সর্বোচ্চ শনাক্তের দিনে মৃত্যু ৫৩
দেশের করোনা পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৮৭ জন। যা একদিনে শনাক্তের নতুন রেকর্ড। এই সময়ে মারাও গেছেন ৫৩ জন। গত কয়েকদিন ধরে প্রতিদিনই ৫০ জনের ওপরে মারা যাচ্ছেন।
নতুন ৭ হাজার ৮৭ জনসহ দেশে করোনায় মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৬ লাখ ৩৭ হাজার ৩৬৪ জনে। আর মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯ হাজার ২৬৬ জনে।
বিজ্ঞাপন
রোববার (৪ এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনামুক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৭০৭ জন। এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৫২ হাজার ৪৮২ জন।
এ সময়ে ৩১ হাজার ৪৯৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষা করা হয়েছে ৩০ হাজার ৭২৪টি নমুনা। মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৪৭ লাখ ৮৩ হাজার ৩৮৫টি। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ০৭ শতাংশ। মোট পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৩২ শতাংশ।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৫৩ জনের মধ্যে ৪৫ জন পুরুষ, বাকি ৮ জন নারী। ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে, একজন মারা গেছেন বাড়িতে। মোট মারা যাওয়া ৯ হাজার ২৬৬ জনের মধ্যে পুরুষ ৬ হাজার ৯৭০ জন, নারী ২ হাজার ২৯৬ জন।
বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মারা যাওয়া ৫৩ জনের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব ৩৪ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১১ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৫ জন এবং ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ২ জন রয়েছেন।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিনজনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।
গত বছরের শুরু থেকেই করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই জারি করা হয় লকডাউন। এতে থমকে যায় দেশগুলোর অর্থনীতির চাকা। বাংলাদেশেও সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় পর্যায়ক্রমে জেলাভিত্তিক চলাচল সীমিত করা হয়। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকলে বিভিন্ন দেশ শর্তসাপেক্ষে লকডাউন তুলে নেয়। এরই মধ্যে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রতিষেধক টিকার প্রয়োগ শুরু হয়। বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হচ্ছে।
৫ এপ্রিল থেকে ৭ দিনের কঠোর নিষেধাজ্ঞা
লকডাউনের বিষয়টি উল্লেখ না করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সাত দিনের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। ৫ এপ্রিল (সোমবার) থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত এসব বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। রোববার (৪ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এর আগে শনিবার (৩ এপ্রিল) আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করবে সরকার।
পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ
এদিকে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ইতোমধ্যে বন্ধ করা হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানের পর্যটনকেন্দ্র। বাতিল করা হচ্ছে হোটেল-মোটেলে আগাম নেওয়া বুকিং। পাশাপাশি নতুন বুকিংও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বন্ধ থাকবে দোকানপাট-শপিংমল
লকডাউনের সময় দোকানপাট ও শপিংমল বন্ধ থাকবে। ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফুর রহমান টিপু এ বিষয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, লকডাউনের বিষয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা আমাদের মানতেই হবে। কারণ দেশের করোনা পরিস্থিতি এখন ভালো না। তাই আগামী ৫ থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত দোকানপাট ও শপিংমল বন্ধ থাকবে। তবে আমাদের দাবি এই লকডাউন এক সপ্তাহের বেশি যেন না বাড়ে।
বসুন্ধরা সিটি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (অ্যাকাউন্ট) শেখ আব্দুল আলিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে সেভাবেই আমরা চলব। শপিংমল এক সপ্তাহ বন্ধ রাখতে বললে আমরা বন্ধ রাখব।
পোশাক ও শিল্পকারখানাগুলো খোলা থাকবে
লকডাউনের বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, লকডাউনে জরুরি সেবা দেয় এমন প্রতিষ্ঠানগুলোই শুধু খোলা থাকবে। এছাড়া পোশাক ও শিল্পকারখানাগুলো খোলা থাকবে। কারণ কারখানা বন্ধ হলে শ্রমিকদের বাড়িতে ফেরার বিষয় থাকে। এতে করোনার ঝুঁকি আরও বাড়বে। তবে কারখানায় শ্রমিকদের একাধিক শিফটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করতে হবে।
এইচকে/জেএস