মানবেতর জীবনযাপন করছে পরিবার
নালায় তলিয়ে যাওয়া সালেহ আহমেদের খোঁজ মেলেনি দুই বছরেও
২০২১ সালের ২৫ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুর মোড়ে নালায় তলিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন সালেহ আহমেদ নামে এক ব্যবসায়ী। এরপর কেটে গেছে দুই বছর। ঘটনার পর টানা কয়েকদিন অভিযান চালিয়ে তাকে উদ্ধার করতে না পারায় একপর্যায়ে তৎপরতা বন্ধ করে দেয় ফায়ার সার্ভিস।
নিখোঁজ সালেহ আহমদ চট্টগ্রামের পটিয়া উপহেলার কুসুমপুরা ইউনিয়নের মনসা এলাকার বাসিন্দা। তিনি নগরীর চকবাজারে সবজি বিক্রি করতেন। তার বড় ছেলে ডিগ্রি প্রথম বর্ষে পড়েন এবং বড় মেয়ে এইচএসসি পরীক্ষার্থী। বর্তমানে সালেহ আহমেদের পরিবার পটিয়ায় গ্রামের বাড়িতে থাকেন।
বিজ্ঞাপন
এদিকে, নগরের বিভিন্ন সরকারি সংস্থার অবহেলার কারণে সালেহ আহমেদ অরক্ষিত নালায় তলিয়ে গেলেও তার ক্ষতিপূরণে কেউ এগিয়ে আসেনি। একদিকে কর্তা হারানো ও তাকে খুঁজে না পাওয়ার যন্ত্রণা, অন্যদিকে আর্থিক অনটনে বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছে সালেহ আহমেদের পরিবার।
ভুক্তভোগীর পরিবারের লোকজন জানান, এ পর্যন্ত তারা একটি টাকাও কোনো দপ্তর থেকে সহযোগিতা পাননি। তবে সালেহ আহমেদের ছেলে সাদেকুল্লাহ মহিমকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে (চসিক) ফিলিং স্টেশনে একটি অস্থায়ী চাকরি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু লেখাপড়া করায় এবং অন্যান্য কারণে সেটি তিনি করতে পারেননি। এক সপ্তাহের মাথায় চাকরিটা ছেড়ে দেন তিনি। এরপর তিনি অনুরোধ করেছিলেন সিটি কর্পোরেশনের একটি পিয়নের চাকরি দেওয়ার। কিন্তু চসিক তাকে আর চাকরি দেয়নি।
এ বিষয়ে সাদেকুল্লাহ মহিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মুরাদপুরে জলাবদ্ধতার সময় উন্মুক্ত নালায় পড়ে তলিয়ে যাওয়ার দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বাবার মরদেহটা খুঁজে দিতে পারেনি দায়িত্বশীলরা। বাবার অনুপস্থিতিতে আমাদের সাজানো সংসারে নেমে এসেছে অন্ধকার। বর্তমানে আমাদের জীবনধারণের কোনো অবলম্বন নেই। আমরা গত দুই বছর ধরে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো ক্ষতিপূরণ পাইনি। এমনকি আমরা আদালতেরও দ্বারস্থ হয়েছি।
সাদেকুল্লাহ মহিমের মা ফেরদৌস বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, চসিক মেয়রের কাছে আমরা অন্তত পাঁচবার গিয়েছি। তাকে অনুরোধ করেছি ছেলেকে সিটি কর্পোরেশন অফিসে একটা পিয়নের চাকরি হলেও দেওয়ার জন্য। কিন্তু তিনি আমাদের অনুরোধ রাখেননি।
এদিকে, সালেহ আহমেদের নালায় তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা ওইসময় সারাদেশে আলোচিত হয়। ওই ঘটনায় চসিক এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) পরস্পরকে দোষারোপ করেন। একপর্যায়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ দায়ী কে, তা জানতে চান চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কাছে। মন্ত্রিপরিষদের চিঠি পাওয়ার পর ২০২১ সালের ২ অক্টোবর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এরপর কমিটির প্রতিবেদনে সিডিএকে দায়ী করা হয়। কারণ ঘটনাস্থলে জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্পের কাজ চলমান। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। তারা নালার ওপর থাকা স্ল্যাবগুলো সরিয়েছে। এগুলো আর বসায়নি কিংবা আশপাশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেনি। এছাড়া যেহেতু নগরের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও নগরবাসীর চলাফেরা নির্বিঘ্ন করার দায়িত্ব চসিকের। ফলে সিটি করপোরেশনও এ ঘটনার দায় এড়াতে পারে না বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এমআর/কেএ