বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন হাসান আলিফ। থাকেন ঢাকার মিরপুরে। পরিবারে রয়েছেন বাবা মা আর দুই বোন। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন হাসান। করোনার প্রথম ধাক্কায় চাকরি হারাতে হয় তাকে। কিন্তু এবার করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা হাসানের জীবন একেবারেই এলোমেলো করে দিয়েছে।  

গত ৩০ মার্চ হাসানের বাবা হানিফ, মা কবিতা ও বোন মিমের করোনা পজিটিভ আসে। শুক্রবার রাতে হঠাৎ বাবা-মায়ের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। জরুরিভাবে তাদের নিয়ে আসা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরে নেওয়া হয় আইসিইউতে। শনিবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে বাবা লাইফ সাপোর্টে মারা যান। এখন মাও লাইফ সাপোর্টে, তার অবস্থাও শঙ্কামুক্ত নয়। এদিকে করোনা আক্রান্ত বোন ভর্তি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

এমন পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন হাসান। কী করবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না। হাসপাতালে চারদিকে ছোটাছুটি করছেন। কথা বলার অবস্থা নেই, তবু ঢাকা পোস্টের কাছে নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারেননি হাসান। এলোমেলোভাবে কিছু কথা বললেন। তিনি জানান, তারা দুই বোন ও এক ভাই। করোনা তার জীবন এলোমেলো করে দিয়েছে। বললেন, ‘শনিবার বাবা চলে গেলেন, মা লাইফ সাপোর্টে, বোন সোহরাওয়ার্দীতে...  আমার দুনিয়া অন্ধকার হয়ে আসছে’- বলেই হুহু করে কেঁদে দিলেন হাসান। 

করোনায় আইসিইউতে ভর্তি আছেন আরেক রোগী বন্যা। কথা হয় তার ছেলে তিতুষের সঙ্গে। তিনি বলেন, মাকে শনিবার ভর্তি করি, তখন সিসিইউতে ছিলেন। আজ ভোরে অবস্থা খারাপ হলে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। মায়ের শরীর অনেক খারাপ, কিছুই বলা যাচ্ছে না।

সোমবার (৫ এপ্রিল) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসা করোনায় আক্রান্ত রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে ও ঘুরে দেখা যায়, করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। 

ঢামেকের নতুন ভবনকে করোনা ইউনিট বানানো হয়েছে। সেখানে ওয়ার্ড, কেবিন, পিসিসিইউ, এইচডিইউ, সিসিইউ মিলিয়ে ৫৯৩টি বেড আছে। এর একটি বেডও খালি নেই। নতুন ভবনের আইসিইউতে সম্প্রতি আগুনে ১৪টি বেড পুড়ে যায়। এরপর ১ এপ্রিল নতুন করে ১০টি আইসিইউ উদ্বোধন করা হয়। এখন সব মিলিয়ে ২০ বেডের আইসিইউ রয়েছে।

করোনা ভবনের ওয়ার্ড মাস্টার রিয়াজ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। আমাদের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী আসছেন। এর মধ্যে আইসিইউতে আগুন লেগে ১৪টি বেড পুড়ে গেছে। সেগুলো তাড়াতাড়ি চালু করার জন্য আমরা কাজ করছি। করোনা রোগীর কাছে শুধু মাস্ক পরে গেলেই হবে না। সঠিক দূরত্ব বজায় রাখা, পিপিই ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে ভাইরাসমুক্ত হয়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু কে শোনে কার কথা?’ 

আরএইচ/জেএস