কৃষি মার্কেটে আগুন
ডিএনসিসি বলছে ২১৭ দোকান পুড়েছে, ব্যবসায়ীদের দাবি প্রায় ৪শ
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে কৃষি মার্কেটের আগুনে প্রায় ৪শ দোকান পুড়ে গেছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, মার্কেট ও কাঁচাবাজারে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে ৭০০-৮০০ দোকান ছিল।
তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেছেন, অবৈধ দোকানগুলো ছিল ফুটপাতে। সিটি করপোরেশন থেকে দোকান বরাদ্দ দেওয়া ছিল ৩১৭টি। এর মধ্যে পুড়েছে ২১৭টি দোকান।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৪টার দিকে কৃষি মার্কেটে লাগা আগুন সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিসের সদরদপ্তরে মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান সিকদার জানিয়েছেন, ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে।
আগুন নিয়ন্ত্রণের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন দোকান মালিক সমিতি, দোকান ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী ও আঞ্চলিক কর্মকর্তা এবং ঢাকা জেলা প্রশাসক।
ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড মেইনটেনেন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এই মার্কেটে কোনো ফায়ার সেফটি ছিল না। প্রাথমিক ফায়ার ফাইটিংয়ের কোনো ব্যবস্থাই ছিল না। ফুটপাত ও সড়কে থাকা দোকান ও মানুষের কারণে অগ্নি নির্বাপণে সমস্যা হয়েছে। এখানে পানিরও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না।
তিনি বলেন, এই মার্কেটটিকে বারবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে এবং বিভিন্নভাবে গণসংযোগ করা হয়েছে। সচেতনতার প্রোগ্রাম যেভাবে আমরা করেছি সেভাবে তারা সাড়া দেয়নি। এই মার্কেটটা কিছুটা বঙ্গবাজার টাইপের। এখানে ভেতরে অনেক সাবওয়ে ছিল ছোট ছোট। ছোট ছোট এসব রাস্তা এবং বাইরের যত রাস্তা... সবগুলোই বিভিন্ন মালামাল গাদাগাদি করে রেখে বন্ধ করা ছিল এবং পুরো মার্কেট বেশ টাইট এবং গেট দিয়ে আটকানো ছিল।
এর আগেও এখানে আগুন লেগেছিল, তখন কি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেননি? জানতে চাইলে সাংবাদিকদের তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রতি সপ্তাহে শনিবার গণসংযোগ করি। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় মার্কেটের প্রতিনিধিদের ডেকে আমরা অনেকবার আলোচনা করেছি, অনেক ওয়ার্কশপ করেছি। মার্কেটের যারা মালিকপক্ষ তাদের ডেকে আমরা বুঝিয়েছি সচেতনতার প্রোগ্রাম আমরা কীভাবে করবো।
পরিদর্শনে এসে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেছেন, এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত ২১৭টি দোকানের তালিকা পেয়েছি। অবৈধ দোকানগুলো ছিল ফুটপাতে। আমাদের বরাদ্দ দেওয়া দোকান ছিল ৩১৭টি।
তিনি বলেন, যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আমরা তাদের তালিকা করছি। আমরা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তাদের পাশে দাঁড়াব। আমাদের কর্মীরা কাজ করছে। যতটুকু সম্ভব ডিএনসিসির পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করা হবে।
মালিক সমিতি ও ব্যবস্থাপনা কমিটি দায়ী কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা তদন্ত করে জানা যাবে কার দায় ছিল। তদন্তেই বিষয়টি বেরিয়ে আসবে।
তিনি বলেন, ডিএনসিসির পক্ষ থেকে আগে কৃষি মার্কেটে ফায়ার সেফটি ব্যবস্থা পরিদর্শন করা হয়েছিল। কিন্তু আমরা ফায়ার সেফটি পাইনি। আগুন লাগলে নেভানোর ব্যবস্থা যেন থাকে সেজন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আগেই বলা হয়েছিল। কিন্তু মার্কেট কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
তবে ঢাকা মহানগর ব্যবসায়ী দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আরিফুর রহমান টিপু দাবি করেছেন, ফায়ার সার্ভিস কিংবা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন-- কোনো কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেই ফায়ার সেফটি বাড়ানোর বিষয়ে কিংবা ‘মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ’ এমন নোটিশ ব্যবসায়ীরা পাননি।
তার দাবি, আগুনে ৩০০ থেকে ৩৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ৪০০ দোকানের মধ্যে পুড়েছে প্রায় তিন শতাধিক। দোকান মালিক নয়, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের যেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।
কৃষি মার্কেটে নিজের পাঁচটি দোকান ও আটটি গোডাউন পুড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে ব্যবসায়ী ফারুক আহমেদ বলেন, এই মার্কেট যদি ঝুঁকিপূর্ণই হবে তবে বন্ধ করা হলো না কেন? আগুন লাগলে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিপূরণ পায় দোকান মালিক, কেন? আগুন লাগলে ক্ষতি তো হয় দোকান ব্যবসায়ীর, দোকান মালিকের হয় না।
ফারুক বলেন, যারা দোকানের মালিক তারা তো ভাড়া দিচ্ছেন ব্যবসায়ীদের কাছে। তারা ভাড়া নিচ্ছেন, কিন্তু আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দোকানে যিনি ব্যবসা করছেন তিনি। আগুনে আমার অপরাধটা কোথায়? আমার ক্ষতিপূরণ কে দেবে? এটা যদি ঝুঁকিপূর্ণই হবে তাহলে কেন আগে বন্ধ করেন নাই? আগুন লাগার পর কেন বলা হচ্ছে এটা ঝুঁকিপূর্ণ? সরকার পারে না এমন তো কিছু নেই। ঢাকা শহরে যতগুলো ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট আছে সরকার সেগুলো বন্ধ করে দিক। আগুনে সর্বস্বান্ত হয়ে যাওয়ার পর কেন শুনতে হবে এটা ঝুঁকিপূর্ণ। আমি ব্যবসায়ী হিসেবে দাবি করব ক্ষতিপূরণটা ব্যবসায়ীদের দেওয়া হোক, দোকান মালিকদের নয়।
জেইউ/এনএফ