প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করেন। এরপর ৩ সেপ্টেম্বর ভোর ৬টা থেকে ঢাকার বুকের নতুন এই দ্রুতগতির উড়ালসড়ক সর্বসাধারণের যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। খাতা-কলমের হিসেবে এই উড়াল সড়ক জনসাধারণ ব্যবহার করছে ৬৭২ ঘণ্টা বা ২৮ দিন।

৩ সেপ্টেম্বর ভোর ৬টা থেকে ১ অক্টোবর ভোর ৬টা পর্যন্ত ৬৭২ ঘণ্টায় ৮ লাখ ৬৭ হাজার ৮২৬ গাড়ি দ্রুতগতির এই উড়ালসড়ক ব্যবহার করেছে। আর এসব গাড়ি থেকে টোল আদায় হয়েছে ৬ কোটি ৭৮ লাখ ৮ হাজার টাকা। সেই হিসাবে গড়ে প্রতিদিন গাড়ি চলেছে ৩০ হাজার ৯৯৪টি। এবং গড়ে প্রতিদিন টোল আদায় হয়েছে ২৪ লাখ ২১ হাজার ৭১৪ টাকা।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার বলেন, মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) সকাল ৬টায় মূলত এক মাস পূর্ণ হবে। এখন যে তথ্য আছে সেটি ২৮ দিনের। শুরুতে যেমন ছিল গাড়ির সংখ্যা, সেটি এখন অনেক বেড়েছে।

বর্তমানে ৪টি ক্যাটাগরির গাড়িগুলো ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করছে। ক্যাটাগরি-১ এর যানবাহনগুলো হচ্ছে— কার, ট্যাক্সি, জিপ, স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল, মাইক্রোবাস (১৬ সিটের কম) ও হালকা ট্রাক (৩ টনের কম); ক্যাটাগরি-২ এর যানবাহন হচ্ছে— মাঝারি ট্রাক (৬ চাকা পর্যন্ত); ক্যাটাগরি-৩ এ রয়েছে ট্রাক (৬ চাকার বেশি) এবং ক্যাটাগরি-৪ এ রয়েছে সব ধরনের বাস (১৬ সিট বা এর বেশি)।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি) গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে সরাসরি বাস সার্ভিস চালু করেছে। শুরুর দিনেই ৮টি বাস চলাচল করিয়ে ভাড়া আদায় করেছে প্রায় ৬৮ হাজার টাকা। তবে দ্বিতীয় দিন তা আরও বেড়ে যায়। ওই ভাড়া আদায় করে প্রায় ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, পৃথিবীর কিছু কিছু দেশে যেমন- চায়না, কোরিয়া, সাও পাওলো, এছাড়া দক্ষিণ আমেরিকার কিছু শহর আছে, যেখানে গণপরিবহনবান্ধব কিছু ফ্লাইওভার তৈরি করেছে। সেটা গণপরিবহনকে প্রাধান্য দিয়েই তৈরি করা হয়। যেহেতু দ্রুতগতির একটি ফ্লাইওভার আমরা তৈরি করেছি, যেখানে যাত্রী ওঠানামার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই, আমি বলব- এটি ব্যক্তিগত গাড়িবান্ধব একটা অবকাঠামো। সঙ্গতকারণেই সিটি বাসগুলো এখানে উঠবে না।

তিনি আরও বলেন, এক কথায় বলতে গেলে আমরা বিমানবন্দর সড়কের জন্য দ্রুতগতির ব্যক্তিগত গাড়িবান্ধব একটা অবকাঠামো (এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) তৈরি করলাম। এটি যখন কুতুবখালী পর্যন্ত পুরোপুরি তৈরি হবে, তখনও সিটির জন্য কোনো উপযোগিতা তৈরি করবে না। এই এক্সপ্রেসওয়ে বলেই দিচ্ছে যে আমরা এখানে বাস সার্ভিস চালাতে পারি, তবে সেটা এক্সপ্রেস বাস সার্ভিস হতে হবে।

পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিক ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের দক্ষিণ কাওলা থেকে শুরু হয়ে কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-মালিবাগ-খিলগাঁও-কমলাপুর হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত যাবে। এই এক্সপ্রেসওয়ের মূল দৈর্ঘ্য ১৯.৭৩ কিলোমিটার, র‍্যাম্পসহ দৈর্ঘ্য ৪৬.৭৩ কিলোমিটার।

প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা; যার মধ্যে ২৭ শতাংশ বাংলাদেশ সরকার ভিজিএফ হিসেবে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে দেবে। এ পর্যন্ত প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে এবং ২০২৪ সালের জুন মাসের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রকল্পের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের সংশোধিত চুক্তি সই হয়। প্রকল্পটি থাইল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড ৫১ শতাংশ, চীনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান শেনডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপের ৩৪ শতাংশ ও সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড ১৫ শতাংশ অংশীদারিত্বে নির্মাণ হচ্ছে।

বর্তমানে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে ফার্মগেট অংশ পর্যন্ত যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। র‍্যাম্পসহ এই অংশের দৈর্ঘ্য সাড়ে ২২ কিলোমিটার। ডিজাইন স্পিড বেশি থাকলেও বর্তমানে এই অংশে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চলছে।

/এমএইচএন/এমএ/