দেশের বিদ্যুৎ খাতের অন্যতম সংযোজন রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসে আট মাস আগে। কিন্তু কয়লা সংকট ও যান্ত্রিক ত্রুটিসহ সাতবার বন্ধ হয়েছে রামপালের উৎপাদন। বরাবরই এর প্রভাব পড়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহে।

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট উৎপাদন শুরু করে গত বছরের ১৫ আগস্ট থেকে। তখন পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হলেও ধাপে ধাপে বিভিন্ন লোডে ইউনিটটির উৎপাদন ক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর থেকে পূর্ণমাত্রায় উৎপাদন শুরু হয়। কিন্তু উৎপাদন শুরুর পর থেকে কখনও কয়লা সংকট, কখনও কারিগরি ত্রুটির কারণে বারবার বন্ধ হয়েছে কেন্দ্রটি।

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট উৎপাদন শুরু করে গত বছরের ১৫ আগস্ট থেকে। তখন পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হলেও ধাপে ধাপে বিভিন্ন লোডে ইউনিটটির উৎপাদন ক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর থেকে পূর্ণমাত্রায় উৎপাদন শুরু হয়। কিন্তু উৎপাদন শুরুর পর থেকে কখনও কয়লা সংকট, কখনও কারিগরি ত্রুটির কারণে বারবার বন্ধ হয়েছে কেন্দ্রটি

চালুর পর গত ১৪ জানুয়ারি কয়লা সংকটের কারণে প্রথম কেন্দ্রটি সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ওই সময় এক মাসের মতো বন্ধ থাকে বিদ্যুৎ উৎপাদন। এরপর ২৩ এপ্রিল একই কারণে ১৫ দিন বন্ধ রাখা হয়, ৩০ জুলাই সাময়িক বন্ধ রাখা হয় ১৬ দিন। সর্বশেষ যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ১৫ সেপ্টেম্বর রাত থেকে বন্ধ রাখা হয়।

আরও পড়ুন : রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে এলো আরও ৩১ হাজার ৩০০ টন কয়লা

ডলার সংকটের কারণে কয়লা আমদানি ব্যাহত হলেও কারিগরি ত্রুটিকেও বিশেষভাবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। পিডিবির এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, চালু হওয়ার পর বেশ কয়েকবার বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ করতে হয়েছে। প্রথম ইউনিটের যন্ত্রাংশে কিছু সমস্যা রয়েছে। এগুলোর সমাধান প্রয়োজন।

খুলনাসহ আশপাশের অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে ঢাকায় দৈনিক ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কিন্তু বারবার বন্ধে এর প্রভাব পড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহে, করতে হয় লোডশেডিং।

বিপিডিবির উৎপাদন বিষয়ক সদস্য এম ওয়াজেদ আলী ঢাকা পোস্টকে জানান, রামপাল বন্ধ হলে স্বাভাবিকভাবেই সাপ্লাই কমে যায়। আমরা ডেইলি একটি চাহিদা দিয়ে থাকি, সে মোতাবেক না পেলে লোডশেডিং করতে হয়।

দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা

বিভিন্ন কারণে বারবার বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বন্ধ হওয়ার ফলে দ্বিতীয় ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদন নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটটি চালু রাখার জন্য প্রতিদিন প্রয়োজন পাঁচ হাজার টন কয়লার। কিন্তু অধিকাংশ সময় এটি সক্ষমতার কম-বেশি উৎপাদন করে আসছে।

অপরদিকে, দ্বিতীয় ইউনিট চালু হলে প্রতিদিন প্রয়োজন পড়বে ১০ হাজার টন কয়লার। ডলার সংকটে ঋণপত্র খুলতে না পারায় কয়লা আমদানির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা যাচ্ছে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন,পুরোপুরি আমদানি নির্ভরতা রামপালের দুর্বলতার একটি অংশ। কেন্দ্রটি পূর্ণ সক্ষমতায় চালু রাখতে নিরবচ্ছিন্ন কয়লা সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি।

এ ছাড়া, ডলার সংকটে কয়লা আমদানির ঋণপত্র খোলার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে না পারলে রামপালের সংকটের সমাধান আসবে না।

এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিম বলেন, যেহেতু রামপাল পুরোপুরিভাবে আমদানি নির্ভর প্ল্যান্ট। সেক্ষেত্রে ডলার পেমেন্টের মাধ্যমে ধারাবাহিক কয়লা আমদানি নিশ্চিত করতে হবে। তবে, প্রয়োজন ছিল পুরোপুরি মাত্রায় আমদানি নির্ভর না হয়ে একটি বিকল্প ব্যবস্থা রাখার। যাতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়। 

যান্ত্রিক ত্রুটি

কয়লা সংকট ছাড়াও রামপাল বন্ধের কারণ হিসেবে বেশ কয়েকবার উঠে এসেছে যান্ত্রিক ত্রুটি। এর মধ্যে রয়েছে- টার্বাইনে ত্রুটি, বয়লার টিউব লিকেজ বা ফেটে যাওয়া, কুলিং হিটারে ছিদ্র দেখা দেওয়া, হাই প্রেশার স্টিম লিকেজ, অয়েল লিকেজ, গ্ল্যান্ডফিল লিকেজ ইত্যাদি। কেন্দ্র-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়লার সংকট থাকলেও প্রথম ইউনিটের যন্ত্রাংশে কিছু সমস্যা রয়েছে।

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব হাবীবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি একটি পরীক্ষামূলক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বাণিজ্যিক উৎপাদনে এখনও আসেনি। ফলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা যেতে পারে, যেগুলোর সমাধানও হয়। বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসার পর এ সমস্যাগুলো আর থাকবে না। এ ছাড়া, ভারতও এর মালিকানায় রয়েছে। সুতরাং যৌথভাবেই সমস্যার সমাধান করা হবে।

আরও পড়ুন : শিগগিরই বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাবে রামপালের দ্বিতীয় ইউনিট

সমাধান কী

সংকট থেকে সমাধানের পথ হিসেবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইজাজ আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রথম থেকেই রামপালের প্রযুক্তি ওয়ার্ল্ড স্ট্যান্ডার্ড ছিল কি না, তা নিয়ে একটি ইস্যু ছিল। বারবার এভাবে কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়াটা দুঃখজনক। এতে উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটে, খরচ বেড়ে যায়।

তিনি বলেন, যেহেতু কেন্দ্রটি এখনও পুরোপুরি কমিশনিংয়ে আসেনি, তাই সমস্যাগুলা আপাতত কনসিডার করা যাচ্ছে। কিন্তু কমিশনিংয়ে আসার পরও যদি এমন সমস্যা হতে থাকে, তাহলে প্রযুক্তি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে কজ দেখাতে হবে এবং তাদের সঙ্গে নেগোসিয়েশনে বসতে হবে। প্রয়োজনে পেনাল্টিতে যেতে হবে। যদি প্রয়োজন পড়ে যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করতে হবে। কারণ, মাথায় রাখতে হবে যে পাশেই সুন্দরবন। কোনো একটি দুর্ঘটনা ঘটলে ফলাফল কিন্তু ইতিবাচক হবে না।

ওএফএ/এমএআর