এ সফরের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে গেছে
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনার একটা নতুন দুয়ার খুলে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, স্যাংশন ও কাউন্টার স্যাংশনের এ যুগে এ সফরের মাধ্যমে ব্যবসা বাণিজ্যের সম্প্রসারণসহ বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে গেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফর সম্পর্কে অবহিত করতে আজ (মঙ্গলবার) বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক দক্ষিণের অবস্থানকারী দেশসমূহের উপর আরোপিত কৃত্রিম সিদ্ধান্ত এবং বিভাজনের নীতিকে না বলার এখন উপযুক্ত সময়। সর্বজনীন নিয়ম ও মূল্যবোধকে অস্ত্রে পরিণত করার প্রচেষ্টাকে আমাদের অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করতে হবে। আমাদের নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা- নিষেধাজ্ঞার চক্র বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, সভায় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আমার সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের চিত্র বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছি। একই সঙ্গে আমরা রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের বিভিন্ন প্রস্তুতি ও কার্যক্রম সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সস্প্রদায়কে অবহিত করেছি।
তিনি আরও বলেন, দক্ষিণের দেশগুলোর ওপর আরোপিত কৃত্রিম সিদ্ধান্তের কারণে আমরা আর ক্ষতিগ্রস্ত হতে রাজি নই। সর্বজনীন নিয়মের নামে আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া অসমনীতিকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য আমি দক্ষিণের দেশগুলোকে আহ্বান জানিয়েছি।
সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের সকল হুমকি, উসকানি ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। আমি বিপজ্জনক অস্ত্র প্রতিযোগিতায় সম্পদ অপচয় না করে বিশ্বব্যাপী জনসাধারণের জন্য পণ্য ও পরিষেবা প্রদানে অর্থ সংস্থান করার জন্য আহ্বান জানাই। বিশ্বজুড়ে শান্তি, ন্যায়বিচার ও স্থিতিশীলতার জন্য সকলকে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানাই।
জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গও উঠে আসে। নির্বাচন ও ভোট প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যে নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারে সেটাই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে জনগণ ভালো পরিবেশে ভোট দিয়েছে, আগামীতে ভালোভাবে ভোট দিতে পারবে। জনগণ যাকে ভোট দেবে তারাই ক্ষমতায় আসবে, এটাই বিশ্বাস করি।
বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে সরকারপ্রধান বলেন, এই দলটি ক্ষমতায় গেলে দুর্নীতি করে কিছু টাকা যাবে গুলশানে, কিছু যাবে হাওয়া ভবনে, বাকিটা যাবে লন্ডনে। নিজেরা নিজেরা মারামারি করবে, দুর্নীতি করতে করতে এক সময় তারা বলবে আমরা পারবো না। সেই দলকে জনগণ ভোট দেবে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতো উন্নয়নের পর জনগণকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কী চায়। মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি, কোনো খাদ্য ঘাটতি নেই। যা কিছু করেছি, সব তো জনগণের কাজে লাগছে। সবই তো জনগণ ভোগ করছে। মেট্রোরেল করতে গিয়ে আমাদের নানা কথা শুনতে হয়েছে। সব জায়গায় কথা শুনতে হচ্ছে। আর উন্নয়ন করে সবার প্রশংসা পাব, এটা আশা করিও না। আশা করাও ঠিক হবে না। যাদের এক সময় জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছিল তারা তো এখন সমালোচনা করবেই।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, জনগণের জন্য কাজ করছি, জনগণের জন্য আছি, ১৪ বছরের মধ্যে দেশকে কোথায় নিয়ে এসেছি, সেটাও দেখতে হবে। টানা ক্ষমতায় থাকার কারণে দেশের দ্রুত একটি পরিবর্তন আনা সহজ হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সুদূরপ্রসারী প্ল্যান করে রাখে। যখনই ক্ষমতায় আসি সেগুলো নিয়ে কাজ করি। ডিজিটাল রূপকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। দেশে গরীব মানুষ একটাও থাকবে না।
আত্মবিশ্বাস থাকলে বিবৃতি ভিক্ষা করে বেড়াতেন না
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের বিষয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন হলেও এখানে অন্যান্য আরও অনেক বিষয় নিয়েই কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এক পর্যায়ে উঠে শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার প্রসঙ্গও। এ সময় তাকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ভদ্রলোকের যদি এতোই আত্মবিশ্বাস থাকে যে তিনি অপরাধ করেননি, তাহলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিবৃতি ভিক্ষা করে বেড়াতেন না।
তিনি বলেন, যারা বিবৃতি দিয়ে তার বিচার স্থগিত করতে বলেছেন তাদের বলছি, বিবৃতি না দিয়ে আইনজীবী পাঠাক। এক্সপার্টরা দেখুক, অনেক কিছু পাবেন। আমাদের দেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। সবকিছুই আইন মতো চলে। কেউ যদি ট্যাক্স (কর) না দেয় আর যদি শ্রমিকের অর্থ আত্মসাৎ করে, শ্রমিকদের পক্ষ থেকে যদি মামলা করা হয়... আমাদের কি সেখানে হাত আছে যে মামলা বন্ধ করে দেবো?
এমএসআই/এনএফ