ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপার এবং বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মোবাইল নম্বর ক্লোন করে প্রতারণার অভিযোগে ইমরান হোসেন হীরা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। 

শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) রাতে বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা- সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম। এসময় তার হেফাজত থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত দু’টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডিএমপির ডিবি কম্পাউন্ডে নিজ কার্যালয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, এক প্রতারক ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের (অ্যাডমিন) সরকারি নম্বর ক্লোন করে মতিঝিল থানার ডিউটি অফিসারের মোবাইল নম্বরে ফোন দেয়। এরপর নিজেকে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) হিসেবে পরিচয় দেয়। পরে একটি অভিযোগের ভিত্তিতে থানায় নিয়ে আসা দু’জন ব্যক্তির সম্পর্কে জানতে চায় ওই প্রতারক। তাদের কেন থানায় আনা হয়েছে তার কারণ জানতে চায় সে। এরপর তাদের দ্রুত ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন।

এরপর প্রতারক ওই দুই ব্যক্তিকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনার জন্য তাদের কাছে টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে প্রতারক তাদের বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দেয়। এ ঘটনায় মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের হয়।

হারুন অর রশীদ বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তি একজন পেশাদার প্রতারক। সে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে পারদর্শী। তার বিভিন্ন অ্যাপস সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রয়েছে। সে বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নম্বর ক্লোন করে অনুরূপ নম্বর তৈরি করার লক্ষ্যে ইন্টারনেট থেকে বিশেষ অ্যাপ ব্যবহার করে। একটি বিশেষ অ্যাপের মাধ্যমে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ও দেশের বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপারের সরকারি নম্বর ক্লোন করে সে। এরপর থানায় ওসি ও ডিউটি অফিসারের নম্বরে ফোন করে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে অনৈতিক তদবির করতে।

এমনকি কৌশলে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের নম্বর নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে অর্থ দাবি করত। গ্রেপ্তার ইমরানের বিরুদ্ধে দেশের একাধিক থানায় মামলা রয়েছে।

ডিএমপির ডিবি প্রধান বলেন, প্রতারক ইমরা সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সরকারি নম্বর ক্লোন করে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা করত। ইউএনও ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার নম্বর ক্লোন করে চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কাছে ফোন করে এলাকার রাস্তা নির্মাণের কাজ বরাদ্দ হয়েছে মর্মে সরকারি ফি-বাবদ বিভিন্ন অঙ্কের টাকা জমা দিতে বলত। এরপর চেয়ারম্যান ও মেম্বার সরল বিশ্বাসে প্রতারককে টাকা প্রেরণ করত।

গ্রেপ্তার ইমরানকে মতিঝিল থানায় দায়ের করা মামলায় আজ আদালতে প্রেরণ করা হয়।

প্রতারণা এড়াতে পুলিশের সুপারিশ

১. আপনার নম্বরে সন্দেহজনক কল এলে বা অনৈতিক প্রস্তাব আসলে অর্থাৎ ক্লোনকৃত নম্বর থেকে কল এলে পুনরায় সেই নম্বরে কল করে নিশ্চিত হোন। বাংলাদেশের সকল মোবাইল নম্বরের কান্ট্রি কোড+৮৮, ক্লোনকৃত নম্বর +৩৮, +১, +৮৮৮, +০৮ ইত্যাদি সম্বলিত থাকে।

২. কোনো উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসার বা অন্য কোন সরকারি কর্মকর্তার নম্বরের প্রথমে +৮৮ এর পরিবর্তে +৩৮,+১, +৮৮৮ ইত্যাদি নম্বর হতে কল এলে ইনকামিং নম্বরটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে যোগাযোগ করবেন।

৩. এ ধরনের প্রতারণার শিকার হলে পুলিশকে অবহিত করুন।

জেইউ/কেএ