রাজধানীর মিরপুর-২ নম্বরের সিরাজিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার বিপরীত পাশে বাবার ভাড়া বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন মুক্তা। রাতে তাকে নিতে আসেন স্বামী মিজান। রাতের খাবার শেষ করে সাড়ে ৯টার দিকে ভারী বৃষ্টির মধ্যেই দুই সন্তানকে নিয়ে চিড়িয়াখানা এলাকায় নিজেদের ভাড়া বাসার উদ্দেশে রওনা দেন মিজান ও মুক্তা। কিন্তু বাসায় ফেরা হলো না তাদের। পথেই বৃষ্টির পানিতে ডুবে থাকা বৈদ্যুতিক তারের সঙ্গে বিদ্যুতায়িত হয়ে মিজান, মুক্তা ও তাদের কন্যা সন্তান লিমা মারা যান। ভাগ্যের জোরে বেঁচে যায় সাত মাসের শিশুপুত্র হোসাইন। 

বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে মিরপুর মডেল থানার সিরাজিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার পাশে হাজী রোডে এ ঘটনা ঘটে। 

আজ (শুক্রবার) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিরাজিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার পাশের বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে চোরাই লাইনের মাধ্যমে পাশের ঝিলপাড় বস্তিতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া হয়েছে। মাদ্রাসার দেয়ালের ভেতর দিয়ে বৈদ্যুতিক তার নেওয়া হয়েছে, যাতে সিমেন্ট দিয়ে প্রলেপ দেওয়া রয়েছে। তারের কিছু অংশ সেই প্রলেপের ওপরও বেরিয়ে রয়েছে। মূলত বৃষ্টির পানিতে তারের এ অংশ ডুবে গিয়ে এখান থেকেই ঘটেছে বড় দুর্ঘটনাটি

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাতে ভারী বৃষ্টির কারণে এখানকার হাজী রোড ও ফুটপাত পানি নিচে তলিয়ে যায়। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পানিও বাড়তে থাকে। সেই ফুটপাত দিয়ে দেয়াল ঘেঁষে বাসায় যাচ্ছিলেন মো. মিজান, তার স্ত্রী ও দুই সন্তান। মিজানের কোলে ছিল কন্যা সন্তান লিমা, আর মুক্তার কোলে ছিল সাত মাসের ছেলে হোসাইন। মাদ্রাসার দেয়ালের শেষপ্রান্ত ও ভাই ভাই সুপার কফিসপ অ্যান্ড কনফেকশনারির সামনের আসতেই তারা পানিতে ছটফট করতে থাকেন। এসময় দূর থেকে অনেকেই ভিডিও করতে থাকেন। সেসময় অনিক নামে একজন এগিয়ে আসেন। পরে তিনিও বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যান। 

সেখানকার দোকানদার মো. জামাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি শুধু ছটপট করতে দেখেছি। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তারা মারা যান। 

নিহত মিজানের বাবা নাছির হাওলাদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বুধবার রাতে মিজান বরিশাল থেকে এসেছে। এরপর বউ-বাচ্চাদের নিয়ে শ্বশুরের বাসা থেকে নিজেদের বাসায় ফিরছিল। নিজ গ্রাম বরিশালের ঝালকাঠি থানার বিকনার গ্রামে তাদের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে। 

মিজানের মামা নজরুল ইসলাম জানান, গতকাল রাত ২টায় খবর পেয়ে তারা ভোরে বাসে করে ঢাকায় আসেন।

মিজানের শ্বশুর ও মুক্তার বাবা মো. লিটন মিয়া বলেন, আমি কাঁচামালের ব্যবসা করি। আমি বাসায় ছিলাম না। মেয়ে ও জামাইয়ের সঙ্গে দুপুরে কথা হয়। তারা চিড়িয়াখানার দিকে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে ভাড়া থাকত। সেখানে যাওয়ার সময় আমার মেয়ে, জামাই ও নাতনি মারা যায়।

জানা গেছে, গতকালকের প্রবল বৃষ্টিতে ওই এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তখন পানিতে পরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে পাঁচজন গুরুতর আহত হন। তাদের উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক চারজনকে মৃত ঘোষণা করেন। 

নিহতরা হলেন- মো. মিজান (৩০), তার স্ত্রী মুক্তা বেগম (২৫), মেয়ে লিমা (৭) এবং তাদের উদ্ধার করতে যাওয়া মোহাম্মদ অনিক (২০)। এসময় বাবা মিজান ও মা মুক্তার সঙ্গে থাকা শিশুপুত্র হোসাইনকে (৭ মাস) প্রথমে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে এবং পরে শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এমএসআই/কেএ