটা বাদ দিয়ে নিজে পরীক্ষা করে দেখেন কী অবস্থা। জনগণ যদি ভোট দেয় ওটাই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, বিদেশিরা মূলত বিক্রি করতে আসে। এজন্য চাপ সৃষ্টি করে যেন তার কাছ থেকে কেনে। আমেরিকা বিক্রি করতে চায়, ফ্রান্স বিক্রি করতে চায়, ব্রিটিশ বিক্রি করতে চায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিক্রি করতে চায়।

তবে বিদেশিরা কী বিক্রি করতে চায় তা স্পষ্ট করেননি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এনআই/এসএম