প্রথাগত নিয়ম-কানুনের বাইরে গিয়ে এমটিএফইর মতো উচ্চপ্রযুক্তির দুর্নীতি শনাক্ত ও প্রতিরোধে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) সহযোগিতা চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সংস্থাটির মতে, ক্রিপ্টোকারেন্সি, ডিজিটাল ফরেনসিক অ্যাকাউন্ট ও সাইবার ক্রাইমের মতো হাই টেকনিক্যাল কাজগুলোর বিষয়ে দুদক কর্মকর্তাদের যথেষ্ট জ্ঞান নেই। শুধু দুদক নয়, অপরাধ ও দুর্নীতি নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশের কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানেরই উচ্চপ্রযুক্তি সংক্রান্ত অপরাধের বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা নেই। জাইকা চাইলে সে বিষয়ে দুদককে সহায়তা করতে পারে।

গত রোববার (২০ আগস্ট) জাইকার দুই সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেনসহ দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। সেখানেই মূলত দুদকের পক্ষ থেকে উচ্চপ্রযুক্তির মাধ্যমে সংগঠিত দুর্নীতি শনাক্ত ও প্রতিরোধে সরাসরি সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

গোপনীয়তার মধ্যে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে জাইকা বাংলাদেশ অফিসের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার আলিমুল হাসান ও সিনিয়র উপদেষ্টা তাকিন্দা নবুহিসা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিনিধি দল দুদকের কার্যপ্রণালি, কার্যবিধি ও আইনকানুন সম্পর্কে ধারণা নিয়েছে। দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে দুদক কর্মকর্তাদের দক্ষতা কীভাবে আরও বৃদ্ধি করা যায়, সে সম্পর্কে মতবিনিময় হয়েছে। এখানে সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়নি।

অন্যদিকে দুদকের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকের বিষয়ে জানতে জাইকা বাংলাদেশ অফিসের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার আলিমুল হাসানের ফোনে কল করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বৈঠকে উপস্থিত দুদকের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে ঢাকা পোস্টের আলাপ হয়। তারা জানিয়েছেন, অনলাইন ট্রেডিংয়ের নামে বাংলাদেশিদের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। সম্প্রতি  এমটিএফই নামের একটি প্রতিষ্ঠান অনলাইন ট্রেডিংয়ের নামে বাংলাদেশিদের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গেল। অথচ অধিকাংশ সরকারি এজেন্সির ধারণাই ছিল না এসব প্রতিষ্ঠান কীভাবে কাজ করে। কোনো সরকারি এজেন্সির কোনো নজরদারিই ছিল না। লুটপাটের পর এখন আলোচনা হচ্ছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় ঠিকই সাধারণ মানুষ প্রতারিত হলো। আগে থেকে যদি উচ্চপ্রযুক্তির এসব ট্রেডিং সম্পর্কে ধারণা থাকত, তাহলে ওই অপরাধ সংগঠিত হওয়ার আগেই প্রতিরোধ করা যেত।

কর্মকর্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশ, মঙ্গোলিয়া, নেপাল ও ভিয়েতনামসহ পাঁচটি উন্নয়ন সহযোগী দেশকে ফোকাস করে বর্তমানে কাজ করছে জাইকা। এটা তাদের ধারাবাহিক কর্মকাণ্ড। রোববারের বৈঠকে দুদক দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধমূলক কাজ কীভাবে করে এবং এ বিষয়ে দুদকের কর্মকর্তারা কতটুকু দক্ষ কিংবা তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাপনায় কোনো ঘাটতি আছে কি না, সেটা জানতে চেয়েছে জাইকার প্রতিনিধিদল। দেশের জনগণকে সম্পৃক্ত করে কীভাবে দুর্নীতি প্রতিরোধের কাজ করা যায়, সে সম্পর্কে ধারণা নিয়েছেন তারা।

দুদক কর্মকর্তারা বলেন, জাইকা যখন দুদককে সহযোগিতার আগ্রহের বিষয়ে জানালো, তখন দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ক্রিপ্টোকারেন্সি, ডিজিটাল ফরেনসিক অ্যাকাউন্টিং ও সাইবার ক্রাইমের মতো হাই টেকনিক্যাল কাজগুলোর বিষয়ে দুদকের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। কারণ এ বিষয়ে বাংলাদেশে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ গড়ে ওঠেনি। এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ায় দুদকের আগ্রহ রয়েছে। তারা বিষয়টি নোট নিয়েছে।

এছাড়া দুদকের আইনগত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও কর্মকর্তা-জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধিতে করণীয় বিষয় সম্পর্কে ধারণা নিয়েছে জাইকা। যেসব কর্মকর্তা মানসিকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত, তাদের মানসিকতা কীভাবে পরিবর্তন করা যায়, সে বিষয়েও নজর দিতে চায় জাইকা। যদিও তাদের ফোকাস হলো সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। তবে দুদকের পক্ষ থেকে উচ্চপ্রযুক্তির কাজগুলোর সম্যক জ্ঞান ও দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশিক্ষণকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ডেসটিনি-২০০০, ইউনি পে টু ইউ-এর মতো প্রতারক এমএলএম কোম্পানির তালিকায় যোগ হয়েছে এমটিএফই নামের প্রতিষ্ঠান। অনলাইন ট্রেডিংয়ের নামে বাংলাদেশিদের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে টাকা তোলার সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে তারা। অনলাইন ট্রেডিংয়ের নামে বাংলাদেশিদের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এমটিএফইর প্রতারণা নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা চলছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের প্রতারণা নিয়ে চলছে বিভিন্ন বিশ্লেষণ। এমটিএফইর ফাঁদে পা দিয়ে দেশের প্রায় ৮ লাখ মানুষ হাজার কোটি টাকা হারিয়েছেন।

আরএম/এসএসএইচ/