নেই কোনো স্বাস্থ্যবিধি, আছে ভাড়া বৃদ্ধির অভিযোগ
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। নির্দেশনা জারির ফলে অনেকটা স্থবির হতে পারে ঢাকাসহ সারাদেশ। নির্দেশনা অনুসারে আর কয়েক ঘণ্টা পরই গণপরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। তাই রাজধানী ছেড়ে নিজ নিজ গন্তব্যে পাড়ি জমাচ্ছেন অনেক নগরবাসী।
রেলস্টেশন, লঞ্চ টার্মিনাল এবং অন্যান্য বাস টার্মিনালের মতোই গাবতলী বাস টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড় লক্ষ করা গেছে। তবে যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করতে খুব একটা দেখা যায়নি। এদিকে ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
বিজ্ঞাপন
সকাল দশটা থেকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রীদের সঙ্গে মাস্ক আছে ঠিকই। তবে সেটি পরিপূর্ণভাবে কাউকে পরে থাকতে দেখা যায়নি। কারো মাস্ক ঝুলছে থুতনিতে, আবার কারোবা হাতে। করোনাভাইরাসের প্রভাব মুক্ত থাকতে বিশেষজ্ঞরা অন্তত তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে চলাচলের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু বাসস্ট্যান্ডে একজন আরেকজনের সঙ্গেই লেপ্টে বসে থাকতে দেখা গেছে।
এদিকে ভাড়া বৃদ্ধি, যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি ও নানা অসুবিধা নিয়ে বাস টার্মিনালে সেবা দিতে কাজ করছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এবং গাবতলী বাসস্ট্যান্ড পুলিশফাঁড়ির সদস্যরা। যেসব যাত্রীর সঙ্গে মাস্ক নেই তাদের মাক্স বিতরণ করছেন এবং সতর্ক করছেন গাবতলী বাস স্ট্যান্ড পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা।
পরিস্থিতি দেখতে দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার গাবতলী বাস টার্মিনালে আসেন। এ সময় তিনি বাস টার্মিনালে বিভিন্ন কাউন্টার ঘুরে ঘুরে দেখেন। রাস্তার চলমান বাস থামিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস চলছে কি না তা পরিদর্শন করেন। যাত্রীদের পরামর্শ দেন কোনো অসুবিধা হলে এখানে থাকা ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে যোগাযোগ করতে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সাত দিনের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। ৫ এপ্রিল (সোমবার) থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত এসব বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। এ অবস্থায় ঢাকা ছাড়ছেন শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম। তিনি ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি উল্লেখ করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আগে বরিশাল যেতে ভাড়া নিতো বাসে ৪০০ টাকা করে। এখন হানিফ পরিবহন থেকে টিকেট নিলাম ৮০০ টাকায়।’
তবে বিষয়টি অস্বীকার করে হানিফ পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার জহিরুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা আরও কম ভাড়া নিচ্ছি। ৬০ শতাংশ বৃদ্ধির পর বরিশালের ভাড়া আসে ৮৬৯ টাকা। যাত্রীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে সেটি আমরা ৮০০ টাকা রাখছি। তাহলে আর ভাড়া বৃদ্ধি কোথায় হয়?’ এ সময় তিনি ঢাকা পোস্টকে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্ধারিত ভাড়ার চার্ট দেখান। সেখানে ৮৬৮ দশমিক ৭০ পয়সা উল্লেখ করা আছে।
নাটোরগামী সাব্বির আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘গাবতলী থেকে নাটোরে ভাড়া ৪০০ টাকা। সিটের ভাড়া ৬০ শতাংশ বেড়েছে। তারমানে ৬৪০ টাকা হওয়ার কথা। কাউন্টার বলছে টিকেট নাই। আর ব্ল্যাকে বলছে ৯০০ থেকে এক হাজার টাকায় টিকিট আছে।’
বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (আদালত ১০) মোহাম্মদ জোবায়ের আলম বলেন, ‘অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের জন্য দুটি পরিবহনকে জরিমানা করা হয়েছে। একটি হচ্ছে শুকতারা পরিবহন, অন্যটি এস বি লাইন। আমাদের টিম এখানে আছে। অভিযোগ পাওয়া মাত্রই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। এখন পর্যন্ত আটটি মামলায় মোট ৬ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি বার বার বোঝানোর চেষ্টা করছি। আমরা যখন এখানে টহল দেই তখন সবকিছু ঠিকঠাকই থাকে। কিন্তু সরে যাওয়া মাত্রই তারা আবার এলোমেলো হয়ে যায়। এখন তাদের সচেতন হওয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই।’
পরিদর্শন শেষে বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ‘সরকারের ১৮ দফা নির্দেশনার একটি হচ্ছে- ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে পরিবহন চলাচল করবে। সেই লক্ষ্যে ঢাকা সিটিতে আমাদের ৮ জন ম্যাজিস্ট্রেট বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করছে। এরমধ্যে তিন-চারটি টার্মিনালও কাভার করছে। বর্তমানে আমাদের শুক্রবার ও শনিবারেও মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। গতকাল শুধু ঢাকা সিটিতে ২৫টি মামলা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এই মুহূর্তে গাবতলী বাস টার্মিনাল পরিদর্শন করে বিভিন্ন বাস কাউন্টার এবং যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছি। সেখানে ভাড়া বৃদ্ধির তেমন কোনো অভিযোগ হয়নি। তিন-চারটা বাসে উঠে পরিদর্শন করেছি। সেখানে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে দেখেছি কারো কোনো অভিযোগ নেই। সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে। আগামীকাল (সোমবার) থেকে যেহেতু লকডাউন, তাই গণপরিবহন বন্ধ থাকবে।’
এমএইচএন/এইচকে