হারুন অফিস করেছেন সদর দপ্তরে, আরও ৫ দিন সময় চায় তদন্ত কমিটি
শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে নির্যাতনের ঘটনায় ডিএমপির রমনা বিভাগ থেকে প্রত্যাহার ও দুই দফা বদলির পর অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশীদ সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন।
সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ (শৃঙ্খলা ও আপিল) অনুযায়ী, সাময়িক বরখাস্তের পর নিয়মানুযায়ী পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদ মর্যাদার হারুন আজ অফিস করেছেন পুলিশ সদর দপ্তরে।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার(১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে যোগাযোগ করা হলে হারুন অর রশীদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি যেহেতু সাময়িক বরখাস্ত। সেহেতু আমি পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত। আমি আজ এখানেই অফিস করছি। অফিসিয়ালি আজই আমাকে রমনা থেকে ডিসপাস করতে হবে।
আরও পড়ুন : উঠে বসতে পারছেন না ছাত্রলীগ নেতা নাঈম
তবে শাহবাগ থানায় ধরে নিয়ে ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে পেটানোর ঘটনায় মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
হারুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্তাধীন বিষয়ে আমার কথা বলা মোটেও সমীচীন হবে না। তদন্তেই বেরিয়ে আসবে আসল ঘটনা। এটুকু বলে রাখি, আমিই প্রথম নির্যাতন বা মারধরের শিকার।
একই প্রসঙ্গে মঙ্গলবার(২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডিবি কম্পাউন্ডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার(ডিবি) হারুন অর রশীদ বলেছিলেন, থানায় নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাদের নির্যাতনের ঘটনার সূত্রপাত বারডেম হাসপাতালে। রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হক মামুনই আগে বরখাস্ত হওয়া এডিসি হারুনের ওপর হামলা করেছিলেন, এমন তথ্য পাওয়া গেছে। সেটাও তদন্তে আসা উচিত।
অন্যদিকে হারুন অর রশীদকে প্রথমে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। এরপর গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। এর মধ্যেই হারুনকে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) বদলি আদেশ জারি করে ডিএমপি। তবে ওইদিন বিকেলেই পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের স্বাক্ষর করা এক আদেশে তাকে এপিবিএন-এ বদলি করা হয়।
আরও পড়ুন : এডিসি হারুন সাময়িক বরখাস্ত
সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) বদলি করা এডিসি হারুনকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রজ্ঞাপনে সই করেন সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
তদন্ত শেষ করতে আরও পাঁচ কর্মদিবস সময় চায় কমিটি
এ ঘটনা তদন্তে গত রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলেই ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের নির্দেশে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে আগামী দুই দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে ডিএমপি পুলিশ কমিশনার বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।
তদন্ত কমিটির সভাপতি করা হয়েছে ডিএমপি সদর দপ্তরের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপারেশনস্) আবু ইউসুফকে। দুই সদস্য হলেন, রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (নিউমার্কেট জোন) শাহেন শাহ এবং অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা-মতিঝিল বিভাগ) মো. রফিকুল ইসলাম।
আরও পড়ুন : ব্যক্তির দায় বাংলাদেশ পুলিশ বহন করবে না : ডিএমপি
তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (নিউমার্কেট জোন) শাহেন শাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি দুই দিনের মধ্যে তদন্ত কাজ শেষ করতে। তবে সেটা সম্ভব হয়নি। সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ, সাক্ষ্যগ্রহণ, জিজ্ঞাসাবাদসহ অনেক কাজ বাকি। সেজন্য তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে আরও পাঁচ কর্মদিবস সময় চেয়ে ডিএমপি কমিশনার বরাবর আবেদন করা হয়েছে। তিনি কতদিন সময় দেন সেটির ওপর ভিত্তিতে করে আমরা কাজ করছি। তবে আজ তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, গত শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতে তুলে নিয়ে শাহবাগ থানা হেফাজতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে নির্যাতন করেন পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদ।
ভুক্তভোগী দুজন হলেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাবির শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ মুনিম ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফজলুল হক হলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাঈম।
শনিবার রাতে নারী ঘটিত একটি ঘটনার জেরে শাহবাগ থানায় তাদের নির্যাতনের পর মারধর করা হয়। পরে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার জেরে রাতে শাহবাগ থানার সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ভিড় করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও পুলিশের কর্মকর্তারা থানায় গিয়ে মধ্যরাতে ঘটনা মীমাংসা করেন।
ঢাবি ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র জানায়, এডিসি হারুন শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতে আরেক নারী পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বারডেম হাসপাতালে আড্ডা দিচ্ছিলেন। ওই সময় নারী কর্মকর্তার স্বামী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে যান। নারী কর্মকর্তার স্বামীও একজন সরকারি কর্মকর্তা। তার সঙ্গে এডিসি হারুনের বাগবিতণ্ডা হয়।
পরে এডিসি হারুন দুই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাকে শাহবাগ থানায় তুলে নিয়ে যান। সেখানে তাদের ওপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। এরপর অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়লে ওই দুজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
জেইউ/এসকেডি