রাজধানীর কলাবাগান থানাধীন ভূতের গলির একটি বাসা থেকে এক গৃহকর্মীর (৮) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, ওই গৃহকর্মীকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।

পুলিশ বলছে, শুক্রবার মধ্যরাতে ওই গৃহকর্মীকে ‘নির্যাতন করা হচ্ছে’ জানিয়ে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি পুলিশকে ফোন করেন। ফোন পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল কিন্তু কোন বাসায় ঘটেছে তা চিহ্নিত করতে পারেনি। 

কলাবাগান থানা সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার মধ্যরাত ১টার দিকে কলাবাগান থানা পুলিশের কাছে অজ্ঞাত একটি ফোন আসে। ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি ফোন দিয়ে পুলিশকে জানান, ভূতের গলির ৭৭ নম্বর বাসার যেকোনো একটি ফ্ল্যাটে কাউকে নির্যাতন করা হচ্ছে। পরে পুলিশ ওই ভবনের নিচে রাত ১টা ৪০ মিনিটের দিকে যায়। কিন্তু ভবনটিতে ৪৪টি ফ্ল্যাট থাকায় মধ্যরাতে পুলিশ আর সেখানে চেক করতে পারেনি। এছাড়া ভবনের নিচে গিয়েও পুলিশ কোনো তথ্য পায়নি।

এ বিষয়ে শনিবার (২৬ আগস্ট) রাতে কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা রাতে খবর পেয়েছি ঠিকই কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়ে কোনো তথ্য পাইনি। এত রাতে প্রতিটি ফ্ল্যাটে গিয়ে চেক করা সম্ভব ছিল না। তাই আমরা চিন্তা করি, সকালে গিয়ে ফ্ল্যাটগুলো চেক করব। পরে সকালে ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ম্যানেজারের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে সাতটি ফ্ল্যাটের দরজায় নক করা হয়। এর মধ্যে ভবনের দ্বিতীয় তলায় ফ্ল্যাট ই-১ এ নক করা হলেও কেউ দরজা খোলেনি। পরে জানা যায়, ওই ফ্ল্যাটে সাথী আক্তার পারভীন নামে এক নারী তার সন্তানকে নিয়ে থাকেন। ওই নারীর বাসায় নিহত গৃহকর্মী কাজ করত। পরে ভবনের মালিক সমিতির উপস্থিতিতে দরজা ভেঙে প্রবেশ করে বিছানার ওপর ওই গৃহকর্মীর মরদেহ দেখতে পায় পুলিশ।

ওসি বলেন, সাথী আক্তার পারভীনের ডিভোর্স হয়ে গেছে ২০২০ সালে। তার আগের স্বামী পেশায় একজন চিকিৎসক। তিনি তার স্বামীর পরিচয়ে ফ্ল্যাটটিতে ২০১৬ সাল থেকে থাকেন। ডিভোর্সের পর সাথীর স্বামী ঢাকা থেকে চলে যান এবং তিনি এখন যশোরে থাকেন। সাথীর চিকিৎসক স্বামীর সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করে জানতে পারি, ডিভোর্স হওয়ার পর থেকে তিনি আর এ বাসায় আসেন না। তার সঙ্গে ডিভোর্স হওয়ার পর ওই গৃহকর্মীকে বাসায় এনেছিলেন সাথী। শুক্রবারের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আমরা দেখতে পাই, গতকাল সাথী বাসা থেকে তার সন্তানকে নিয়ে বের হয়ে যান। আমাদের প্রাথমিক ধারণা, সাথী ওই গৃহকর্মীকে নির্যাতন করে হত্যার পর বাসা থেকে বের হয়ে যান। নিহত গৃহকর্মীর নাম-পরিচয় আমরা এখনো জানতে পারিনি। তার নাম-পরিচয় জানার চেষ্টা করছি। যদি কাউকে না পাওয়া যায়, তাহলে আমরা নিজেরা বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করব।

সাইফুল ইসলাম বলেন, মেয়েটিকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তার শরীরে অনেক আঘাত পাওয়া গেছে।

এদিকে মরদেহ উদ্ধারের পর থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা ভবনটির সামনে ভিড় জমান। তারা অভিযুক্ত সাথীকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সাথী ওই গৃহকর্মীকে প্রায়ই নির্যাতন করতেন।

গত দুই বছর ধরে ভূতের গলির ওই ভবনটি দেখভাল করেন মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ২০১৬ সাল থেকে সাথী ও তার স্বামী ডাক্তার শহীদুল হক রাহাত এখানে বসবাস করতেন। কিন্তু স্বামীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব হওয়ায় তাকে ডিভোর্স দিয়ে দেন এবং ফ্ল্যাটটি বিক্রি করে দেন। তবে সাথী আক্তার প্রভাব খাটিয়ে ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন। তিনি সবার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন। এমনকি আমাদেরও মারধর করেছেন। ২০২০ সাল থেকে সার্ভিস চার্জ দেন না তিনি। এখন পর্যন্ত মালিক সমিতি তার কাছে ১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা পায়।

/এমএসি/এসএসএইচ/