স্বাধীনতার পরপরই যে কয়েকটি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল তাদের মধ্যে সিঙ্গাপুর একটি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটি ইতোমধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের অর্ধশত বছর পার করে ফেলেছে। তবে এখনও ঢাকায় কোনো পূর্ণাঙ্গ মিশন খোলেনি। ২৬ বছর আগের করা কনস্যুলেট দিয়ে চলছে কূটনৈতিক কর্মযজ্ঞ। তবে আশার কথা হলো খুব শিগগিরই ঢাকায় পূর্ণাঙ্গ মিশন করার ঘোষণা দিতে পারে সিঙ্গাপুর। 

নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের সাইড লাইনে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণন। ওই বৈঠকে সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় দেশটির কনস্যুলেটকে পূর্ণাঙ্গ মিশনে উন্নীত করার ঘোষণা দেবেন বলে নিশ্চিত করেছে কূটনৈতিক সূত্রগুলো।

ঢাকার একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, আট বছর বিরতির পর গত মাসের ১৬ তারিখে ঢাকায় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের তৃতীয় যৌথ পরামর্শক সভা (এফওসি) অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে সিঙ্গাপুরের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেওয়া দেশটির আইন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পার্মানেন্ট সেক্রেটারি লিউক গো ঢাকায় সিঙ্গাপুরের পূর্ণাঙ্গ মিশন করার সিদ্ধান্তের কথা জানায়। ওই সময় সিদ্ধান্ত হয় নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ফাঁকে বাংলাদেশের এবং সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন। তখন সিঙ্গাপুরের দিক থেকে ঢাকায় কনস্যুলেট থেকে হাইকমিশন করার ঘোষণা দেওয়া হবে।

ঢাকার এক কূটনীতিক জানায়, সিঙ্গাপুরের সঙ্গে বাংলাদেশের খুব ভালো সম্পর্ক। কিন্তু তারা এখনও হাইকমিশন করেনি, কনস্যুলেট দিয়ে সব কাজকর্ম চালাচ্ছে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ফাঁকে কয়েক দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের কথা রয়েছে। এদের মধ্যে সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও রয়েছেন। ওই বৈঠকে কিছু ডেভলপমেন্টের সম্ভাবনা আছে।

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে দায়িত্বশীল এক কূটনীতিক বলেন, ঢাকায় সিঙ্গাপুরের যে কনস্যুলেট রয়েছে, সেটাকে পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক মিশনে উন্নীত করতে চায় তারা। নিউইয়র্কে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হতে পারে। সেখানে এ ধরনের ঘোষণা আসার একটা সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সিঙ্গাপুরের সঙ্গে আমাদের খুব ভালো সম্পর্ক। তারা যদি ঢাকায় হাইকমিশন করে এটা তো আমাদের জন্য সুখবর। যখন হবে তখন আপনারা জানতে পারবেন।

গত জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে জাকার্তায় ৩০তম আসিয়ান রিজিওনাল ফোরামের বৈঠকের ফাঁকে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন ও ড. বালাকৃষ্ণন। প্রায় দুই মাসের মাথায় নিউইয়র্কে দ্বিতীয় দফায় দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসছেন মোমেন-বালাকৃষ্ণন।

১৯৭২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারিতে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর। কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর ১৯৭৩ সালে দেশটির সঙ্গে একটি বাণিজ্য কমিশন করে বাংলাদেশ। পরবর্তী সময়ে দশ বছর পর একজন আবাসিক হাইকমিশনারের নেতৃত্বে দেশটিতে ১৯৮৩ সালে একটি পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক মিশন খোলে বাংলাদেশ। অন্যদিকে ১৯৯৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর ঢাকায় কনস্যুলেট অফিস খোলে সিঙ্গাপুর। দেশটি সম্পর্কের ৫১ বছরেরও ঢাকায় পূর্ণাঙ্গ হাইকমিশনে যেতে পারেনি।

প্রসঙ্গত, কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় আর্জেন্টিনা দলকে নিয়ে বাংলাদেশের উন্মাদনাকে ঘিরে লাতিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনা পুনরায় বাংলাদেশে মিশন চালু করেছে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় পর (৪৫ বছর) বাংলাদেশে পুনরায় মিশন চালু ক‌রে‌ছে দেশটি। এছাড়া চলতি বছরে ঢাকায় মিশন খোলার ঘোষণা দিয়েছে লাতিন আমেরিকার আরেক দেশ মেক্সিকো।

এনআই/এসএম