রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের লক্ষ্যে ঘটা করে অভিযান পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। ঢাকা জেলা মৎস্য কর্মকর্তাসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে পরিচালিত অভিযানে কিছু মাছ, মাংস ও লেভেলহীন হাতে তৈরি খাদ্যপণ্য জব্দ করা হলেও মূলত তা সতর্কতাতেই সীমিত ছিল।

সোমবার (২১ আগস্ট) বেলা ১১টায় অভিযান শুরুর কথা থাকলেও কর্মকর্তারা আসেন দুপুর সোয়া ১২টায়। অভিযানের শুরুতে মাংসের দোকানে প্রবেশ করে অভিযানিক দল।

বাসি মাংস যথাযথ প্রক্রিয়ায় ফ্রোজেন না করে বরফে আচ্ছাদিত করে রাখায় কাইয়ুম মাংস বিতানের কয়েক কেজি মাংস জব্দ করা হয়। এরপর ডিমের দোকানে ক্রয়ের রসিদ ও ফ্রেশ ডিম মেলায় বি-বাড়িয়া ডিমের আড়তকে ধন্যবাদ জানায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ

মাছের বাজারে ঢুকে অন্তত তিনটি দোকান থেকে ২০ কেজি জেলিযুক্ত চিংড়ি জব্দ করা হয়। কখন কোথা থেকে এসব চিংড়ি কেনা হয়েছে, ক্রয়ের রসিদ ও ঠিকানা সংগ্রহ করে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। জেলিযুক্ত চিংড়ি জব্দ করা হলেও কাউকে জরিমানা করা হয়নি, বিক্রেতাদের সতর্ক করেই ক্ষান্ত দেয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত।

অন্যদিকে খাদ্যপণ্যের পাইকারি ও খুচরা দোকানগুলোতে লেভেলহীন হাতে তৈরিসহ নানা খাদ্যপণ্য বিক্রির কারণে অভিযানে অন্তত ১০টি দোকানের বিক্রেতাকে সতর্ক করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

সুজন এন্টারপ্রাইজের সোহরাব হোসেন বলেন, আমরা চকবাজার থেকে খাদ্যপণ্য ক্রয় করি। সেখানে কোনো লেভেল থাকে না, আমরাও ব্যবহার করি না। আজ অভিযানে আমাদের সতর্ক করা হয়েছে।

শরিয়তপুর গুড় ভান্ডারে দেখা যায়, আচার, গুড় ও হাতে তৈরি খাদ্যপণ্যে নেই কোনো লেভেল, মেয়াদ কিংবা তৈরির তারিখ। থরে থরে সাজানো সেসব পণ্য বিক্রির কারণে ভোক্তার শারীরিক নানা অসুস্থতা দেখা দিতে পারে বলে বিক্রেতাদের সতর্ক করা হয়।

বিক্রেতা রাসেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, লেভেল না থাকাটা অপরাধ কিন্তু অনেক লোকাল পণ্যে সেটা থাকে না, ক্রেতার চাহিদার কারণে সেসব রাখতে হয়। আজ আমাদেরকে মোবাইল কোর্ট সতর্ক করেছে। বলেছে, ভবিষ্যতে এমন পণ্য বিক্রি করা হলে জরিমানা করা হবে।

ঢাকা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বি এম মোস্তফা কামাল বলেন, আমরা অভিযানে মাছের বাজার মনিটরিং করেছি। তিনটি দোকান থেকে ২০ কেজির মতো জেলিযুক্ত চিংড়ি জব্দ করেছি। যদিও বিক্রেতারা বলেছিলেন, জেলি নেই। দুই ধরনের জেলি আমরা দেখতে পেয়েছি। কেমিক্যাল লিকুইড জেলি, আরেকটা ময়দাযুক্ত। জেলিযুক্ত চিংড়ি খেলে স্বাস্থ্যগত হয়, ভোক্তার কিডনি ডিজিজ হতে পারে। বাজারগুলোতে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে ভোক্তাদেরও দায়িত্ব আছে। সাতক্ষীরা থেকে আসা চিংড়ি মাছের বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। ক্রেতারা যেন চিংড়ি কেনার আগে জেলি আছে কি না তা দেখে নেন।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরিচালক (খাদ্যের বিশুদ্ধতা পরিবীক্ষণ ও বিচারিক কার্যক্রম বিভাগ) ড. সহদেব চন্দ্র সাহা বলেন, ভোক্তা, কৃষি বিভাগ, ফিশারিজ বিভাগসহ বেশ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে আজ এই সমন্বিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। রুটিন এ অভিযান মাসে একদিন পরিচালনা করা হয়। উৎপাদন থেকে ভোক্তার পাতে দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য সব কাঁচাবাজারে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি।

তিনি বলেন, এখানে যথাযথ প্রক্রিয়ায় বাসি মাংস ফ্রোজেন না করায় মাংস জব্দ করা হয়েছে, জেলিযুক্ত চিংড়ি মাছ জব্দ করা হয়েছে ২০ কেজি। লেভেলিং প্রবিধান ২০১৭ আছে। অধিকাংশ দোকানে খাদ্যপণ্যে লেভেল দেখা গেছে। তবে কিছু খাদ্যপণ্যে লেভেল দেখা যায়নি। সেজন্য তাদের কিছু পরামর্শ দিয়েছি। লেভেলিং প্রবিধান অনুযায়ী তাদের বলেছি, উৎপাদনের তারিখ, লেভেল, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ, উৎপাদনকারীর নাম, গুণগত কি কি পণ্য ব্যবহার করা হয়েছে তা লেখা থাকতে হবে। পরবর্তীতে যদি এসব না পাই, তাহলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে।

কোনো বিক্রেতা নিজে উৎপাদনের তারিখ ব্যবহার করতে পারেন কি না জানতে চাইলে ড. সহদেব চন্দ্র সাহা বলেন, বিক্রেতারা যেখান থেকে ক্রয় করেন সেখানকার মূল প্যাকেটে উৎপাদিত পণ্যের সব তথ্য দেওয়া থাকে। সেই ছবি স্ক্যান করে রি-প্যাকিং করলে সেখানে উল্লেখ করতে হবে। যে তারিখে মূল প্যাকেট কাটা হলো, সেই দিনের তারিখ উল্লেখ করতে হবে। সেটা না মানা অপরাধ।

তিনি বলেন, আমরা আজ কাউকে জরিমানা করিনি, শুধু সতর্ক করেছি। ভবিষ্যতে একই অপরাধ করলে জরিমানাসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

/জেইউ/এসএসএইচ/