মো. এনামুর রহমান / ছবি - ঢাকা পোস্ট

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেছেন, ভূমিকম্প নিয়ে আগে কোনো সরকার কাজ করেনি। মাঝে মাঝে কিছু লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। আর বলা হয়েছে- ভূমিকম্প হলে কাঠের টেবিলের নিচে আশ্রয় নিতে হবে। এটা আসলে কোনো টেকসই উন্নয়ন পদ্ধতি নয়। টেবিলের নিচে মাথা দিয়ে মৃত্যু থেকে রক্ষা পাওয়া যায় না।

মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে দুর্যোগ সহনশীলতা সপ্তাহ-২০২৩ উপলক্ষ্যে ভূমিকম্প সংক্রান্ত সেশনে এসব কথা বলেন তিনি।

ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর আমার মনে হয়েছে- বাংলাদেশের মানুষকে ভূমিকম্পে মৃত্যু তো দূরের কথা, আহতও হতে দেওয়া যাবে না। সুইজারল্যান্ডে আমি এটা নিয়ে জাইকার প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তাদের বলেছি, তোমরা যেভাবে তোমাদের দেশকে নির্মাণ করেছ, তেমন করে আমরাও নির্মাণ করতে চাই। এ নিয়ে আমরা অনেক সেমিনারসহ সিম্পোজিয়াম আয়োজন করেছি। এছাড়া জাপানে ভূমিকম্প সহনশীলতার জন্য প্রায় ৩০ বছর সময় লেগেছে।

তিনি বলেন, গত ৪০০ বছরের ভারতবর্ষে রিখটার স্কেলে ৭ এর উপরে ভূমিকম্প হয়নি। এ কারণে বাংলাদেশে বিল্ডিং কোডে ৭ দশমিক ৫০ করা হয়েছে। একটি ভূমিকম্প হলে এর পরবর্তী অপারেশন আমাদের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাপান সরকার আমাদের বলেছে- ভূমিকম্পে টেকসই উন্নয়নে তারা টেকনিক্যাল ও আর্থিক সহায়তা দেবে। এ সম্পর্কে আন্তঃমন্ত্রণালয়ে একটি সভা করব আমরা। একটি পরিকল্পনা করে কাজ শুরু করব।  মানুষকে শুধু আশ্বাস দিলে হবে না, কাজ করে দেখাতে হবে। বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ে আমরা যেমন সহনশীলতা অর্জন করেছি, তেমনি ভূমিকম্পেও করব।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, জাপানের মতো আমরা পুরাতন ভবনগুলো ভেঙে করে নতুন বিল্ডিং কোড মেনে ভবন তৈরি করব। এ ক্ষেত্রে সহজ শর্তে বা বিনা সুদে ঋণ দেওয়া হবে। বিভিন্ন সময়ের আলোচনায় অনেক ভালো ভালো পরামর্শ আসছে। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে অনেক কিছুই করা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের প্রতিটি বাড়ি পরীক্ষা করে ভূমিকম্প সহনশীল কি না তা দেখতে হবে। বিশেষজ্ঞ টিম দিয়ে এসব বাড়ি পরীক্ষা করার পর কোনো সমস্যা থাকলে সেগুলোর সমাধান করে বাড়িকে ভূমিকম্প সহনশীল করতে হবে। তুরস্কের মত বিভীষিকাময় অবস্থা যেন বাংলাদেশে না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এর জন্য আমাদের প্রকৌশলীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আরও অভিজ্ঞ করা প্রয়োজন।

ফায়ার সার্ভিস ও ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মঈন উদ্দিন বলেন, যেকোনো দুর্যোগে ফায়ার সার্ভিস সবার আগে রেসপন্স করে। জনবলের স্বল্পতা থাকার পরও আমরা আমাদের সেরাটা দিয়ে যাচ্ছি। মানুষকে সচেতন করতেও আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। জনগণকে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম এবং গণমাধ্যমের মাধ্যমে আরও সচেতন করতে হবে। ভূমিকম্প এবং ভূমিকম্প পরবর্তী করণীয় বিষয়ে জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও সচেতনতা বাড়াতে হবে।

অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান বলেন, আমাদের দেশের এখন যে নগরায়ন হচ্ছে, সেটা রাজধানী থেকে গ্রাম পর্যন্ত সম্প্রসারিত রয়েছে। ফলে আমাদের সব পর্যায়ে অবশ্যই বিল্ডিং কোড মেনেই ভবন নির্মাণ করতে হবে। জাপানে প্রচুর ভূমিকম্প হয়, একসময় তারা কাঠের স্থাপনা নির্মাণ করত। কিন্তু এখন প্রযুক্তির উন্নয়নে তারা বহুতল ভবনও নির্মাণ করছে। ঘূর্ণিঝড়ে যেমন আমরা দেশকে সহনশীল করতে পেরেছি, তেমনি ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড মেনে কাজ সম্পন্ন করলে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।

এমএম/এফকে