আগামীকাল শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) নয়াদিল্লিতে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৈঠকের আগে ঢাকা-নয়াদিল্লির মধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হবে।

বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। নয়াদিল্লিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর যোগ দেওয়া নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে আগামী ৮-১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য ভারত সফর করবেন। তিনি ৮ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লি যাবেন। এদিন বিকেলে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। যেখানে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হবে। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আগে তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হবে বলে আশা করা যায়।

তিন এমওইউ প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, একটি হচ্ছে, কৃষি গবেষণা ও শিক্ষা সহযোগিতা। এটি দুই দেশের মধ্যে কৃষি গবেষণা খাতে জোরদার ভূমিকা পালন করবে। আরেকটি হচ্ছে, সাংস্কৃতিক চুক্তি- ২০২৩ থেকে ২৫ পর্যন্ত বর্ধিত করার জন্য। আরেকটি হচ্ছে, ভারতের এনপিসিআই ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক, এর মাধ্যমে দুই পক্ষের মধ্যে নেটওয়ার্ক-টু-নেটওয়ার্ক সংযোগের মাধ্যমে রুপি-টাকা পারস্পরিক লেনদেনের সম্পাদন সহজ হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক পর্যায়ে সুগভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, বিভিন্ন সময়ে পারস্পরিক সহযোগিতা, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমমনা অবস্থান দুই দেশের সম্পর্ককে গভীরতর করেছে।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে দুই দেশের সম্পর্ক অভাবনীয় গতি লাভ করেছে, যা সোনালি অধ্যায় হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে। ভারত বাংলাদেশকে অন্যতম বন্ধুপ্রতীম এবং সহযোগী রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করে বলেই জি-২০ সম্মেলনে অতিথি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ করেছে।  

প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচিতে যা থাকছে

আগামী শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধন হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে অংশগ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রী দুটি অধিবেশনে বক্তব্য দেবেন।

এ প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী ‘এক বিশ্ব এবং এক পরিবার’ শীর্ষক দুটি অধিবেশনে বক্তব্য দেবেন। তিনি বর্তমান বিশ্ব সম্প্রদায়, বিশেষ করে গ্লোবাল সাউদে জলবায়ু পরিবর্তন, করোনা মহামারি পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, ইউরোপে যুদ্ধের ফলে জ্বালানি-খাদ্যপণ্য-সারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের বৈশ্বিক সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার মতো যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে তা মোকাবিলার বিষয়ে মূল্যবান বক্তব্য তুলে ধরবেন।

তিনি বলেন, পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশের অর্জিত অভাবনীয় সাফল্যের অভিজ্ঞতা সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সামনে উপস্থাপন করবেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর সরকারপ্রধান সম্মেলনের সাইডলাইনে একাধিক বিশ্ব নেতার সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন। প্রাথমিকভাবে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রী, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।

মোমেন জানান, আগামী ১০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য দেশের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর তিনি জি-২০ সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে অংশগ্রহণ করবেন।

প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে নয়াদিল্লিতে যাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ-যিনি জি-২০ তে বাংলাদেশ শেরপা, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র-সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবগণ।

আগামী ১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লি থেকে ঢাকায় ফিরবেন সরকারপ্রধান।

এনআই/কেএ/এসকেডি